দেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ জানেনই না যে, তাদের এ রোগ রয়েছে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা সচেতনতা ও চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স কনফারেন্স রুমে ‘হাইপারটেনশন অ্যান্ড হার্ট হেলথ’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহায়তায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি পাঁচজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এতে আক্রান্ত ৫১ শতাংশ ও ৬৭ শতাংশই জানে না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

তারা বলেন, রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। অর্থাৎ রক্তচাপের মাত্রা দুটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হলে বুঝতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তবে বয়সভেদে রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেল ও হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে ২০১৮ এর তথ্য তুলে ধরে কর্মশালায় জানানো হয়, ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন প্রতি সাতজনে একজনেরও কম। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চ রক্তচাপ। দেশে উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়,সরকার বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলকভাবে ২৫ শতাংশ কমানোর (রিলেটিভ রিডাকশন) জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সুতরাং সঠিক নিয়মে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

সব হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করতে এ খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।  একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন যেমন : অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করা, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, তামাক ও মদ্যপান পরিহার করা, অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) সৈয়দ মজিবুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনসিডিসি প্রোগ্রাম) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (এনসিডি) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, ডা. মলয় কান্তি মৃধা, জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রুহুল কুদ্দুস, এনটিভির হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জহিরুল আলম ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

উল্লেখ্য, বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সব সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি।

আরএম/আরএইচ