নির্ণয়ে সময় পাওয়া গেলেও আড়ালেই থাকে জরায়ু ক্যান্সার
নীরবে যেসব রোগ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার একটি জরায়ু ক্যান্সার। এতে আক্রান্ত হলেও অনেক নারী লক্ষণ বুঝতে পারেন না, আবার অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলে গুরত্ব দেন না। এছাড়া সংকোচও এখানে বড় ভূমিকা রাখে।
জরায়ু ক্যান্সারের কারণে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনাগুলোই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
বিজ্ঞাপন
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১০০টিরও বেশি প্রজাতির এইচপিভি আছে। এর মধ্যে দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের কারণে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পরপরই কিন্তু ক্যান্সার হয় না।
গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, জীবাণু প্রবেশের পর ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে। তার মানে হলো এটি নির্ণয়ে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার কিন্তু খুব সহজে নির্ণয় করা যায়। তবে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের মূল সমস্যা হলো এটা শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়। আর এই ক্যান্সারের লক্ষণগুলোকে অনেকেই পিরিয়ডের সমস্যা বলে ভুল করে থাকেন।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি নারীর মৃত্যু হয় জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। আর বছরে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে।
যৌন সংস্পর্শ জরায়ু মুখের ক্যান্সার ছড়ানোর প্রধান কারণ। যৌন সক্রিয় প্রতিটি নারীই তাই এই ঝুঁকির আওতাভুক্ত। যৌন সক্রিয় সকল নারীর দৈহিক মিলন শুরুর তিন বছর পর থেকে পরীক্ষার আওতায় আসা উচিত।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে
• পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা।
• অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা ওজন অনেক বেশি কমে যাওয়া।
• যৌন মিলনের সময় ব্যথা পাওয়া।
• নিম্নাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা
• গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য। হালকা খাবারের পর পেটভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা, ইত্যাদি। পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
• বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া।
• ক্ষুধা কমে যাওয়া।
• অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা।
• মেনোপজ হওয়ার পরও ব্লিডিং হওয়া।
যেকোনো ক্যান্সারই উৎপত্তিস্থল থেকে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দেহে ছড়ানোর পরিমাণ ও অবস্থান অনুযায়ী একে চারটি ধাপে ভাগ করা যেতে পারে।
স্টেজ ১. এই রোগটি যখন শুধুমাত্র জরায়ুতে অবস্থান করে
স্টেজ ২. এই ক্যান্সার যখন জরায়ু এবং জরায়ুর নিম্নদেশের সরু জায়গাটিতে বা সারভিক্সে ছড়িয়ে পড়ে।
স্টেজ ৩. ক্যান্সার যখন জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে,কিন্তু মলদ্বার বা মূত্রাশয়ের বাইরে নয় অর্থাৎ ফ্যালোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয়, যোনিদেশ এবং তার পার্শ্ববর্তী লসিকাগ্রন্থিগুলোতে অবস্থান করে।
স্টেজ ৪. ক্যান্সার তলপেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি আস্তে-আস্তে মূত্রাশয়, মলদ্বার বা বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
বি. দ্র. : এ লেখাতে জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে কেবল প্রাথমিক একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে বুঝতে ও প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এনএফ