প্রতি লাখে একজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে নেই
দেশে প্রতি লাখে একজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের এত সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন হলেও বাস্তবে সে সংখ্যক চিকিৎসক দেশে নেই।
সোমবার (২১ আগস্ট) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোলজিক্যাল সার্জন ও আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ আয়োজনে সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ৪০০ জন ইউরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দেশে নারী ইউরোলজি চিকিৎসক তুলনামূলক কম। দেশে নারী ইউরোলোজি চিকিৎসকদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরও দরকার হয় উচ্চতর প্রশিক্ষণ।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ইউরোলজিসহ বেশ কিছু বিভাগে ফেলোশিপ কোর্স চালু করেছি। ইউরোলজি বিভাগে ইউরোলজি অনকোলোজি ফেলোশিপ, পেডিয়াট্রিক ইউরোলজি ফেলোশিপ ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিষয়ে তিনটি ফেলোশিপ কোর্স চালু করেছি। আমি আশা করি- এসব ফেলোশিপ শেষে একজন ইউরোলোজিস্ট আরও দক্ষ হয়ে ওঠবেন।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। এখান থেকে সব আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেশের মানুষকে দেওয়া হবে। স্বাধীনতার ৫২ বছর ও বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর আমরা ইতিহাস সৃষ্টিকারী সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে সমর্থ হয়েছি। আমরা প্রথমবার সফলভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে সমর্থ হয়েছি।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশের মানুষ যাতে দেশেই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। এটিকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এর ফলে দেশের মানুষের বিদেশে চিকিৎসার নির্ভরতা কমেছে।
কিডনি প্রতিস্থাপন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের সুপার স্পেশালাইডজ হাসপাতাল মাত্র তিন লাখ টাকায় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হচ্ছে। এটি পার্শ্ববর্তী দেশে করতে গেলে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়। পার্শ্ববর্তী দেশে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে এক কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ আমরা মাত্র বিশ লাখ টাকায় সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে সমর্থ হয়েছি।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ইউরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাড়াতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। যেসব প্রতিষ্ঠানের ফ্যাকাল্টি আছে, তারা আবেদন করলে ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা করব। এভাবে আগামী দশ বছর চলতে থাকলে দেশে ইউরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট কাটিয়ে উঠা যাবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইসতিয়াক আহমেদ শামীম, ইউরোলজি বিভাগের রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডিভিশনের প্রধান প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিএইউএস-এর সাইন্টিফিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর, যুক্তরাষ্ট্রের এইউএ-এর ডা. প্রিয়া পদ্মানবান, ডা. মন্টু গুপ্তা, ডা. রবার্ট কেলেব কোভেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএইউএস-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদ আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএইউএস-এর সভাপতি ডা. এএইচএম আফজালুল হক রানা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৩ শতাধিক ইউরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশলাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. ডা. মো. আব্দুল্ল্হা আল হারুন, সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টিআই/এফকে