অফিসে সারা দিন কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সামনে কাজ। রাতে বাড়ি ফিরে টিভি বা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত চোখ আটকে থাকে। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে। এ সবের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ।

বেশি স্ক্রিন ব্যবহারে ফলে প্রায়ই আমাদের চোখে নানারকম সমস্যা হতে থাকে, যেমন- চোখ থেকে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, ঝাপসা দেখা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

তবে এগুলো খুব সাধারণ সমস্যা ভেবে আমরা এড়িয়ে যাই। কিন্তু চোখের প্রতি অবহেলা একেবারেই ভালো নয়। দিনের পর দিন এরকম চলতে থাকলে আপনি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। তাই এখন থেকেই সতর্ক হোন। জেনে নিন চোখ ভালো রাখার কয়েকটি সহজ উপায়

২০-২০-২০ নিয়ম 
স্ক্রিন টাইম আজকালকার দিনে মূল উদ্বেগের বিষয়। দিনের বেশিরভাগ সময় ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, টেলিভিশনের সামনেই কেটে যায়। ফলে চোখে মারাত্মক চাপ পড়ে। তাই, কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে কয়েক মিনিটের জন্য চোখকে বিরতি দিন। ৩০ মিনিট একটানা কাজ করার পর ১০ মিনিটের বিরতি নিন। একটু জল খান। চোখ বন্ধ রেখে তাদের বিশ্রাম দিন। এই কয়েক মিনিট স্ক্রিন থেকে একেবারে দূরে থাকুন। বিশেষত, লাইট বন্ধ করে কখনই টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ব্যবহার করবেন না। এতে চোখে আরও চাপ পড়ে।

এছাড়া, আপনি যদি দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছেন, তবে ২০-২০-২০ পদ্ধতিটি অবশ্যই মেনে চলুন। ২০ মিনিট পর পর চোখকে অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্যে বিশ্রাম দিতে হবে। প্রতি ২০ মিনিট অন্তর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনও কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকুন।

ব্লু কাট লেন্স এবং সানগ্লাস
কম্পিউটারের সামনেই বেশিরভাগ সময় কাটে? তাহলে অবশ্যই ব্লু লাইট ব্লকার লেন্স বা ব্লু কাট লেন্স ব্যবহার করুন। এতে একটি বিশেষ আবরণ রয়েছে, যা স্ক্রিনের ক্ষতিকারক নীল আলো এবং অতিবেগুনী রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করে। নীল আলো চোখে প্রবেশ করতে দেয় না। এছাড়াও, সানগ্লাস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচায়। তবে এমন সানগ্লাস কিনুন, যেটা ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ UV-A এবং UV-B এক্সপোজার প্রতিরোধ করতে পারবে।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট
প্রত্যেক দিনের ডায়েটে তাজা ফল এবং শাকসবজি রাখতে হবে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে গাজর দারুণ কার্যকরী। গাজর ভিটামিন-এ তথা বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা চোখের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারি। এছাড়া, প্রতিদিন গাঢ় সবুজ শাকসবজি যেমন- পালং শাক, কালে বা কলার্ড গ্রিন, এগুলো খেলে দৃষ্টিশক্তি খুব ভাল থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, যেমন- স্যালমন, লেক ট্রাউট, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, টুনা এবং হালিবুট, এই সব মাছও আমাদের চোখ সুস্থ রাখতে পারে।

ব্যায়াম 
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, নিম্ন রক্তচাপ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা চোখের জন্য খুবই ভাল। অ্যারোবিক ওয়ার্কআউটও করতে পারেন।

ঠান্ডা সেঁক 
চোখ সুস্থ রাখতে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। ফ্রিজের মধ্যে রাখা কমপ্রেজড মাস্ক ব্যবহারে ক্লান্তিভাব দূর হয়, শুষ্ক চোখ, মাথাব্যথা এবং অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে পারে।

প্রচুর পানি পান করুন
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চোখ ভালো রাখতে গেলে সারা দিনে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন। রোজ অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস জল খেতে হবে। এতে চোখ পরিষ্কার এবং সুস্থ থাকবে, পাশাপাশি ডিহাইড্রেশনের চিন্তাও থাকবে না।

এসএম