দেশের ১৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিকতা সমস্যায় ভোগে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, মানসিক সমস্যায় ভোগা ১৮ শতাংশের মানুষের মধ্যে শিশুদের হার ১২ শতাংশ। আমরা চিকিৎসায় এখনো পিছিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে যদি সারাদেশে বিস্তৃত করতে না পারি তাহলে প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।

রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সভা কক্ষে ‘কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে পর্যালোচনা’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ মালেক বলেন, দীর্ঘদিন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি পিছিয়ে থাকলেও এখন সামনে এসেছে। আমরা মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকেও সম্প্রাসারিত করেছি। এনসিডি কর্নারে মানসিক স্বাস্থ্যকেও যুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ সহজে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা পাবেন।

মন্ত্রী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপ্তি বাড়ানো এবং একে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করতে জনবল গড়ে তোলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তার নিরবচ্ছিন্নতা।

গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার গত বাজেটে গবেষণার জন্য ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে, সব বিষয়ে গবেষণার জন্য। রিসার্চ এগিয়ে যাবে আমরা আশা করি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও আমরা ভালো গবেষণা আশা করি। গবেষণায় বরাদ্দের বিষয়টা দেখছে বিএমডিসি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে সব অসংক্রামক রোগে আমরা জোর দিতে পারিনি। স্বাস্থ্যে যে বাজেট, তার মধ্যে আবার মানসিক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কম। কিন্তু প্রতি বছর শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিএমডিসি এটাতে জোর দেবে বলে আমরা আশা করছি।

আরও পড়ুন : ডেঙ্গু পরীক্ষা : সরকারিতে ১০০ টাকা, বেসরকারিতে ৩০০

বর্তমান সরকার যথেষ্ট মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব দাবি করে জাহিদ মালেক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়ার এমনকি বিশ্বেও রোল মডেল হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ইন্ডিগেটর প্রয়োজন আছে। এবিষয়ে আমরা নির্দেশনা দেব। ইন্ডিগেটর থাকলে কতটুকু কাজ হচ্ছে বুঝা যায়।

এ সময় মানসিক স্বাস্থ্যকে স্বল্পমেয়াদি ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে প্রণীত ৫ম সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় পৃথক একটি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেটে অন্তর্ভুক্তকরণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে পৃথক শাখা সৃষ্টি করা যেতে পারে বলে মত দেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, যুগোপযোগী এই পরিকল্পনা করোনার কারণে এতদিন বাস্তবায়ন করা যায়নি। এরপর আসল ডেঙ্গু। কোভিডে মানসিক সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে টেকসইভাবে এটি নিয়ে কাজ করতে গেলে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব বিভাগ রয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পৌঁছে দেওয়া যায় সেই আমাদের লক্ষ্য। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করে দেবে।

সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত ছিলেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ও জাতিসংঘের মহাসচিবের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ। এ সময় বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

টিআই/এসকেডি