দেশে এখন জলবায়ু পরিবর্তন নয়, জলবায়ুর বিপর্যয় ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জলবায়ু বিপর্যয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। এমনকি বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ লোক এই ডেঙ্গু ঝুঁকিতে আছে।

সোমবার (২৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ড্রপ) এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে ‘পানি, স্যানিটেশন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব এবং করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল এবং ক্লিনিক শাখা) ডা. শেখ দাউদ আদনান এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। সভাপতিত্ব করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং ড্রপের নির্বাহী উপদেষ্টা মো. আজহার আলী তালুকদার।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পালিত না হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি রোধ করতে জনগণের সচেতনতা এবং সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়রের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা জরুরি অবস্থায় পৌঁছে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রকোপ বাড়াচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর যে পার্থক্য, বাংলাদেশে তা বদলে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন সমস্যা। মৌসুম হোক বা না হোক, ডেঙ্গুর মতো বাহকনির্ভর রোগের প্রকোপ বাড়ছে শহর এলাকায়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডেঙ্গুর পূর্ববর্তী তথ্য বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা গিয়েছে যে, জলবায়ুর কারণে বিশেষ করে গত কয়েক বছরে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়েছে। জলবায়ুর অসঙ্গতির সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবং পজিটিভ কেসও বেড়েছে। আবহাওয়ার অবস্থা ডেঙ্গু রোগের সঙ্গে যুক্ত কারণ ‘এডিস ইজিপ্টি’র বৃদ্ধি এবং জীবনচক্র বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত সাহায্য করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নয়, এখন বিশ্ব দেখছে জলবায়ু বিপর্যয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে আমরা দেখছি ডেঙ্গু বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ লোক ডেঙ্গু ঝুঁকিতে আছে। আমরা কম কার্বন নিরসনে করেও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় মাহফুজ কবীর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপদ পানির সংকট এবং অকার্যকর ভেক্টর কন্ট্রোল স্ট্র্যাটেজির কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তার প্রভাবে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এবং ভাইরাসটির সুপ্ত থাকার প্রবণতাও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাল্টে যাচ্ছে। এর পরিণামে আমরা বাংলাদেশেও ডেঙ্গু পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি দেখতে পাচ্ছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. দাউদ আদনান বলেন, ডেঙ্গুর চরিত্র বদলে গেছে এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের রেপ্লিকেশনের হারও বেড়ে গেছে। তাই ডেঙ্গুতে প্রাণহানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে উন্মুক্ত আলোচনায় তারা ডেঙ্গু মহামারি নির্মূলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশক নির্মূল কর্মসূচি আরও জোরদার করতে তারা আহ্বান জানান।

ডেঙ্গুতে আজ ৯ জনের মৃত্যু, সবাই ঢাকার

রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সবাই ঢাকার বাসিন্দা। এ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৯৩ জন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন।

সোমবার (২৪ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৪৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ৩৯৫ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ২৭০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২১ হাজার ১৮৭ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৭ হাজার ৬২২ জন। ঢাকায় ১৬ হাজার ৬৪৪ এবং ঢাকার বাইরে ১০ হাজার ৯৭৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

টিআই/এমজে