দেশের প্রথম ‘সেন্টার বেইজড’ চিকিৎসা সুপার স্পেশালাইজডে
দেশের প্রথম স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা চালু হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে। বর্তমানে সিঙ্গাপুর, কোরিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা পদ্ধতি চালু থাকলেও এ ধরনের হাসপাতাল দেশে প্রথম।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দেশের সব রোগীরা যাতে দেশেই সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা পান তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ধরে শীঘ্রই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের প্রথম ও একমাত্র ৭৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল এখন শুধু স্বপ্ন নয়, সত্যি। নির্মাণকাজ শেষ, এখন শুধুই উদ্বোধনের অপেক্ষা।
তিনি বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের মডিউলার অপারেশন থিয়েটার থাকবে ১১টি। থাকবে বিভিন্ন বিভাগ, ডিসিপ্লিন নিয়ে কমপক্ষে বিশ্বমানের পাঁচটি সেন্টার। ৫টি সেন্টারের মধ্যে জরুরি বিভাগ, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড, কিডনি ডিজিজ এবং কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট, হেপাটোলজি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং ১০০ বেডের আইসিইউ। ৬৪টি কেবিন থাকবে; এর মধ্যে রয়েছে ৬টি ভিভিআইপি কেবিন, ২৩টি ভিআইপি কেবিন। বাকিগুলো ডিলাক্স কেবিন।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এ হাসপাতালে আরও থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, যেগুলো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত থাকবে। অত্যাধুনিক সিটিস্ক্যান, এমআরআই থেকে শুরু করে সব পরীক্ষা হবে ডিজিটালাইজড এ হাসপাতালে। মৌলিক গবেষণার সুযোগসহ গবেষণার জন্য আলাদা সেন্টার থাকবে। এছাড়াও রোগীদের সুবিধার্থে নতুন সংযোজন যেমন বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন, জিন থেরাপি এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক গবেষণাপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
হাসপাতালটিতে উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ দেশের প্রথম বিশ্বমানের মডেল হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান কর্মরত থাকবেন বলে যোগ করেন উপাচার্য।
সভায় স্বপ্ন ও বিস্ময়ের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন সম্পর্কিত প্রস্তাব সিন্ডিকেটের সব সদস্যদের সর্ব সম্মতিতে নেওয়া হয়।
পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে উপাচার্য আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আরও বেশি করে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ ও জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেছে।
সভায় রোগীদের সুবিধার্থে চিকিৎসাসেবার পরিধি আরও বৃদ্ধি ও সেবার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ডিভিশন খোলা ও ফেলোশিপ চালুর বিষয়ে অনুমোদিত হয়। এরমধ্যে রয়েছে অর্থোপেডিক সার্জারির অধীনে অর্থোস্কোপিক ও অর্থোপ্লাস্টি, স্পাইন সার্জারি এবং হ্যান্ড অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি ডিভিশন খোলা, শিশু বিভাগের অধীন পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রাইনোলজি ডিভিশন খোলা, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের অধীন ভিট্রিও রেটিনা, গ্লুকোমা, কর্ণিয়া, অকুলোপ্লাস্টি, ক্যাটারেক্ট ও রিফ্রেকটিভ সার্জারিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ফেলোশিপ চালু ইত্যাদি। এছাড়া বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স কারিকুলাম এবং এমএসসি ইন নার্সিং কোর্স কারিকুলাম অনুমোদিত হয়।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ, সংসদ সদস্য বেগম ফরিদা খানম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। অর্থায়ন করছে কোরিয়ান সরকারের ইডিসিএফ কর্তৃপক্ষ। এইচডিসি, স্যামসাং, সানজিন এ তিনটি কোরিয়ান কোম্পানি যৌথভাবে হাসপাতালটি নির্মাণ করেছে।
বিএসএমএমইউয়ের উত্তর পাশে ৩ দশমিক ৪ একর জায়গায় এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক বিশেষায়িত (সুপার স্পেশালাইজড) হাসপাতালটি। নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ সুদ এবং যে ঋণ পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে ১৫ বছর। পরবর্তী ৪০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর থেকে দু’ বছর কোরিয়ার ৬ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং ৫০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত থাকবেন। হাসপাতালটিতে রোবটিক সার্জারিরও ব্যবস্থা থাকবে।
টিআই/আইএসএইচ