বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন হয়েছে। এতে করে এখন থেকে হাসপাতালটিতে বংশানুক্রমিক কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসা মিলবে। একই সঙ্গে কার্ডিওভাসকুলার জেনেটিকসের ক্ষেত্রে গবেষণা ও শিক্ষায় বিরাট অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (২০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ উপাচার্য এসব তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী। অনুষ্ঠানে দি ফিউচার অব হার্ট ডিজিজ ট্রিটমেন্ট শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু। বক্তব্য রাখেন কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একে এম ফজলুর রহমান, প্রধান গ্রন্থাগারিক ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক, হল প্রভোস্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দেশে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক হৃদরোগের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে।

এ সময় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকের মাধ্যমে কার্ডিওজেনেটিক টেস্টিং, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা, নতুন চিকিৎসার দ্বার উন্মোচিত হলো। বংশগত হৃদরোগ হ্রাসে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি) হলো একটি উল্লেখযোগ্য বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ, যা অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো ঝুঁকির কারণগুলো প্রসারের সঙ্গে বাংলাদেশে সিভিডি একটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে কার্ডিয়াকজেনেটিক টেস্টিংসহ একটি কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা দেশে কার্ডিওভাসকুলার রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে একটি বড় পদক্ষেপ।

বক্তারা জানান, জেনেটিক কার্ডিওভাসকুলার রোগের সূত্রপাতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বংশগত হাইপার কোলেস্টেরোলেমিয়া, হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি এবং অ্যারিথমোজেনিক রাইট ভেন্ট্রিকুলারডিস প্লাসিয়ার মতো সিভিডি হওয়ার ঝুঁকি বংশানুক্রমিক জেনেটিক মিউটেশনের দ্বারা বৃদ্ধি পেতে পারে। জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই মিউটেশনগুলোর শনাক্তকরণ এই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে, যার ফলে জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং রোগীর রোগের প্রকোপ কমে যায়।

তারা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে কার্ডিওজেনেটিক ক্লিনিকগুলো হৃদরোগের ব্যবস্থাপনায় একটি নিয়মিত অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই ক্লিনিকগুলো সিভিডি রোগীদের ব্যাপক জেনেটিক পরীক্ষা, কাউন্সেলিং এবং ব্যবস্থাপনা প্রদান করে। হৃদরোগের রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদানের জন্য কার্ডিওভাসকুলার জেনেটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। ইউরোপীয় সোসাইটি অফকার্ডিওলজি দ্বারা বংশানুক্রমিক কার্ডিওমায়োপ্যাথির ক্ষেত্রে গবেষণা এবং শিক্ষার প্রচারের জন্য মায়োকার্ডিয়াল এবং পেরিকার্ডিয়াল ডিজিজের ওপর ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পারিবারিক কার্ডিয়াক ক্লিনিক অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল প্রিন্স আলফ্রেড হাসপাতালে বংশানুক্রমিক কার্ডিয়াক অবস্থার রোগীদের জেনেটিক পরীক্ষা এবং পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

টিআই/এমএ