দেশে হঠাৎ করেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আইসিইউ শয্যার সংকট দেখা দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরাও। এ অবস্থায় সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সকল দায়ভার আক্রান্তদের ওপরই দিচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দিন দিন মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। করোনা তো বাড়বেই।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই, স্বাস্থ্যবিধি না মানি, তাহলে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। যা আমরা এখনও বুঝতে পারছি না। কারণ, আমাদের হাসপাতালগুলোতে তো লাখো মানুষের জায়গা হবে না। কোথায় চিকিৎসা হবে? কে চিকিৎসা দেবে এত মানুষকে? 

আমরা যদি সতর্ক না হই, অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে তো লাখো মানুষের জায়গা হবে না। কোথায় চিকিৎসা হবে? কে চিকিৎসা দেবে এত মানুষকে?

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক

তিনি আরও বলেন, আমরা আগে থেকেই বলেছি, আমরা এখন জেনেশুনেই আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের নিজেদেরই সতর্ক হওয়া উচিত। তা না হলে পরে নিজের এবং পরিবারের ক্ষতি হবে। 

২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরের জুলাইয়ের তিনদিন আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের বেশি ছিল। এরপর ধীরে ধীরে দৈনিক সংক্রমণ কমে ফেব্রুয়ারিতে ৩০০-এর কাছাকাছি নেমে আসে এ সংখ্যা। তবে মার্চের ৮ তারিখ থেকে দৈনিক সংক্রমণের হারে ঊর্ধ্বগতি স্পষ্ট।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে গতকাল (২১ মার্চ) করোনায় আক্রান্ত আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬৯০ জনে। এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৭২ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৮ জনে।

এর আগে শনিবার (২০ মার্চ) ভাইরাসটিতে ২৬ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন এক হাজার ৮৬৮ জন। 

তবে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হারে বাড়লেও দেশের হাসপাতালগুলোতে ৭৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ সাত হাজার ৬৯৭টি করোনা শয্যা খালি পড়ে আছে।

দেশে হঠাৎ করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দোষেই এটা হয়েছে। বর্তমানে জনগণ অনেকটা বেপরোয়া। রাস্তাঘাটে চললে দেখা যায়, লোকজন কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানে না, মাস্ক পরে না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে না। আপনারা দেখেছেন, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে কী পরিমাণ মানুষ যাওয়া-আসা করছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, কক্সবাজারে ১৫ লাখসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ২০-২৫ লাখ লোক গত এক মাসের মধ্যে ভ্রমণ করেছে। একটু ভাবেন, এই লোকগুলো যদি এই পরিস্থিতিতে একটা জায়গায় যায়, মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মানে, তাহলে করোনা তো স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। 

‘বিয়ে-শাদি হচ্ছে নিয়মিত। সেখানেও কেউ মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্য বিভাগের যে নির্দেশনা, তার কিছুই মানে না’— যোগ করেন তিনি।

মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না— জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপাতত লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করি, তাহলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বাড়ছে তো আমাদের বেপরোয়া চলাফেরার কারণেই। নিজেরা সচেতন হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমাদের তো অর্থনৈতিক দিকটাও দেখতে হবে। 

জাহিদ মালেক আরও বলেন, দিন দিন মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। লকডাউন তো ভিন্ন কথা। 

১০ মার্চ থেকে হাজারের বেশি আক্রান্ত
তারিখ শনাক্ত মৃত্যু হাসপাতালে মৃত্যু বাড়িতে মৃত্যু
১১ মার্চ ১০১৮
১২ মার্চ ১০৫১
১৩ মার্চ ১০৬৬ ১২ ১১
১৪ মার্চ ১১৫৬ ১৮ ১৮
১৫ মার্চ ১৭৭৩ ২৬ ২৬
১৬ মার্চ ১৭১৯ ২৬ ২৬
১৭ মার্চ ১৮৬৫ ১১ ১১
১৮ মার্চ ২১৮৭ ১৬ ১৬
১৯ মার্চ ১৮৯৯ ১৮ ১৬
২০ মার্চ ১৮৬৮ ২৬ ২৬
২১ মার্চ ২১৭২ ২২ ২২
মোট ১৭৭৭৪ ১৮৮ ১৮৫

১১ দিনে মৃত্যু দ্বিগুণ 
১০ মার্চ থেকে গতকাল (২১ মার্চ) পর্যন্ত ১১ দিনে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৭৭৪ জন। এর আগের ১১ দিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ছয় হাজার ৬৬৩ জন। অর্থাৎ পরবর্তী ১১ দিনে ১১ হাজার মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ১৮৮ জন। এর আগের ১১ দিনে মারা যান ৯৪ জন। অর্থাৎ এই ১১ দিনে মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে।

এদিকে দেশে এখন পর্যন্ত করোনার টিকা নিয়েছেন ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৭ জন। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সাবরিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। 

টিআই/এনএফ/এমএমজে