বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (২১%) উচ্চ রক্তচাপে (হাইপারটেনশন) ভুগছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অর্ধেক নারী (৫১%) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ (৬৭%) জানেনই না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। আর এ উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে। 

শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজনে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জুবায়ের। 

তিনি বলেন, এই যে প্রাপ্তবয়স্ক ২১ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, শুধু এটাই কিন্তু তাদের রোগ নয়, এছাড়াও তাদের আরও অন্যান্য অনেক রোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ বিশাল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা কিন্তু সরকারের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। সুতরাং এ জায়গাটিতে আমাদের সচেতন হতে হবে। একইসঙ্গে হৃদরোগ ঝুঁকি তথা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে দেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

ডা. শামীম জুবায়ের বলেন, প্রতিদিন একজন মানুষের ৫ গ্রাম লবণ খাওয়া দরকার। তবে দেখা যায় লবণ গ্রহণের মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ দৈনিক ৯ থেকে ১১ গ্রাম লবণ ব্যবহার করেন। শুধু ভাত-তরকারিতে নয়, না জেনে বাইরের খাবার থেকেও তাদের শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ। যে কারণে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি।

সচেতনতার তাগিদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ১৮ বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই একবার করে ব্লাড প্রেশার মাপা উচিত। এতে যদি তার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে এবং শুরুতেই সে জানতে পারে, তাহলে জীবন যাপন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে।

অনুষ্ঠানে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, দেশে প্রতি ৫ জনে ১ জনের উচ্চ রক্তচাপে ভোগার যে তথ্য উঠে এসেছে, এটি খুবই ভয়াবহ। এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই রোগ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, দেশের সকল উপজেলায় এনসিডি কর্নারে আরও ডায়াবেটিসের চিকিৎসক দরকার। সেগুলোতে পরীক্ষা নিরীক্ষা আর ওষুধপত্রসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা আরও বাড়ানো দরকার।

বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে-২০১৮ অনুযায়ী, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২১ শতাংশ (নারী ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, পুরুষ ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে মাত্র ১৪ শতাংশ, যা প্রতি ৭ জনে একজনেরও কম।

অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল সময়ের মধ্যে ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে এবং নারীর ক্ষেত্রে এ হার ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে এমন নারী এবং পুরুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার যথাক্রমে ৪৯ শতাংশ এবং ৪২ শতাংশ, যেখানে স্বাভাবিক ওজনের নারী এবং পুরুষের মধ্যে এই হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অর্ধেক নারী (৫১ শতাংশ) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষই (৬৭ শতাংশ) জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই (৬৪ শতাংশ) কোনো ওষুধ সেবন করে না। এমনকি বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। দেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদ্‌রোগজনিত অসুস্থতায় মারা যায়, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ লক্ষাধিক মানুষ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করেন, যার প্রায় অর্ধেক হৃদরোগজনিত।

টিআই/এসকেডি