করোনা মহামারির সময় দেশের বৃহত্তর করোনা হাসপাতাল ছিল ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল’। বর্তমানে ডেঙ্গু ‘ডেডিকেটেড’ ঘোষণা করে এখানে দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা/ ফাইল ছবি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চাপ সামলাতে গত মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এখানে ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসছেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হচ্ছেন। তবে এক সপ্তাহ ধরে এখানে রোগীর চাপ অনেক কম। ফলে ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রায় অর্ধেক শয্যা এখন ফাঁকা আছে।

বুধবার (৯ আগস্ট) ডিএনসিসি হাসপাতালে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন রোগী  কিছুটা কম আছে। রোগী বাড়লে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি আছে তাদের। 

হাসপাতালে আসা বেশ কিছু রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগ এসেছেন তেজগাঁও, নাখালপাড়া, মহাখালী, মিরপুর ও বাড্ডা এলাকা থেকে।

রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকা থেকে জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসেন গাড়ি চালক ফয়সাল হোসেন। ডেঙ্গু পজিটিভ আসায় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন >> ডেঙ্গু : সর্বনিম্ন কত প্লাটিলেট ভয়ের কারণ?

ফয়সাল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমার জ্বর। কোনোভাবেই কমছিল না। সঙ্গে বুকে ও শরীরে তীব্র ব্যথা ছিল। বাসার পাশের একটি ফার্মেসি থেকে এতদিন ওষুধ খেলেও আর পারছিলাম না। একজনের সহযোগিতায় আজ হাসপাতালে এসেছি।

টিকিট কাউন্টার ও ডেঙ্গু পরীক্ষা বুথের সামনে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো রোগী অপেক্ষা করছেন। তাদের কেউ চিকিৎসক দেখিয়ে পরীক্ষা করতে অপেক্ষা করছেন, কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট, কেউ আবার টিকিটের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন

তেজগাঁও নাখালপাড়া থেকে চার বছরের শিশু মুনতাহাকে নিয়ে এসেছেন মা মনি আক্তার। দুইদিনের জ্বরেই মেয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে উল্লেখ করে মা মনি আক্তার বলেন, মেয়েটার গত দুইদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বর, পাশাপাশি পাতলা পায়খানা হচ্ছে। কিছুই খেতে পারছে না। 

তিনি বলেন, আল্লাহ যেন দ্রুত তাকে সুস্থ করে দেন। মেয়ের কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না।

দুপুরের দিকে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার ও ডেঙ্গু পরীক্ষা বুথের সামনে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো রোগী অপেক্ষা করছেন। তাদের কেউ চিকিৎসক দেখিয়ে পরীক্ষা করতে অপেক্ষা করছেন, কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট, কেউ আবার টিকিটের জন্য অপেক্ষায় আছেন।

হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে জানা গেছে, বুধবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জ্বর-সর্দি এবং ডেঙ্গু নিয়ে ১৭০ জন রোগী চিকিৎসক দেখাতে টিকিট কেটেছেন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গু পজিটিভ এবং হাসপাতালে ভর্তি উপযোগী হওয়ায় ৯ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিন (মঙ্গলবার) সর্বমোট ৪৫০ জন রোগী টিকিট কেটে স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির এক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন নতুন রোগী আসে। তাদের মধ্যে ভর্তি হয় ৭০ থেকে ৮০ জন। একইভাবে প্রতিদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ে ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো। যে কারণে রোগীর চাপ তেমন পড়ছে না।

তিনি বলেন, হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি আছে। রোগী কম থাকলেই আমাদের জন্য ভালো। রোগী বাড়লে টোটাল চাপটা কিছু মানুষের ওপর এসে পড়ে।

ডিএনসিসি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল একেএম জহিরুল হোসাইন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাসপাতালটি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করা হলেও এখন পর্যন্ত রোগীর চাপ তেমন বেশি নয়। বর্তমানে আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়। ডিসচার্জও কাছাকাছি রকমের।

তিনি বলেন, হাসপাতালটিতে ৫০০ শয্যা প্রস্তুত আছে, রোগী ভর্তি আছে ২৮৬ জনের মতো। রোগী যদি হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে সে আশঙ্কায় আমাদের ৮০০ শয্যা চালুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আছে। আরও যদি বেশি প্রয়োজন হয়, সেটিও আমরা চালু করতে পারব।

অন্যান্য হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলেও ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ডিএনসিসি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম থাকা প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, সাধারণত এলাকাভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি হতেই রোগী ও তাদের স্বজনরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যেহেতু আমরা দেখছি ডেঙ্গুর প্রকোপটা বেশি মুগদা, যাত্রাবাড়ীসহ ওইসব এলাকায়, সে কারণে রোগীর সংখ্যাও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশি। সেখানে যদি সিট পাওয়া না যায় তাহলেই রোগীরা আমাদের হাসপাতালে আসে।

স্যালাইন বা ওষুধের কোনো সংকট আছে কি না জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। ওষুধপত্রও পর্যাপ্ত আছে। পাশাপাশি এখানে পর্যাপ্ত সিটও খালি আছে। সবমিলিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। সুতরাং, আমরা আহ্বান জানাব কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঘরে বসে না থেকে হাসপাতালে আসুন, ঝুঁকিমুক্ত ও সুরক্ষিত থাকুন।

দেশে ডেঙ্গুর সবশেষ পরিস্থিতি

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে (৯ আগস্ট পর্যন্ত)। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৪২৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪ হাজার ৪২১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫ হাজার ৬ জন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৮ হাজার ৮১৪ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫৫ জন।

টিআই/জেডএস