গ্রামে পর্যায়ে ‘পুষ্টিবিদ’ ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ
দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে বেশি পুষ্টিহীনতা থাকলেও উপজেলা-জেলা সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিউট্রেশনিস্ট ও ডায়টেশিয়ান নেই বলে দাবি করেছেন চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের পুষ্টিহীনতা রোধে গ্রামে গ্রামে পুষ্টিবিদ ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ তাদের।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস ফোরামের (বিএনডিএফ) ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, সুস্থ জাতি গঠনে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। শুধুমাত্র শহরে নয় প্রান্তিক পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুষ্টিজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে পুষ্টিবিদ নিয়োগের আহ্বান জানান তারা।
তারা বলেন, অসুস্থতা প্রতিরোধে শুধু ওষুধ নয়, বরং পুষ্টির ওপর জোর দিতে হবে৷ মানুষের মধ্যে
সচেতনতা বাড়াতে হবে। ডাটাবেজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত রোগব্যাধি হলেই ডাক্তারের কাছে যায়, কিন্তু প্রিভেনশনে নজর দেয় না। অধিকাংশ মানুষেরই পুষ্টি নিয়ে কোনো ধারণা নেই। সুস্থ জাতি গঠনে পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। এটা ছাড়া এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) মোকাবিলা করতে পারব না। কোভিডেও যার বাস্তব অবস্থা আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, শুধু শহর কেন্দ্রিক নয়, প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের মধ্যেও পুষ্টিজ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় নিউট্রেশনিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি পুষ্টি নিয়ে অসচেতন, তাই প্রয়োজনে গ্রামে গ্রামে পুষ্টিবিদদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে।
লিয়াকত আলী বলেন, চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসা কাউন্সিল রয়েছে, নার্সদের জন্যও নার্সিং কাউন্সিল রয়েছে, কিন্তু নিউট্রশনিস্টদের কোনো কাউন্সিল নেই। এ কারণে নিউট্রশনিস্টদের নিবন্ধন কার্যক্রম জোরালো নেই। আপনাদের কাজ করতে গিয়ে নানা সময়ে নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে, সেক্ষেত্রে যদি আপনাদের একটি শক্তিশালী কাউন্সিল থাকে, আপনারা যদি নিবন্ধিত হন তাহলে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না।
এ সময় গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহীন আহমেদ বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে বাচ্চাদের মধ্যে বেশি পুষ্টিহীনতা দেখা যায়, তাই এসব বাচ্চাদের নিউট্রিশনে জোর দিতে হবে, নয়ত ভবিষ্যতে আমাদের একটি অসুস্থ জাতি পেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পুষ্টি নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষ সচেতন হলেই পুষ্টিহীনতা রোধ সম্ভব।
এ সময় শাহীন আহমেদ বলেন, আমি রিকশাওয়ালাদের পুষ্টি নিয়ে কাজ করেছি। অধিকাংশ রিকশাওয়ালারাই ভাবেন ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে রোগ। তাদের যখন ডায়াবেটিস নিয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তখন তারা বলে ডায়াবেটিস হলে ডাক্তাররা ভাত খেতে না করে, চিনি খেতে না করে। একটু ভেবে দেখেন, তাদের কতো জ্ঞানের স্বল্পতা! তাদের মধ্যে কোন সচেতনতা নেই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, নিউট্রেশন নিয়ে যদি কাজ করতে হয়, তাহলে দ্রুতই নিউট্রেশনিস্ট কাউন্সিল করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিউট্রেশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস ফোরামকে কাজ করতে হবে। আমার অবস্থান থেকে যতটুকু করণীয় আমি সহযোগিতা করব।
অনুষ্ঠানে চেয়ারপারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনডিএফের সভাপতি শামসুন্নাহার মহুয়া। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক তামান্না চৌধুরী। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক সায়েদা সালেহা সালেহীন সুলতানা, বিশিষ্ট কুলিনারি আর্টিস্ট লবি রহমান। সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিএনডিএফের সহকারী সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী তাসনীম হাসিন। সভাটির সঞ্চালনায় ছিলেন শায়েলা সাবরিন শর্মী এবং নিসাত শারমিন নিশি।
টিআই/এসকেডি