কলেরায় আক্রান্ত মুমূর্ষু সন্তান ইব্রাহীমকে নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে আসেন চা দোকানদার ফারুক হোসেইন। পরে সুস্থ সন্তান নিয়ে হাসিমুখে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সেবায় মুগ্ধ হয়ে ছয় পাতার একটি কবিতা লিখেছেন ফারুক।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) চা বিক্রেতার লেখা কবিতাগুলো আইসিডিডিআরবি তাদের ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করে। এই কবিতাকে নতুন বছরের সেরা চমক হিসেবে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।

ফেসবুক পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি লিখেছে, মহাখালী কলেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার হাসপাতালটির সামনে স্থাপন করা মন্তব্য বাক্স খুলে একজন রোগীর বাবার লেখা ছয় পাতার একটি কবিতা পাওয়া যায়। পেশায় চা দোকানদার ফারুক হোসেইন ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মানিকগঞ্জ থেকে কলেরায় আক্রান্ত মুমূর্ষু সন্তান ইব্রাহীমকে নিয়ে আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন।

আরও পড়ুন : সিসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত দেশের সাড়ে তিন কোটি শিশু

সেই সময়টিতে সারা দেশেই ডায়রিয়া-কলেরার প্রকোপ বিদ্যমান ছিল। চা বিক্রেতা আমাদের হাসপাতাল কর্মীদের সেবায় মুগ্ধ হয়ে এই কবিতা লিখেছেন।

পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফারুক বলেন, আইসিইউতে ভর্তি থাকা আমার ছেলে যখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছিল তখন মনে হলো আইসিডিডিআরবির ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীর ব্যবহার ও সেবায় আমরা যে মুগ্ধ হয়েছি তার একটা স্মৃতি রেখে যাই। তখন এই কবিতাটি লিখি।

আইসিডিডিআরবির পেজে লেখাটি পাবলিশ করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘রোগীদের এমন অনন্য অভিব্যক্তিগুলোই গুণগত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার যাত্রায় আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।’

>>>কবিতাটি নিচে যুক্ত করা হলো 

আইসিডিডিআর’বি, ঢাকা হাসপাতাল

ফারুক হোসেইন

আমি গ্রাম্য, পুঁজি অল্প
অতি সামান্য আমার চায়ের দোকান,
তবু যেন সুখেই আছি
নিয়ে মা, বাবা স্ত্রী দুই ছেলে সন্তান।।
হঠাৎ ছোট ছেলের হল বমি
সাথে জ্বর, পাতলা পায়খানা
গাঁয়ের ডাক্তার দিয়েছে ওষুধ
না- কিছুই হলো না।।

নিয়ে গেলাম মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল
চেয়েছি ডাক্তার, পেয়েছি নার্স, ডেকে ডেকে হয়রান।
সেবা নাকি হয়রানি- পুরাই গোলমাল
ছেলে ধীরে ধীরে কাতর, আমি বেসামাল!
কি করি কোথায় যাই- উহ! উহ! দিশেহারা প্রাণ,
কেউ একজন বলে উঠল, নিয়ে যাও মহাখালী কলেরা হাসপাতাল
জানি না চিনি না- শুনে চমকে গেলাম
তবু ছেলেকে করতে সুস্থ ঢাকায় আসতে লাগলাম।
অ্যাম্বুলেন্সে ছেলে কাতর আর শহরের করুণ যানজট
ছেলের পাতলা পায়খানা, আর আমাদের বমি বিমর্ষ ক্ষণে ক্ষণে।
গেট খুলতেই দেখি বিশাল বিল্ডিং নাম-
icddr,b Dhaka Hospital, কলেরা হাসপাতাল।
সিকিউরিটি নাকি পুলিশ, সেনাবাহিনী
দেখে ভয়ে ভয়ে ভেতরে গেলাম ।।
নিয়ম শৃঙ্খলায় ভর্তি-বেড শুরু হলো চিকিৎসা,
ধীরে ধীরে কাটে সংকট, লাগে আপন জন দেখে তাদের সেবা।।
তবু হলো না সুস্থ গুরুতর অবস্থা
নিতে হবে ICU তে
শুনে ঘুরে গেল মাথা।
না জানি লাগে কত টাকা,
যাবে বুঝি বাপের ভিটা,
পরে শুনি ফ্রিতে হয় চিকিৎসা, শুধু হয় জনতার সেবা।
ICU তে যাওয়া মাত্রই করেছে সাদরে গ্রহণ
আমরা জানি তাদের অনেক আপনজন।
শুরু হলো এ পরীক্ষা ও পরীক্ষা
তার লাগিয়ে মেশিনে দেখা- শুধু চিকিৎসা,
কে সিস্টার, কে ডাক্তার যায় না বুঝা
অক্লান্ত পরিশ্রমে সবাই করেছে সেবা।
ছেলে আমার হলো কিছুটা সুস্থ,
নিয়ে এলো অন্য রুমে,
সেথাও চলতে থাকে চিকিৎসা ও সেবা, যত্ন সহকারে।
কি সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
কি দারুণ ব্যবহার আর কথা,
হৃদয়ে দাগ কেটে যায়
যখন সিস্টার-ডাক্তার ডাকে মা ও বাবা!
আস্তে আস্তে সেরে যায় রোগ,
ভালো হয় খারাপ ব্যাধি কলেরা।
মা বাবার কাছে যেমন আপন, বুকের ধন
তাদের ছেলে, মেয়ে, সন্তান
তেমনি icddr,b Hospital এর কাছে
প্রতিটি মানব অতি আপনজন।
ধনী, গরিব সবাই সমান, নেই কোনো ব্যবধান
সবই পেয়েছি, চিকিৎসা, সেবা-যত্ন, করেছে জন কল্যাণ।
পরিষ্কার কর্মী যারা পরিশ্রম দেয়,
মা বাবার মতই তারা।
সিকিউরিটি ভাই যারা, বন্ধুর মত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তারা।
নার্স যারা, ভালোবাসা সেবায় যেন আপন বোন তারা।
ডাক্তার ও গুণী জন যারা, আল্লাহর দানে জ্ঞানী গুণী হয়ে,
মানবের জীবন নতুন করে গড়েছেন তারা।
এসেছিলাম অসুস্থ দেহ নিয়ে ও কান্না ঝরা চোখে,
সুস্থ হয়ে ঠিকই যাচ্ছি চলে, কিন্তু মায়া থেকে যাবে অন্তরে।
এত শ্রম, ত্যাগ, এত দান দিয়ে যারা গড়েছেন
এই প্রতিষ্ঠান icddr,b Hospital, করেছেন মানবতার কল্যাণ।
হে পরম করুণাময় আল্লাহ পূরণ করুন তাদের লক্ষ্য,
পৌঁছে দিন তাদের এই সেবা সারা দুনিয়ায়।
সাফল্য নিয়ে পৌঁছে যেন , গ্রহ নক্ষত্র তারায়।
জনম জনম চলে যেন, চলে মহাকাল।
আমার প্রিয় icddr,b Dhaka Hospital
প্রাণ বাঁচানো কলেরা হাসপাতাল।

টিআই/এসকেডি