স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। একাধারে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদে গঠিত মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর দিকে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিন্তু সফলতার সঙ্গেই তার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবিলা করছে। টিকা নিয়ে যখন সারাদেশে নানা গুজব ও অপপ্রচার, মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথমে তিনিই টিকা নিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। টিকা নেওয়ার পর অনুভূতি, সমালোচনাকারীদের নানা গুজব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীরুল ইসলাম।

ঢাকা পোস্ট : সারাদেশে টিকা প্রয়োগের দিন আপনি নিজেই শুরুতে টিকা নিয়েছেন, কেমন লাগছে?

জাহিদ মালেক : টিকা নিয়ে একধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল। টিকা নেওয়ার পর আমি কোনো ধরনের অসুস্থতাবোধ করছি না। আমি মনে করি, সকলেরই টিকা নেওয়া দরকার। এতে আপনিও সুরক্ষিত থাকবেন, আপনার পরিবার এবং দেশও সুরক্ষিত থাকবে।

আমি মনে করি, সকলেরই টিকা নেওয়া দরকার। এতে আপনিও সুরক্ষিত থাকবেন, আপনার পরিবার এবং দেশও সুরক্ষিত থাকবে

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য এ টিকা এনেছেন। আশা করি, আপনারা সকলেই টিকা নেওয়ার মাধ্যমে সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।

ঢাকা পোস্ট : টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তো অনেকেই ভয়ে ছিলেন, এখন তো আপনি টিকা নিলেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে যদি কিছু বলতেন…

জাহিদ মালেক : আপনি জানেন, আজ আমিসহ অনেক মন্ত্রী টিকা নিয়েছেন। আজ সারা বাংলাদেশে, সমস্ত জেলা-উপজেলায় টিকা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আশা করি, আজ লক্ষাধিক লোক টিকা গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। একেকজনের কথা শুনেছি। তাদের হাল্কা জ্বর এসেছিল, যা কারও কয়েক ঘণ্টায় বা কারও একদিনেই সেরে যায়। আশা করি, আজ আমাদের টিকা নেওয়ার মাধ্যমে সকলে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। মানুষের জন্যই তো টিকা।

আমরা আজ যারা টিকা নিয়েছি, আমরা সকলেই খুব ভালো আছি, সুস্থ আছি। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

কিছু মানুষ হয়তো নিজেদের স্বার্থের জন্য বিরূপ প্রচার করেন, কিন্তু আমাদের স্বার্থ হলো দেশবাসীকে রক্ষা করা। আমরা চাই এ টিকার মাধ্যমে দেশবাসীকে করোনা থেকে রক্ষা করতে। সেজন্য কোনো ধরনের অপপ্রচারে কান না দিয়ে আমাদের আহ্বানে টিকা গ্রহণ করবেন এবং ভালো থাকবেন।

আমরা আজ যারা টিকা নিয়েছি, আমরা সকলেই খুব ভালো আছি, সুস্থ আছি। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। 

ঢাকা পোস্ট : টিকা নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন? পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা আছে কিনা?

জাহিদ মালেক : আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা রয়েছে। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে আমাদের হাতে ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। সে টিকা আমরা ৩৫ লাখ লোককে দুই ডোজ করে দিতে পারব। যদি এক ডোজ করে দেই, ৭০ লাখ লোককে দিতে পারব। ফেব্রুয়ারি মাসেও আমরা দ্বিতীয় লটের টিকা পাব। তারপর আবার মার্চ-এপ্রিলে পাব, কাজেই কখনই আমাদের টিকার কমতি হবে না।

শহরের ও গ্রামের যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, ডাক্তার, নার্স, মিডিয়াকর্মী, পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য যারা সবসময় বাইরে কাজ করেন, তারা সবার আগে টিকা নেবেন। ৫৫ বয়সের ওপরে যারা আছেন তাদের আহ্বান করব, যে জায়গাতেই থাকুন না কেন আপনারা এসে টিকা নেবেন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

আগামী এপ্রিল-মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাস্ক ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য যে টিকা অনুমোদন করা আছে, সেই টিকাও আশা করি আসতে থাকবে।

করোনার টিকা নিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক | ছবি- ঢাকা পোস্ট

এটি একটি দেশব্যাপী কার্যক্রম, যা সারা বছরব্যাপী চলবে। ইনশাআল্লাহ, টিকার কোনো কমতি হবে না। কাজেই আমরা আহ্বান করব, শহরের ও গ্রামের যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, ডাক্তার, নার্স, মিডিয়াকর্মী, পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য যারা সবসময় বাইরে কাজ করেন, তারা সবার আগে টিকা নেবেন। ৫৫ বয়সের ওপরে যারা আছেন তাদের আহ্বান করব, যে জায়গাতেই থাকুন না কেন আপনারা এসে টিকা নেবেন।

ঢাকা পোস্ট : অনলাইন নিবন্ধনে নানা সমস্যা হচ্ছে, এটা নিয়ে কিছু বলুন...

জাহিদ মালেক : অনলাইনে নিবন্ধন করতে যদি কারও কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আমাদের উপজেলা-ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে এসে নিবন্ধন করবেন এবং সেখান থেকে এসেই টিকা নেবেন। যদি তথ্যকেন্দ্রেও নিবন্ধন করতে না পারেন, তাহলে টিকাকেন্দ্রে আপনাদের জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে, সেখানে এসে নিবন্ধন করে টিকা নিয়ে যাবেন।

ইতোমধ্যে আমাদের হাতে ৭০ লাখ টিকা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেও আমরা দ্বিতীয় লটের টিকা পাব। তারপর আবার মার্চ-এপ্রিলে পাব, কাজেই কখনই আমাদের টিকার কমতি হবে না

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

ঢাকা পোস্ট : টিকা নিবন্ধনের অ্যাপ আসার কথা থাকলেও তা আসেনি। এটা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইসিটি ডিভিশনে একধরনের অসামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

জাহিদ মালেক : অ্যাপ আইসিটি মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে এবং গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি আপলোড করেছে। এটা একটা প্রসেসিংয়ের বিষয়, তাই একটু সময় লাগছে। এখন আপাতত সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন চলছে। ওয়েবসাইটটি আইসিটি ডিভিশনের তত্ত্বাবধানেই চলছে। তারাই এটার দেখাশোনা করছে। নতুন একটা ওয়েবসাইট তৈরি হলে কিছু সমস্যা হতেই পারে। এক্ষেত্রে যখনই যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, আইসিটি ডিভিশনকে আমরা জানাচ্ছি এবং তারা সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে দিচ্ছে। আমরা সবসময় এ বিষয়ে সজাগ আছি। তাদের সঙ্গে সবসময়ই আমাদের যোগাযোগ আছে।

আমরা বলেছি, কোনো কারণে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয়, তাহলে আপনারা টিকাকেন্দ্রে এসে হাতে নিবন্ধন করে নেবেন। পরে আমরা ওই কাগজগুলো আমাদের মূল সার্ভারে এন্ট্রি করে দেব। কাজেই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কোনো সমস্যা নয়, আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছি।

আমরা বলেছি, কোনো কারণে অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয়, তাহলে আপনারা টিকাকেন্দ্রে এসে হাতে নিবন্ধন করে নেবেন। পরে আমরা ওই কাগজগুলো আমাদের মূল সার্ভারে এন্ট্রি করে দেব। কাজেই অ্যাপ বা ওয়েবসাইট কোনো সমস্যা নয়, আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

ঢাকা পোস্ট : অ্যাপ নিয়ে যে জটিলতা, সেগুলো আগেই সমাধান করা যেত কিনা?

জাহিদ মালেক : অ্যাপের বিষয়টা সময় মতো হওয়া দরকার, আগে-পরে কোনো বিষয় নয়। সেটা সময় মতোই হয়েছে, কাজ চলছে।

ঢাকা পোস্ট : অনেক ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য।

জাহিদ মালেক : আপনাকেও ধন্যবাদ।

একনজরে জাহিদ মালেক

জাহিদ মালেক ১৯৫৯ সালের ১১ এপ্রিল মানিকগঞ্জের সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল মালেক ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী। তার মায়ের নাম ফৌজিয়া মালেক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

টিকা নেওয়ার পর ঢাকা পোস্টকে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক | ছবি- ঢাকা পোস্ট  

জাহিদ মালেক স্বপন ১৯৮৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম লি., সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি., বিডি থাইফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি., রাহাত রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন লি., বিডি সানলাইফ ব্রোকারেজ হাউজ লি.-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো মানিকগঞ্জ- ৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু পরাজিত হন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পুনরায় অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। 

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি জাহিদ মালেক বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

জাহিদ মালেকের স্ত্রীর নাম শাবানা মালেক। এ দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

টিআই/এমএআর/