৭০ শতাংশ নারীর ভিটামিন ডি’র ঘাটতি: গবেষণা
দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নন অথবা যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না এমন নারীদের এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব নারীদের মধ্যে জিংকের ঘাটতি রয়েছে ৪৩ শতাংশ, আয়োডিনের ৩০ শতাংশ, ফোলেটের ২৯ শতাংশ এবং আয়রনের ঘাটতি রয়েছে ১৪ শতাংশ।
উদ্বেগজনক বিষয় হলো ৭০ শতাংশ নারীদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০ শতাংশ নারীর ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ছিল এবং শুধুমাত্র ৭ শতাংশ নারীর স্বল্প মাত্রায় ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩০ অক্টোবর) গুলশানের লেকশোর হোটেলে দ্বিতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১৯-২০ ফলাফল শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ।
এসময় বলা হয়, ২০১১-১২ সালে পরিচালিত প্রথম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, নারীদের মধ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতির অবস্থা তিনটি সূচকে (জিংক, আয়োডিন এবং ভিটামিন এ) উন্নতি হয়েছে। আর দুইটি সূচকে (আয়রন, ফোলেট) আরও অবনতি হয়েছে। প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে দুইটি সূচকে (ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি১২)।
গবেষণায় দেখা গেছে, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের খনিজ পদার্থের ঘাটতির মধ্যে জিংক ৩১ শতাংশ, আয়োডিন ২০ শতাংশ এবং আয়রন ১৫ শতাংশ। আবার ভিটামিনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে ২২ শতাংশ ভিটামিন-ডি এবং ৭ শতাংশের মাঝারি মাত্রার ভিটামিন-এ এর ঘাটতি ছিল।
প্রথম জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, শিশুদের তিনটি সূচকের (ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং জিংক) জন্য মাইক্রোনিউটিয়েন্টের ঘাটতির অবস্থা উন্নত হয়েছে। কিন্তু আয়রনের ঘাটতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ জরিপে প্রথমবারের মতো পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আয়োডিনের বিষয়টি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে ২০ শতাংশ শিশুদের মধ্যে আয়োডিনের ঘাটতি ছিল।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মুস্তাফিজুর রহমান। এসময় তিনি কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জরিপটি সফলভাবে সম্পন্ন করায় আইসিডিডিআরবির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাইক্রোনিউটিয়েন্টের ঘাটতির এই ফলাফল শিশু এবং নারীদের জন্য জাতীয় পুষ্টি সেবা কর্তৃক পরিচালিত সম্পূরক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
গবেষণার প্রধান গবেষক ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, এ গবেষণায় নতুনভাবে বের হয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের কোন ভিটামিন এবং খনিজগুলোর গুরুতর অভাব রয়েছে। এটি দেশে পরবর্তী পঞ্চম হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামসহ অন্যান্য পুষ্টি কর্মসূচিগুলো প্রণয়নে নীতিনির্ধারকদের নতুন দিক-নির্দেশনা দেবে। তবে, পুষ্টি কর্মসূচি কার্যক্রম অগ্রগতি জানার জন্য গবেষণার মাধ্যমে নিয়মিত মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবি গবেষণার অবকাঠামো বাংলাদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিগত প্রমাণ (এভিডেন্স) তৈরি করতে একটি চমৎকার সুযোগ তৈরি করেছে, যা জাতীয় পুষ্টি সেবাকে প্রয়োজনীয় গবেষণার কাজে সহায়তা করবে।
সেমিনারে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, আমি আশাবাদী যে এই সমীক্ষার ফলাফল খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল প্রণয়নে এবং কার্যক্রম গ্রহণে সহায়তা করবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য উইং) সৈয়দ মজিবুল হক। এসময় গুরুত্বপূর্ণ এ ফলাফল বের করার জন্য তিনি জাতীয় পুষ্টি সেবা এবং আইসিডিডিআরবির প্রশংসা করেন। তিনি এই প্রমাণগুলোকে কাজে লাগিয়ে শিশু ও নারীদের মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতিগুলো সমাধানে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার ওপর জোর দেন।
সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্ব সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শাহ মনির হোসেন। এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, গবেষক, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পুষ্টি সেবার সঙ্গে এ সেমিনারের সহ-আয়োজক ছিল দ্যা গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্ক-এশিয়া।
উল্লেখ্য, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টিকণা হলো ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যেগুলো আমাদের শরীরে স্বল্প মাত্রায় প্রয়োজন হয়। যদিও স্বল্প মাত্রায় প্রয়োজন হয় তথাপি এ অনুপুষ্টিকণাগুলো শরীর গঠনে এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে অপরিহার্য উপাদান।
অতি ক্ষুদ্র এই ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলো আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় এনজাইম, হরমোনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো উৎপাদনে সহায়তা করে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতির কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিভিন্ন রকমের পুষ্টির অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।
টিআই/এমএইচএস