পুলিশ বাহিনীর দুই লক্ষাধিক সদস্য এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল হয়ে উঠছে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ)। হাসপাতালটি সম্প্রতি আড়াইশ শয্যা থেকে পাঁচশ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে শয্যা বাড়লেও এর বিপরীতে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর ফলে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যায় রূপান্তরিত হওয়া হাসপাতালটিতে পুলিশ ছাড়াও আনসার বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া নিয়মিত জরুরি বিভাগে প্রায় ৩শ জন এবং অন্তঃবিভাগে ৩৫০ থেকে ৫০০ জন রোগী চিকিৎসা নেন।

রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন হাসাপাতালটিতে আসা সেবাগ্রহীতারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যাপ্ত জনবল পেলে আরও বিস্তৃত পরিসরে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে মোট ১৯টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ, ইমার্জেন্সি ও ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু থাকে ২৪ ঘণ্টা। চিকিৎসকদের তিন শিফটে কাজ করতে হয়। এছাড়া প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগসহ আরও কিছু বিভাগে দুই শিফটে কাজ করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

আড়াইশ শয্যা বিবেচনায় হাসপাতালটিতে ১৯ জন মেডিকেল অফিসার, ২০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ১৬ জন সিনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৯০টি। এর বিপরীতে নিজস্ব স্থায়ী চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। আর স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সংযুক্তিতে আছেন ২৫ জন চিকিৎসক। বাকি ৩০টি পদ ফাঁকা রয়েছে।

এদিকে করোনা পরীক্ষা, টিকা কার্যক্রম ছাড়াও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে আলাদা একটি ইউনিট। একইসঙ্গে আগামী দুই মাসের মধ্যে ২০ শয্যার আলাদা একটি ক্যান্সার ইউনিট চালু হওয়ার কথা রয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

নিজস্ব চিকিৎসক ৩৫ জন, আউটসোর্সিংয়ে আছেন ১১১ জন

জানা গেছে, আড়াইশ শয্যা বিবেচনায় হাসপাতালটিতে ১৯ জন মেডিকেল অফিসার, ২০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ১৬ জন সিনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৯০টি। এর বিপরীতে নিজস্ব স্থায়ী চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। আর স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সংযুক্তিতে আছেন ২৫ জন চিকিৎসক। বাকি ৩০টি পদ ফাঁকা রয়েছে।

এর মধ্যে ৫শ শয্যায় উন্নীত হলেও সে অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১১১ জন চিকিৎসক নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালটিতে এখন কর্মরত আছেন ১৭১ জন চিকিৎসক। যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক, বলছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৯ মার্চ ৪২তম বিশেষ বিসিএস থেকে ১৩১ জনকে সারা দেশের পুলিশ হাসপাতালগুলোতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। যা নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালসহ বিভাগীয় ও জেলা পুলিশ হাসপাতালে পদায়ন দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপরও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের জন্য শতাধিক চিকিৎসকের জন্য পিএসসিতে চাহিদা দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে একজন চিকিৎসককে দৈনিক একশ থেকে দেড়শ রোগী দেখতে হয়। যেখানে একজনকে ৩০ থেকে ৪০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত নয়। এভাবে একটি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলতে পারে না। ৫০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে অন্তত তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ চিকিৎসক প্রয়োজন।

সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. এম মনোয়ার হাসানাত খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাসপাতালটিতে সারা দেশ থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন আসেন এবং সেবা নেন। সে হিসেবে খুব কম সংখ্যক জনবল দিয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ হাসপাতাল। নিজস্ব চিকিৎসক এবং নার্সের সংকট থাকায় বর্তমানে চিকিৎসা কার্যক্রমের বড় অংশ চলছে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে। তবে শিগগিরই এ সংকট কেটে যাবে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে দেশের সেরা হাসপাতাল হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের এখানে প্রায় সব ধরনের উন্নতমানের যন্ত্রপাতি রয়েছে। এক কথায় বাংলাদেশের সেরা মেশিনারিজ দিয়ে হাসপাতালটিকে সাজিয়েছি। করোনা সময়ে উন্নত সেবা প্রদানে আমরা ইতোমধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

জনবল সংকটে চিকিৎসা না পাওয়ার দায় আসে চিকিৎসকদের ঘাড়ে

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এই কারণে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার দায় এসে পড়ে চিকিৎসকদের ঘাড়ে।

বিএমএ মহাসচিব বলেন, হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনায় আরও চিকিৎসক নিয়োগ জরুরি।

তিনি বলেন, কয়েকটি বিসিএসের নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে অসংখ্য চিকিৎসক এখনো বেকার। ৪২তম বিশেষ বিসিএস থেকে এক হাজার ৩৮০ জন চিকিৎসক এখনো নিয়োগ পাননি। তাদের হাসপাতালগুলোর শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দিলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার পথ আরও সুগম হবে। একইসঙ্গে এটি একটি মানবিক কাজও হবে।

শূন্য পদে নিয়োগ চান ৪২তম বিসিএসের নিয়োগ বঞ্চিত চিকিৎসকরা

৪২তম (বিশেষ) বিসিএসে অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন চিকিৎসক ডা. আজিজুল আহাদ নিলয়। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পুলিশ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রচুর চিকিৎসকের পদ শূন্য আছে। এদিকে আমাদের ৪২তম বিসিএস থেকে এক হাজার ৩৮০ জন চিকিৎসক এখনো নিয়োগের অপেক্ষায় আছেন। সরকার চাইলে যেকোনো সময় আমাদের নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালগুলোর শূন্য পদ পূরণ করতে পারে। এতে রোগীদেরও সেবা হবে, আর আমরাও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাব।  

প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালে ১১.৫ একর ভূমির উপর ৭০ শয্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। দীর্ঘদিন ধরে জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম স্বল্পতার মধ্য দিয়ে দুর্বল চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলছিল। পরে ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতালসমূহ আধুনিকায়ন (১ম পর্যায়ে ৭টি)’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের মে মাসে এই প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ১০তলা ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। সেই হাসপাতাল এখন পূর্ণ রূপ পেয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজি, ফিজিওথেরাপিসহ মোট ১৯টি বিভাগ চালু রয়েছে।

টিআই/জেডএস