নবজাতকের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সক্ষম ‘এনওপিভি২’ টিকা
নবজাতকদের জন্য নিরাপদ এবং সফলভাবে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সক্ষম মুখে খাওয়ার নতুন পোলিও টিকা (এনওপিভি২) তৈরির কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) আইসিডিডিআর,বি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল দ্য ল্যানসেট এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১১ ডিসেম্বর) আইসিডিডিআর,বি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল দ্য ল্যানসেট এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত চাঁদপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি-র মতলব হেলথ রিসার্চ সেন্টারে একটি র্যান্ডমাইজড (বাছবিচারহীনভাবে), ডাবল-ব্লাইন্ড, কন্ট্রোল্ড (নিয়ন্ত্রিত), ফেজ ২ ট্রায়াল চালায়। গবেষকরা গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রয়েছেন এমন নারী ও তাদের নবজাতকদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
গবেষণায় নবজাতকদের চার সপ্তাহের ব্যবধানে এনএপিডি টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর তাদের সংবেদনশীলতা, সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এনওপিডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম ৯৯ শতাংশ নবজাতকের মধ্যে রোগ প্রতিরোধমূলক নিউট্রিলাইনিং অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
মুখে খাওয়ার পোলিও টিকায় (ওপিডি) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করার জন্য জীবন্ত কিন্তু ক্ষতি করতে অক্ষম পোলিও ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। শুধু বিরল কিছু ক্ষেত্রে, প্রচলিত ওপিডি-তে ব্যবহৃত টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস বিবর্তিত হয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা থেকে টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস বাদ দিয়েছে এবং শুধু টাইপ-১ এবং টাইপ-৩ পোলিও ভাইরাস মোকাবিলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য এনএপিডি নামের একটি মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, যার মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা কম। টিকাটি পূর্বে যারা ইন্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাক্সিনের (আইপিভি) অন্তত একটি ডোজ পেয়েছে তাদের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এটির মাধ্যমে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা পূর্বের প্রচলিত মুখে খাওয়ার টিকার চেয়ে কম। এজন্য নবজাতক, যারা পোলিও সংক্রমণের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তাদের নিয়ে করা এই নতুন গবেষণার ফলাফল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য পোলিও নির্মূলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গবেষণার ফলাফলকে পোলিও মুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছে।
আইসিডিডিআর,বি-র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও এই গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ড. কে. জামান বলেন, পোলিও রোগের ঝুঁকিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করার জন্য মুখে খাওয়ার এই নতুন পোলিও টিকা নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি ইউজ লিস্টিং কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যেই বাস নির্বিশেষে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য এনএপিভি টিকার ৪৫ কোটিরও বেশি ভোজ বিভিন্ন পোলিও-প্রবণ দেশে বিতরণ করেছে। পোলিওমুক্ত বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে পোলিও টিকার কারণে পুনরায় পোলিও সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা খুবই জরুরি, সেক্ষেত্রে এনওপিভি২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেইটস ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি), দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাক্সিন ইনস্টিটিউট (আইডিমাই) এবং আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
টিআই/এসএসএইচ/