ব্রেন এজিংয়ের কারণ ও লক্ষণ
ব্রেন এজিং বলতে মস্তিষ্কে বার্ধক্য চলে আসাকে বোঝায়। যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। এটি শুরু হলে মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে। এক কথায় বললে, ব্রেন শুকিয়ে যাচ্ছে। এই শুকিয়ে যাওয়া কথাটির দুটি মানে হতে পারে। মস্তিষ্কে থাকা কোষগুলো কি নষ্ট হয়ে যায়? নাকি ব্রেনের আয়তন কমে যায়?
ব্রেনের ক্ষয় শুরু হলে কোষের সংখ্যা কিন্তু সেভাবে কমে না। তবে কোষের মাপ ক্রমশ ছোট হতে থাকে। কোষের আয়তন কমতে থাকলে তা সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে মানুষের স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি ও দক্ষতার অংশগুলোকে। এই অংশটি রয়েছে কপালের একদম সামনের অংশে। ফলে মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে শুরু করলে মনে রাখার ক্ষমতা, বিচার ক্ষমতা, কাজের দক্ষতা কমতে থাকে।
বিজ্ঞাপন
এজিংয়ের কারণ
• মস্তিষ্ক যদি কাজ না করে অলসভাবে দিন কাটায়, তাহলে ব্রেন এজিংয়ের প্রক্রিয়াও শুরু হবে অনেক আগে এবং দ্রুত হারে। কিন্তু ব্রেন যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে এজিংয়ের প্রক্রিয়া কিন্তু তুলনায় অনেক ধীর গতিতে হয়। দেখা গেছে, যারা অনেক পড়াশোনা করেছেন বা পেশার কারণে পড়াশোনা বা ফিল্ড ওয়ার্কের কাজে যুক্ত রয়েছেন তাদের এজিং প্রসেস দেরিতে শুরু হয়।
• এজিংয়ের ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণও দায়ী। পরিবারে যদি নিকট আত্মীয়দের মধ্যে অল্প বয়সেই মস্তিষ্কে বার্ধক্য আসার প্রবণতা থাকে তাহলে পরবর্তী জেনারেশনের মধ্যেও সেই ধারা দেখা দিতে পারে।
• এছাড়া মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া এবং হরমোনাল কারণও এজিং প্রসেসকে প্রভাবিত করে। মোট কথা এ কারণগুলো সম্মিলিতভাবে আমাদের এজিং প্রসেসকে এগিয়ে দেয়। তার গতি রোধ করে অথবা স্বাভাবিক গতি বজায় রাখে।
ব্রেন এজিংয়ের লক্ষণ
ব্রেন এজিংয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষণ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কোনো ঘটনা, জিনিস বা কারোর নাম, ঠিক সময়ে ঠিক শব্দটা সহজে মনে পড়তে চায় না। এতে বুঝতে হবে মস্তিষ্কের যে জায়গায় শব্দগুলোর ভাণ্ডার, সেখান থেকে ঠিক সময়ে তা বেরিয়ে আসছে না। এরপর দেখা যায় ছোটখাটো কাজ করতে বেশ সমস্যা হয়।
এর পরবর্তী পর্যায়, খুব সাধারণ কাজ যেমন- কোনো একটা জিনিস বিছানা থেকে টেবিলে সরিয়ে রাখা, এগুলো করতেও অসুবিধা হতে পারে। এ ধরনের কাজ খুব সহজ মনে হলেও এতে কিন্তু চোখ, হাত এবং মাথার কো-অর্ডিনেশনের প্রয়োজন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চোখে দেখে বিষয়টা বুঝে হাত দিয়ে জিনিসটা সরিয়ে রাখতে হয়। ব্রেনের কোষগুলো শুকিয়ে যেতে থাকলে এগুলো করতেও বেশ অসুবিধা হয়।
বয়স্কদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় জায়গার জিনিস জায়গায় রাখতে পারছেন না। বই বা চাবি যেখানে থাকে সেখানে না রেখে অন্য কোথাও রাখছেন। এরই সঙ্গে কমে আসে বিচার ক্ষমতা। কখন কী করা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না। এরই হাত ধরে আসে ডিপ্রেশন। সবার সঙ্গে মেলামেশা বা কর্মক্ষেত্রে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ব্রেনের ক্ষয় যত বাড়তে থাকে এই লক্ষণগুলো ততই প্রকট হতে শুরু করে।
এ লক্ষণগুলো সম্মিলিতভাবে বা দুই-তিনটি একসঙ্গে দেখা গেলে বুঝতে হবে মস্তিষ্কের মনে রাখার অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এই লক্ষণগুলো আবার দুইভাবে দেখা দিতে পারে। সাময়িক এবং স্থায়ী।
সাময়িক স্মৃতিলোপ : কিছু কিছু অসুখ রয়েছে যাতে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যেমন, মাথায় টিউমার, স্ট্রোক, থাইরয়েড, এনকেফেলাইটিস ইনফেকশন জাতীয় অসুখে সাময়িকভাবে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে ভুলে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলোও প্রকাশ পায়। এছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব থেকেও সাময়িক স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।
মানসিক সমস্যা, অত্যধিক স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, হতাশা থেকেও ভুলে যাওয়া, বিচার করার ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। অসুখজনিত কারণে স্মৃতিলোপ হলে তার চিকিৎসা সম্ভব। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে স্মৃতিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
স্থায়ী স্মৃতিলোপ : অসুখের কারণে স্মৃতিলোপ না হলে ভুলে যাওয়ার লক্ষণগুলোকে ব্রেন এজিং বা ব্রেন ডিজেনারেশন বলেই ধরতে হবে। এক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি স্থায়ীভাবে লোপ পায়।
ব্রেন এজিংয়ের সেরকম কোনো চিকিৎসা এখনও নেই। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এজিং প্রসেসের গতি কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।
এমএইএচএস