লবণাক্ততায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, লবণাক্ততা বাড়ায় উপকূলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, কিডনি রোগ এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের মতো নানা অসংক্রামক রোগ বাড়তে শুরু করেছে।
সোমবার (২০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আইসিডিডিআর,বি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টার ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ নামক গবেষণা সেন্টারের উদ্বোধন করে। এই সেন্টারটি সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার ক্ষতি কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ মোকাবিলায় সাশ্রয়ী, টেকসই সমাধান বের করা ও পরীক্ষা করার জন্য কাজ করবে।
একই সঙ্গে গবেষণা কেন্দ্রটি বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্যও কাজ করবে। পরিবেশগত পরিবর্তন এবং অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে মাল্টিসেক্টরাল কার্যক্রমের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাবে বলেও জানায় আইসিডিডিআর,বি।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ, গবেষণা সেন্টারের কার্যক্রমের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এবং যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মিলেট পাঁচ বছর মেয়াদী এই বৈশ্বিক সেন্টারের একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। এ সময় তারা বলেন, গবেষণা সেন্টারটি যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ভারতের দ্য জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথসহ শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, ইন্দোনেশিয়ার ব্রাউইজায়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বির যৌথ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গবেষণা কেন্দ্র অসংক্রামক রোগের দ্রুত ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বৈশ্বিক পরিবেশগত পরিবর্তনের হুমকির দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নীতিনির্ধারণ-সংক্রান্ত গবেষণা, গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করবে।
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এই গবেষণা সেন্টারটি প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে কম খরচে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এ সময় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসামান্য অবদানের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় প্রতিটি বিভাগে একটি করে আধুনিক হাসপাতালসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, আমি আশা করব এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টার গবেষণার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় নীতিনির্ধারণ সহায়ক তথ্য ও প্রমাণ প্রদান করতে পারবে যা আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে লাগবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইসিডিডিআর,বি এবং এই সেন্টারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি এই গবেষণা সেন্টারের কার্যক্রমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে যে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে তার প্রশংসা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন পারস্পরিক সহযোগিতামূলক এই কার্যক্রম দেশে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এবং অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআর,বি-র এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ড. আলিয়া নাহিদের তত্ত্বাবধানে এনআইএইচআর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারটি পরিচালিত হবে। নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) সেন্টারটির পরিচালনায় সহায়তা করবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ, যুক্তরাজ্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
টিআই/এমএ