‘কাগুজে বাঘ’ বিএমডিসি, ২০% চিকিৎসকের নিবন্ধন মেয়াদোত্তীর্ণ!
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। আইন অনুযায়ী, দেশে যেকোনো চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা দিতে হলে বিএমডিসির নিবন্ধন সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। এর বাইরে যদি কেউ চিকিৎসা প্রদান করেন, তাহলে সেটি হবে অবৈধ। নিবন্ধনহীন অবস্থায় অবৈধভাবে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিএমডিসির। কিন্তু নামে চিকিৎসকদের নিয়ম-শৃঙ্খলা আর দেখভালের কর্তৃত্ব থাকলেও অবৈধ ‘প্র্যাক্টিসে’র বিষয়ে বিএমডিসি যেন ‘কাগুজে বাঘ’!
এদিকে সংস্থাটি বলছে, নিবন্ধন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এমন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান না থাকায় ‘কিছুই করার থাকে না’ বিএমডিসির।
বিজ্ঞাপন
আঁখির মৃত্যুর ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কি ডা. সংযুক্তা সাহাই মেয়াদোত্তীর্ণ নিবন্ধনে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন? নাকি বিএমডিসির চোখ ফাঁকি দিয়ে এরকম আরও অসংখ্য চিকিৎসক অবৈধ প্রক্রিয়ায় চিকিৎসাসেবার মহান এ দায়িত্ব পালন করছেন
আলোচনায় নিবন্ধনবিহীন চিকিৎসক ও বিএমডিসির সক্ষমতা
সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো সেন্ট্রাল হসপিটালের প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসায় মাহবুবা রহমান আঁখি নামক এক প্রসূতির মৃত্যু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারির ভিডিও দেখে আঁখি প্রথম এই হাসপাতালে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, সংযুক্তা সাহার নির্দেশনায় তার অনুপস্থিতিতেই আঁখির চিকিৎসা শুরু করেন ডা. সংযুক্তার সহযোগী দুই চিকিৎসক। তাদের ভুল চিকিৎসায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আঁখি। এরপরই অনুসন্ধানে ডা. সংযুক্তা সাহার নিবন্ধনের বিষয়টি উঠে আসে।
আরও পড়ুন >> সেন্ট্রাল হসপিটাল আমার নাম ব্যবহার করে অনিয়ম করেছে : ডা. সংযুক্তা
জানা গেছে, বিএমডিসি থেকে ২৩ বছর আগে ডা. সংযুক্ত সাহাকে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে এক যুগ আগে, ২০১০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসকের নিবন্ধন নবায়ন না করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া চরম অনৈতিক।
বর্তমানে বিএমডিসির নিবন্ধিত এমবিবিএস চিকিৎসক আছেন এক লাখ ২৫ হাজারের মতো। যাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ চিকিৎসকেরই নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, যা শতকরা বিবেচনায় প্রায় ২০ শতাংশ। ২০১০ সালের পর ডা. সংযুক্তা সাহারও বিএমডিসি নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৩ বছর ধরে তিনি সেটা নবায়ন করেননি
আঁখির মৃত্যুর ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কি ডা. সংযুক্তা সাহাই মেয়াদোত্তীর্ণ নিবন্ধনে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন? নাকি বিএমডিসির চোখ ফাঁকি দিয়ে এরকম আরও অসংখ্য চিকিৎসক অবৈধ প্রক্রিয়ায় চিকিৎসাসেবার মহান এ দায়িত্ব পালন করছেন?
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিএমডিসির নিবন্ধিত এমবিবিএস চিকিৎসক আছেন এক লাখ ২৫ হাজারের মতো। যাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ চিকিৎসকেরই নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, যা শতকরা বিবেচনায় প্রায় ২০ শতাংশ। ২০১০ সালের পর ডা. সংযুক্তা সাহারও বিএমডিসি নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৩ বছর ধরে তিনি সেটা নবায়ন করেননি।
প্রতি পাঁচ বছর পর চিকিৎসকদের নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের এখানে পাঁচ বছর পরপর চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন রিনিউ (নবায়ন) করতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল ডা. সংযুক্তা সাহার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ ২০১০ সালে শেষ হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে ভলিউম চেক করে সংযুক্তা সাহার রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাটাস এবং ওনার ডিগ্রিগুলো দেখলাম। অভিযোগের সত্যতা পেলাম। ২০১০ সালে রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তীতে তিনি আর সেটি রিনিউ করেননি।’
আরও পড়ুন >> আঁখির মৃত্যুর জন্য সংযুক্তা সাহাকে দায়ী করল সেন্ট্রাল হসপিটাল
‘কেন তিনি এতদিন রিনিউ (নবায়ন) করেননি, এটার উত্তর তিনিই ভালো দিতে পারবেন। উনি হয়ত চিকিৎসা পেশায় এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কিছুটা সময় তিনি বের করতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন মোতাবেক নিবন্ধন ছাড়া কেউ যদি এক দিনও চিকিৎসাসেবা দেন, তাহলে সেটি হবে অনৈতিক এবং সম্পূর্ণ বেআইনি। আমরা প্রতি বছরই ফিজিশিয়ানস ও রেজিস্টার্ড চিকিৎসক যারা আছেন, আমাদের আইটি বিভাগের মাধ্যমে প্রত্যেককেই নিবন্ধন করার জন্য একটি এসএমএস পাঠাই। যখন আমরা এসএমএস দিই, তখন দেখা যায় কিছুদিন নিবন্ধনের চাপ থাকে। যাদের নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তারা এসে নিবন্ধন নবায়ন করে নিয়ে যান।’
লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমি যখনই চিকিৎসকদের বিভিন্ন সমাবেশ, সেমিনারে যাই তখনই তাদের নিবন্ধনের খোঁজখবর নিয়ে থাকি। কারও যদি নিবন্ধন না থাকে, তাহলে তাদের কী বিপদ হতে পারে সেগুলো বুঝানোর চেষ্টা করি। সবমিলিয়ে আমাদের প্রচেষ্টা থাকে নিবন্ধন রিনিউ করার প্রবণতা এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। চিকিৎসকদের মধ্যে এখন অনেক সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’
অবৈধদের বিরুদ্ধে বিএমডিসির কিছুই করার নেই
কেউ যদি অবৈধ পন্থায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যান, তাহলে কী ধরনের পদক্ষেপ বিএমডিসি নিতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্থাৎ যদি কেউ নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালান এবং এটা যদি কেউ আদালতে উপস্থাপন করেন, তাহলে তার শাস্তি আদালতের ওপর নির্ভর করবে। এখানে আমাদের হাতে কিছুই নেই। কোনো চিকিৎসককে পানিশমেন্ট (শাস্তি) দেওয়ার মতো কোনো বিধান আমাদের নেই। কারণ, আমাদের হাতে কোনো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই।’
আরও পড়ুন >> আমার স্ত্রী মরেনি, হত্যা করা হয়েছে : আঁখির স্বামী
‘এই মুহূর্তে আমাদের এক লাখ ২৫ হাজার এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন। এখন এই দেড় লাখের মধ্যে যদি ২০ হাজার ডাক্তারের নিবন্ধন রিনিউ করা না থাকে, তাহলে তো আমরা প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারব না। এটা তো আসলে যৌক্তিকও হবে না। তবে, আমরা সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে পারি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বারবার চিকিৎসকদের তাগাদা দেওয়া, পত্রিকায় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেওয়া— এ কাজগুলো আমরা নিয়মিত করে থাকি।’
শুধু কি সচেতনতামূলক কার্যক্রমই যথেষ্ট, নাকি আইনানুগ ব্যবস্থাও জরুরি— জানতে চাইলে ডা. মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আইনে যদি কোনো ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সেটি আমরা কীভাবে করব? আইনটা তো আমাদের থাকতে হবে। সেটি এ মুহূর্তে আমাদের নাই। এখানে আমাদের একটু গ্যাপ রয়ে গেছে। গ্যাপ বলতে, রেজিস্ট্রেশন রিনিউ যদি করা না থাকে তাহলে তাকে কতটুকু শাস্তির আওতায় আনা যাবে, এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।’
বিএমডিসির ভাবনায় আইনের বিষয়গুলো আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ভাবছি। আমাদের আইনে যদি শাস্তির বিষয়গুলো যুক্ত করা যায়, তাহলে চিকিৎসকদের ওপর বাধ্য-বাধকতা প্রয়োগ করা যাবে।’
জনবল সংকটে তদারকি সম্ভব হয় না : বিএমডিসি প্রেসিডেন্ট
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় বিএমডিসির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসানের। তিনি বলেন, ‘কারও যদি রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং তিনি যদি রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই দিনের পর দিন চিকিৎসা দিতে থাকেন, তাহলে সেটি আইনসিদ্ধ নয়। বিএমডিসির আইনে আছে, রেজিস্ট্রেশন নিয়েই একজন চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন। কাল রেজিস্ট্রেশন এক্সপায়ার (তামাদি হত্তয়া) হয়ে গেলে তিনি আর রেজিস্ট্রেশন পাবেন না।’
কতজনের রেজিস্ট্রেশন আছে, কতজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে— বিষয়গুলো বিএমডিসি নিয়মিত তদারকি করে কি না— জানতে চাইলে ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আমাদের ওয়েবসাইটে আছে। কিন্তু কতজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে, কার কার মেয়াদ আছে— এগুলো নিয়মিত তদারকি করার মতো জনবল আমাদের নেই। প্রত্যেক সদস্যের ইন্ডিভিজুয়াল প্রোফাইল ঘেঁটে, কার রেজিস্ট্রেশন আছে এবং কার নেই— এগুলো খুঁজতে হলে আরও বেশি জনবলের প্রয়োজন। সামনের দিনে এটা নিয়ে কিছু করা যায় কি না, আমরা আলোচনা করে দেখব।’
আরও পড়ুন >> বাঁচা-মরা আল্লাহর ইচ্ছা, আঁখি প্রসঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহা
বিএমডিসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চিকিৎসক যখন প্রথম রেজিস্ট্রেশন করেন, তখন তাকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের প্রত্যেকেই জানেন পাঁচ বছর শেষ হলে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কিন্তু যারা মেয়াদ শেষ হলেও করেননি বা করছেন না, তারা আমাদের নির্দেশনা অমান্য করছেন এবং তাদের প্র্যাকটিস করাও অবৈধ।’
‘সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসকের বিষয়ে যদি অভিযোগ আসে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত কতজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে আইনে উল্লেখ আছে। জানতে হলে আপনাকে আইন পড়তে হবে।’
নিবন্ধন ছাড়াই কীভাবে সেন্ট্রাল হসপিটালে চিকিৎসা দিতেন সংযুক্তা
এক যুগ ধরে নিবন্ধন নেই, তারপরও কীভাবে ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন— জানতে চাইলে সেন্ট্রাল হসপিটালের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হাসপাতালের কোন চিকিৎসকের নিবন্ধন আছে বা কার নেই সেটা আসলে আমাদের এইচআর ডিপার্টমেন্ট দেখে। এটা দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব। যে কারণে বিষয়টা আমাদের নজরে আসেনি।’
‘চিকিৎসকের নিবন্ধনটা হয় মূলত পাঁচ বছরের। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সেটি রিনিউ করতে হয়। উনি যখন এ হাসপাতালে কাজ শুরু করেছিলেন, তখন অবশ্যই তার নিবন্ধনের ভ্যালিড পিরিয়ডটা ছিল। পরবর্তীতে শেষ হলেও তিনি আর সেটি রিনিউ করেননি।’
আরও পড়ুন >> ১৩০ ব্যাগ রক্তেও বাঁচানো গেল না হাসিনাকে
ডা. সংযুক্তা সাহার একাডেমিক কাগজপত্র আছে কি না— জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজপত্র আছে, তবে সেগুলো এখন আমাদের হাতে নেই। তার প্রোফাইল কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন কোর্ট তার বিষয়ে ইনভেস্টিগেশন করবেন এবং দেখবেন কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আমাদেরও ইনভেস্টিগেশন চলছে, সেটা কমপ্লিট হলে বলতে পারব।’
সেন্ট্রাল হসপিটালের সিনিয়র এই ডেপুটি ডিরেক্টর আরও বলেন, ‘নিজেদের প্র্যাকটিস বাড়ানোর লক্ষ্যে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্রচারণার হাতিয়ার বানিয়ে রোগী বা তাদের অভিভাবকদের আকর্ষণ করানো সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং মেডিকেল ইথিক্স (নৈতিকতা) পরিপন্থি। সংযুক্তা সাহা সেই কাজটি নিয়মিত করেছেন। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর বাকি সব চিকিৎসককে এ বিষয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যদি এ ধরনের কোনো কার্যকলাপ নিজে বা তার নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি দ্বারা কোনো চিকিৎসক সম্পাদন করেন, তাহলে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।’
নিবন্ধনের বিষয়ে কথা বলতে ডা. সংযুক্তা সাহার লুকোচুরি
বিএমডিসির নিবন্ধন নবায়ন ছাড়াই অবৈধভাবে ১৩ বছর ধরে চিকিৎসাসেবার বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে ডা. সংযুক্তা সাহার ব্যক্তিগত নম্বরে কল করা হয়। এ সময় তিনি শারীরিকভাবে ক্লান্ত বলে জানান। ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমি তো কিছুক্ষণ আগেই একটা প্রেস কনফারেন্স শেষ করেছি। এখন আমি একটু টায়ার্ড। আমি আপনার নম্বরটি সেভ করে রাখছি, বিকেল বা সন্ধ্যার পর সময় করে আপনার সঙ্গে কথা বলব।’
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এবং রাত আসলেও সংযুক্তা সাহার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত নম্বরে মোট চারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ডা. সংযুক্তা সাহার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি
বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘প্লিজ, আমি একটা হিউম্যান বিং। আমি সকাল থেকে কিছুই খাইনি। আমি সময় করে আপনাকে ফোন দেব।’
এদিকে, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এবং রাত আসলেও সংযুক্তা সাহার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত নম্বরে মোট চারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ডা. সংযুক্তা সাহার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন >> ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু, বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না স্পেশালাইজড হাসপাতালের
এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. সাহা বলেন, ‘আমিও একজন সন্তানের মা, একজন চিকিৎসক। আমি এ দেশেরই লোক। দেশ ও সমাজের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা, সেখান থেকেই আমি মিডিয়ার সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে এসেছি।’
‘আমি সেন্ট্রাল হসপিটালে ২০০৭ সাল থেকে কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছি। সেন্ট্রাল হসপিটালে কোনো চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা প্রচলিত প্র্যাকটিসের ওপর নির্ভর করেই হসপিটালটি চলছে। কোনো চিকিৎসকের লিখিত সম্মতি না নিয়ে কোনো রোগী সেই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয় না। কিন্তু প্রয়াত মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হসপিটাল গত ১০ জুন ভর্তির প্রাক্কালে আমার কাছ থেকে মৌখিক বা লিখিত কোনো ধরনের সম্মতি গ্রহণ করেনি। ওনারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালের অপচেষ্টায় লিপ্ত। হয়ত বা ওনারা সফল। কারণ, আমার যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে।’
বিএমডিসির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ বছরে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার ২৬৮টি লিখিত অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। এর মধ্যে ৩৪টি ঘটনার নিষ্পত্তি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ৫০ চিকিৎসকের নিবন্ধন সার্টিফিকেট যাচাই চলছে। ২৮টি অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। গত ১৩ বছরে একজন চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল এবং ১২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে।
টিআই/এমএআর/