নিজেদের তৈরি ওষুধ বিদেশি বলে চালাতো অ্যাস্ট্রন হেলথ
রাজধানীর শ্যামলীতে অ্যাস্ট্রন হেলথ কেয়ার নামে একটি ওষুধ কোম্পানিতে অভিযান চালিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এসময় প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২ কোটি টাকার নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ নিজেরাই তৈরি করে বিদেশ থেকে আমদানি করা বলে বিক্রি করতো।
রোববার (২৮ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওষুধ প্রশাসন ও র্যাব। অভিযান শেষে ঔষধ প্রশাসন আইন-১৯৪০ অনুযায়ী কোম্পানির মালিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা ওষুধ ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, শ্যামলীতে অ্যাস্ট্রন হেলথ কেয়ার নামে একটি ওষুধ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়ে থাকে এমন বিপুল সংখ্যক হার্বাল, গ্যাস্ট্রিক, ক্যালসিয়াম, যৌন উত্তেজক, মশার ওষুধসহ বিভিন্ন আয়ুর্বেদি ওষুধ তৈরি করে আসছিল। যেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা বলে তারা বিক্রি করতো। এছাড়া ওষুধ উৎপাদনে তাদের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।
অভিযানের সময় দেখা যায়, ২০১৩ সালে আমদানি করা বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্য পড়ে রয়েছে। ওষুধ তৈরির মেশিনও পাশে। প্রশাসন থেকে অনুমোদন না থাকায় রাতের আঁধারে তৈরি হতো ওষুধ। এ কাজে সহায়তা করেছেন মালিকের সহধর্মিণীও।
জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন আমরা এ চক্রকে নজরে রেখেছিলাম। সত্যতা পেয়ে আজ র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। এসময় বিপুল পরিমাণ অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। এখানে অধিকাংশ ওষুধেরই বাংলাদেশে আমদানির বৈধতা নেই। তাও আবার নিজেরা তৈরি করে বিদেশি বলে চালিয়ে দিচ্ছে নিজেদের মতো করে মাত্রা দিয়েছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে।
এসময় অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আয়ুব হোসেন বলেন, এখানে যে ধরনের ওষুধ রয়েছে তার কোনো অনুমোদন নেই। এমনকি কোম্পানিটির লাইসেন্সও নেই। দীর্ঘদিন ধরে আমরা কোম্পানিটিকে নজর রাখছি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা জানি বর্তমানে মানুষের উন্নত জীবনযাত্রায় ফুড সাপ্লিমেন্ট ও যৌন উত্তেজক ওষুধের চাহিদা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে সর্দি কাশির ওষুধ তৈরির আড়ালে এসব অবৈধ পণ্য তৈরি করে আসছে। এখানে জব্দ করা প্রতিটি পণ্য ২০১৩ সালের কেনা, যার অনেক আগেই মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমরা এদের ধরতে সক্ষম হয়েছি, প্রায় ২ কোটি টাকার ওষুধ জব্দ করেছি। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জব্দ করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়েক বস্তা বিভিন্ন কাঁচামাল, মেগা প্লাস-৩, এক্স-ভি, স্টে-অন, হোয়াইট কোড সিনেম, অ্যাস্টন লেজার, অ্যামিনো-১৮সহ বিভিন্ন যৌন উত্তেজক। এছাড় বিপুল পরিমাণ গ্যাস্ট্রিক, ক্যালসিয়াম, মশা মারার ওষুধসহ বিভিন্ন আয়ুর্বেদি ওষুধ; যেগুলো আমদানি নয়, নিজেরাই তৈরি করে আসছেন।
টিআই/জেডএস