দেশে আবারও লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। দৈনিক শনাক্ত হওয়া সংক্রমণ ছাড়িয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাকেও। এজন্য অনেকাংশেই রাজধানীতে চলমান নির্মাণকাজকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রায় ৪০ শতাংশ এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্প থেকে।
 
নির্মাণাধীন ভবনের ক্ষেত্রে বেজমেন্টের (অট্টালিকার ভূগর্ভস্থ অংশ) কিউরিংয়ে আটকে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়। এসব মশা শুধু কর্মরত শ্রমিকদেরই নয়, আশপাশের বাসা-বাড়িতে থাকা মানুষদেরও কামড়ায়। তারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-কেও এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে এগিয়ে আসতে হবে—পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৭ হাজার ১৭৭ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই হাজার ২৮২ জন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৭ হাজার ১৭৭ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই হাজার ২৮২ জন।
 
সম্প্রতি অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে ৪৫.২ শতাংশ বহুতল ভবন এবং ২৪.৮ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশা ছিল। এছাড়া ২০ দশমিক ৩ শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়ি, ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বস্তি বা আধা-পাকা বাড়ি এবং ২ দশমিক ৮ শতাংশ খালি প্লটে এডিস মশা পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবন, ২৭ শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়ি, ১২ দশমিক ১ শতাংশ বস্তি এবং ৫ দশমিক ১ শতাংশ খালি প্লটে এডিস মশা দেখা গেছে।

ময়লাযুক্ত পানির ওপর ব্রাক ইউনিভার্সিটি প্রজেক্টের শ্রমিকদের রাত্রিযাপন

ডেঙ্গু ছাড়ছে না ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রজেক্টে কর্মরত শ্রমিকদের
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ চলছে। সূত্রে জানা গেছে, ওই নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত প্রায় অর্ধেকের বেশি শ্রমিক ইতোমধ্যে একবার হলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বাদ যাননি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকা বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। প্রতিষ্ঠানটির স্ট্রাকচারাল (কাঠামোগত) কাজ করছে হুইটম ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামক একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। সেখানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের স্ট্রাকচারাল কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখনও আমাদের টিমে ১০০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত তাদের কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত থাকছেন। দৈনিক অন্তত পাঁচ থেকে ছয়জনের জ্বর থাকেই।

ব্র্যাকের নির্মাণাধীন এ ভবনে ট্রান্সলেটর (অনুবাদক) হিসেবে কাজ করছেন মিসবাহুল আবেদীন নামের এক বাংলাদেশি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অসংখ্য বিদেশি শ্রমিক দেশে চলে গেছেন। যাদের প্রায় অধিকাংশই ডেঙ্গু পজিটিভ ছিলেন। যেহেতু তারা বাংলা ভাষা বুঝেন না, তাদের নিয়ে আমাকেই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের এখানে চাইনিজ আছেন ছয় থেকে সাতজন। এখন এখানে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আগের চেয়ে কমেছে। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও কম পাচ্ছি। তবে, এটাও আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক।

‘চাইনিজ যারা আছেন তারা খুবই ভালো পরিবেশে থাকেন। বাংলাদেশিরা খুবই খারাপ অবস্থায় থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ যদি জ্বরে আক্রান্ত হন, তিনি নিজেই চিকিৎসকের কাছে যান, ওষুধ নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে কারোরই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয় না।’

ডেঙ্গু প্রজননের উৎসের বিষয়ে জানতে চাইলে মিসবাহুল আবেদীন বলেন, যেহেতু কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (নির্মাণ প্রতিষ্ঠান), সে কারণে সার্বক্ষণিক আমাদের কাজ চলে। আমাদের বেজমেন্ট যেগুলো আছে, বিশেষ করে বি-১, বি-২, বি-৩; এগুলোতে পানি জমে থাকে। এসব স্থান থেকেই ডেঙ্গু মশা তৈরি হয়। যারা নিচে কাজ করতে যায়, তাদের ডেঙ্গুটা বেশি হয়।

কখনও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন ভেতরে এসেছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রজেক্টের ভেতরে কখনও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন আসেনি। কোনোদিন বাইরের কাউকে দেখিনি স্প্রে করে যেতে। কোম্পানির উদ্যোগেই মাঝেমধ্যে স্প্রে করা হয়। তবে, চাইলে আরও ভালো পরিবেশ দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।

গোসলের জমা পানিতেও এডিস মশার সংক্রমণ
ঢাকার বেশকিছু নির্মাণাধীন ভবন এবং উন্নয়ন প্রকল্প এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে। যেখানে এডিস মশা জন্মানোর আশঙ্কা থাকে। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৮৬ নম্বর রোডের শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ভেতরে মোটামুটি পরিষ্কার থাকলেও নির্মাণ শ্রমিকদের গোসলের জন্য রাখা পানির স্থানে মেলে ডেঙ্গুর বাহক এডিসের লার্ভা।

সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দায় স্বীকার করে নেন ভবন-সংশ্লিষ্টরা। তবুও গাফিলতির কারণে গুনতে হয় দুই লাখ টাকা জরিমানা। কিছু দূরে আরেকটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন। সেখানেও পাওয়া যায় এডিসের লার্ভা। উত্তর সিটির আভিযানিক দল ভবনের বেজমেন্টের জমা পানিতে এডিসের লার্ভা পান। তাদেরও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
 
নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়া প্রসঙ্গে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার এইমস হাসপাতালের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় গত এক মাসে আমাদের এখানে অনেক ডেঙ্গু রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে বড় একটা অংশই বিভিন্ন প্রজেক্টে কর্মরত শ্রমিক। জ্বর হওয়ার পর পরীক্ষায় তাদের অধিকাংশই ডেঙ্গু পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টের ভেতরে যত মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই এসে পরীক্ষা করছেন। বেশির ভাগই নিজ থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে নিচ্ছেন। মূলত বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের কাছে বেশি আসেন।’

নির্মাণাধীন ভবনগুলো ৪০ শতাংশ এডিস মশার প্রজননস্থল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দেখেছি ৪০ শতাংশ এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্প থেকে। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা পানি থেকে এডিস মশার উৎপত্তি বেশি। কারণ, জায়গাটা সবসময় অন্ধকারে থাকে। এ কারণে খুব বেশি মানুষের নজরে আসে না। এমনকি ওই বেজমেন্ট থেকে যেসব এডিস মশা জন্মায়, সেগুলো আশপাশের বাসাবাড়ির মানুষদেরও আক্রান্ত করে। 

‘কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ে আগে যে লিফটের গর্ত থাকত, সেটা দেখবেন এখন বালু দিয়ে ভরাট করে রাখে। এছাড়া বাসাবাড়িতে চৌবাচ্চা, বালতি, ড্রাম— এগুলো এখন মানুষ মোটামুটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে। কিন্তু বেজমেন্টে কিউরিংয়ের যে পানিটা জমা হয়, সেটার কিন্তু কোনো সলিউশন এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দিতে পারেনি। এরই মধ্যে রিহ্যাবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক হয়েছে। আমরা তাদের বুঝিয়েছি কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রও রিহ্যাবকে বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

‘রিহ্যাবকে আমরা বলেছি, আপনারা যে বিল্ডিংগুলো করেন ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে, সেখানে আপনারা দীর্ঘ সময় ধরে এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র তৈরি করে রাখেন। এ বিষয়ে তখন মেয়র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে এক্সপার্ট ডেকে আপনাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ান। আমিও রিহ্যাবকে বলেছি, দরকার হয় আমি নিজ খরচে গিয়ে আপনাদের কর্মীদের ট্রেনিং দেব, আপনারা আয়োজন করেন। এরপর একটা বৈঠক হলেও পরবর্তীতে রিহ্যাবের কোনো খোঁজ নেই’— অভিযোগ কবিরুল বাশারের।

তদারকিতে সিটি কর্পোরেশনের কোনো গাফিলতি আছে কি না— জানতে চাইলে এই গবেষক বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব মশা নিয়ন্ত্রণ করা। এ বিষয়ে তাদের গাফিলতি অবশ্যই আছে। সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের যেমন দায়িত্ব আছে, একজন ব্যক্তি হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে।

নির্মাণকাজে নজরদারি প্রয়োজন : আবদুস সবুর খান
ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নির্মাণকাজে বেশি বেশি নজরদারি প্রয়োজন— মনে করেন দেশের প্রখ্যাত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগ মূলত যে মশার কামড়ে হয়, সেই মশাকে বলা হয় শহুরে মশা। গ্রামের মশার আবাসস্থলের সঙ্গে শহরের মশার আবাসস্থলের অনেক পার্থক্য। শহরে আমরা দেখি যে খুবই অল্প পানিতে মশাগুলো ডিম পাড়ে এবং জন্মাতে পারে। যেমন- ডাবের খোলা, ফুলের টব। এগুলোতে খুব অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও এর মধ্যে মশা জন্মাতে পারে। গ্রামের মশাগুলো জন্মায় আবদ্ধ পুকুর, ডোবা-নালায়।

‘ঢাকা শহরে দেখবেন প্রতিনিয়ত কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। যখন কাজ হয়, তখন ওই জায়গাটা ঘিরে রাখা হয়। যে কারণে এর ভেতর ড্রামসহ বিভিন্ন কৌটা আর খানাখন্দে পানি জমে। এগুলো খুব বেশি তদারকি হয় না। ফলে ওই সব স্থানে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হয়।’

আমাদের মেয়ররা বাসাবাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। সেখানে তো আপনি সবসময় ঢুকতে পারেন। কিন্তু কনস্ট্রাকশনের জায়গাগুলো তো টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ যায় না, সিটি কর্পোরেশনও যায় না। যে কারণে সবসময় ডেঙ্গু মশা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে— বলেন এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

‘এভাবে তো অভিযান পরিচালনা করে কোনো লাভ নেই। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল (শুক্রবার) রাতে বৃষ্টি হয়েছে। আজও দেখলাম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে। পানিগুলো কিন্তু এক/দুইদিন পর্যন্ত জমে থাকে। ভালো করে দেখবেন, এগুলোতেই কিন্তু মশা ডিম পাড়ে। নতুন নতুন মশা জন্ম নিচ্ছে।’

ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজ দুটি
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোধে দুটি কাজ করে। প্রথমত, হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তৈরি করা। সেই ক্যাপাসিটি আমাদের আছে। আমাদের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছেন, তাদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমরা আপডেটেড রাখছি। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন মৌসুমে আমরা ঢাকা মহানগরীতে সার্ভে করি। সেই রিপোর্ট আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। আমাদের নতুন সার্ভে অনুযায়ী, উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটিতেই সমানভাবে মশার উপদ্রব রয়েছে।

‘ডেঙ্গুর সংক্রমণ তখন বাড়ে, যখন মশার সংখ্যা বাড়ে। অথবা মশাকে মেরে ফেলা না যায়। ডেঙ্গুবাহী মশা যদি কাউকে কামড়ায়, তাহলে তার ডেঙ্গু হতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র সেই রোগীগুলোর খবর পাই, যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন বা ভর্তি হন। আমরা মনে করি, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো। কারণ, হাসপাতালে থাকলে একটা সেবার মধ্যে থাকে এবং মৃত্যুর ঝুঁকিটা কমে যায়। যদি ঘরে থেকে নিজে নিজেই পাড়া-মহল্লা থেকে ওষুধ খায়, তখন বিপদের আশঙ্কা বেড়ে যায়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ পরিচালক বলেন, ‘আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এ সময়ে মশার বংশবিস্তারটাও তাড়াতাড়ি ঘটে। এছাড়া কোভিডের কারণে যেসব কাজ বন্ধ ছিল, এখন সেগুলো পূর্ণগতিতে চলছে। কাজেই স্বাভাবিক যে উন্নয়ন কাজ, সেটা চলবে। মশা তো এ সময়ে একটু বেড়ে যায়, এ কারণে আমাদের বাড়তি সতর্কতা দরকার। মশা কমলে রোগীও কমে যায়।’
 
জরিপে যা পাওয়া গেছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬২টি ওয়ার্ডের মোট এক হাজার ৮৩০টি বাড়ি পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি দল। এসব বাড়িতে তারা মোট এক হাজার ৩৩৭টি ভেজাপাত্র দেখতে পান। প্রায় ২২ শতাংশ ভেজাপাত্রে মশার লার্ভা ছিল। এছাড়া প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িতে মশার লার্ভা পান তারা। মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৮ নম্বর ওয়ার্ড (কমলাপুর ও মতিঝিল), ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড ( নবাবপুর ও বংশাল) এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে (ওয়ারী ও নারিন্দা)।
 
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের মোট এক হাজার ৩১৯টি বাড়ি পরীক্ষা করা হয়। এসব বাড়িতে তারা মোট ৮৬১টি ভেজাপাত্র দেখতে পান। প্রায় ৩০ শতাংশ ভেজাপাত্রে মশার লার্ভা ছিল। এছাড়া প্রায় ১৩ শতাংশ বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যায়। মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড (সেনপাড়া পর্বতা, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া), ২১ নম্বর ওয়ার্ড (মহাখালী), ২৪ নম্বর ওয়ার্ড (বেগুনবাড়ি ও তেজগাঁও শিল্প এলাকা) ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে (আগারগাঁও)।

জরিপকারীরা মেঝে, প্লাস্টিকের ড্রাম, প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্র, প্লাস্টিকের বোতল, ব্যবহৃত টায়ার, ফুলের টব, পানির মিটারের গর্ত, সিমেন্টের পানির ট্যাংক, মাটির পাত্র, পলিথিন, অব্যবহৃত কর্কশিট, ব্যাটারির খোসা, সিরামিকের পাত্র, ফ্লাগস্ট্যান্ডের গর্ত, যানবাহনের অংশ, নারকেলের খোলা, টিনের কৌটাসহ বেশকিছু পাত্র ও স্থানে পানি জমে থাকতে দেখতে পান।
 
টিআই/এসএম/এমএআর