মাহমুদুর রহমান মান্না। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় সাবেক এ ছাত্রনেতা ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) জিএস, ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ছিলেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০০৯ সালে ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিতি পান এবং দলের পদ হারান। এরপর আওয়ামী লীগ ছেড়ে ‘নাগরিক ঐক্য’ নামের দল গঠন করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ চারদলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হন…

‘চরিত্রগতভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকম’ বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বলেন, ‘শুধু এই দল নয়, জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। সব ফোকাস থাকে এক ব্যক্তির ওপর। তবে, জামায়াতসহ বামপন্থী দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা হয়।’ নিজ দল নাগরিক ঐক্যও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে বলে দাবি তার।

আমরা একটা জেলায় কমিটি করে এসেছি, পুলিশ তাদের ভয় দেখায়, তাহলে কীভাবে কাজ করব? এজন্য নাগরিক ঐক্য ততটা দৃশ্যমান হতে পারেনি। কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি স্বপ্ন দেখি, একসময় আমরা ক্ষমতায় যাব। কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্নার দাবি, ‘আওয়ামী লীগের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী’  এছাড়া দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থা, বিরোধী রাজনৈতিক জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়া, নাগরিক ঐক্যের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করা, না করা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আদিত্য রিমন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষটি আজ ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না | ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : গত পর্বে আপনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগে এক ব্যক্তির দিকে সব ফোকাস থাকে। সেক্ষেত্রে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোতে কতটুকু গণতন্ত্রের চর্চা হয়?

মাহমুদুর রহমান মান্না : আমাদের এখানকার সংস্কৃতি হচ্ছে, আমরা রাজাকে মেনেছি, জমিদারকে মেনেছি। দলের মধ্যেও একটা রাজা-জমিদার দেখতে চাই বা দেখতে পছন্দ করি। এজন্য আমাদের এখানে প্রায় সব দল এক ব্যক্তিনির্ভর। গণতান্ত্রিকভাবে যে চর্চাটা, সেটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নাই। সেভাবে কোনো দলই গড়ে ওঠে নাই। প্রতিষ্ঠান যাও হচ্ছিল, সেটাও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ওই কথা বললাম, আমার বিষয়টা বোঝানোর জন্য। আওয়ামী লীগে আমি যতখানি ফোকাস ছিলাম, এখন তার চাইতে বেশি ফোকাস। অনেক বেশি জনপ্রিয়। কারণ, ওই দলে সব ভালো বা সফলতার ক্রেডিট এক ব্যক্তির দিকে চলে যায়।

সময় যত যায় মানুষের জ্ঞান তত বাড়ে, এমনিতেই। আমি বলি, পুত্র অবশ্যই পিতার চাইতে অধিক জ্ঞানী। হবেই, কারণ সে তো আরও আধুনিক সময়ের জ্ঞান নিয়ে আসছে। সেই সময়ের নেতৃত্ব যত যোগ্য ছিলেন, তার চাইতে বর্তমান সময়ের নেতৃত্ব আরও বেশি জ্ঞানী

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

এখন আমাকে যদি বলেন, চরিত্রগতভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেমন? তাহলে বলব, একই রকম। জাতীয় পার্টি কেমন, একই রকম। প্রায় সব পার্টিই একই রকম। তবে, এটা আমার মতামত। আপনি চাইলে লিখতে পারেন। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নাই, বামপন্থী দলগুলোর মধ্যেও এটা নাই। এখন আমাদের দল (নাগরিক ঐক্য) গড়ে উঠছে। এসব দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা আছে। এটা হতে পারে কোনো একটা মানুষ তার কর্মগুণে এত বড় হয়েছেন যে, দলের ওপরে তাকে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাকে আওয়ামী লীগের ‘শেখ মুজিব’  বলার চাইতে বাংলাদেশে ‘শেখ মুজিব’ই হয়ে গেছেন। ব্যক্তিনির্ভরতা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। রাজনীতিতে এটা সেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক চর্চা হয়নি, এটা বিরাট দুর্বলতা যা আমাদের সমাজের মধ্যে আছে।

নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মান্না | ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা পোস্ট : দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন এবং এর শেষ কোথায়?

মাহমুদুর রহমান মান্না : এখন যা চলছে, এটা চূড়ান্ত একটা জায়গায় গিয়ে ভেঙে পড়বে। এটা তো  ভাঙবেই, চিরস্থায়ী হতে পারে না। সেটা কি এক মাস, এক বছর, নাকি তিন বছরে ভাঙবে, সময় বলছি না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, আরেকটা রাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। কিন্তু তারপর যে নতুন কিছু গড়ে উঠবে, সেটা কতখানি ইতিবাচক হবে, তা এখন অনুমান করে বলতে পারব না। এটা নির্ভর করছে ক্ষমতার পরিবর্তনে কোনো ইতিবাচক ফল আনবে কি-না? যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা ইতিবাচক শক্তি কি-না? তাহলেই পরিবর্তন হবে। পৃথিবীর বহু জায়গাতে হয়েছে।

আমাদের এখানেও সম্ভব ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ নেতিবাচক, আক্রমণাত্মক, ফ্যাসিবাদী মনোভাব আর বিরোধীপক্ষের আপসকামী ও ভয়ে কাঁপা দৃষ্টিভঙ্গি; এসব কারণে হচ্ছে না

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

আমরা অনেকে এবার উপলব্ধি করতে পারি নাই, কিন্তু এবার আমেরিকাতে ঘটেছে। আমেরিকার ওই ঘটনায় বোঝা গেল ইনস্টিটিউশন কতটা পাওয়ারফুল (শক্তিশালী)। বাংলাদেশে যদি ওই রকম হতো তাহলে ট্রাম্পের জায়গায় যিনি থাকতেন, তিনি টিকে থাকতেন। কিন্তু আমেরিকাতে পারেননি ট্রাম্প। আমাদের এখানে সেই ইনস্টিটিউশন গড়ে ওঠে নাই। 

আমরা যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্রকে গড়ে তুলতে চাই এবং চেষ্টা করি, তাহলে পারব। সেটা দীর্ঘস্থায়ী এবং টিকে থাকবে। ভারতেও টিকে আছে। এত কিছুর পরও সেখানে গণতন্ত্রকে ভেঙে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই। সেখানে কৃষক আন্দোলনের সামনে ভারত সরকার অসহায় হয়ে গেছে। আমাদের এখানেও সম্ভব ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ নেতিবাচক, আক্রমণাত্মক, ফ্যাসিবাদী মনোভাব আর বিরোধীপক্ষের আপসকামী ও ভয়ে কাঁপা দৃষ্টিভঙি; এসব কারণে হচ্ছে না।

ঢাকা পোস্ট : বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসে যে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিবিদরাই দায়ী। বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে রাজনীতিতে যোগ্যতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতার অভাব আছে। যার কারণে জনগণকে স্বপ্ন দেখাতে বা জাগ্রত করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিরোধী দলগুলো। আপনার মতামত কী?

মাহমুদুর রহমান মান্না : সেই যোগ্যতাসম্পন্ন, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং মানুষকে জাগ্রত করতে পারে, স্বপ্ন দেখাতে পারে— সেরকম নেতা দেখছেন না। আপনার পর্যবেক্ষণ আপনার জায়গা থেকে ঠিক আছে। যখন আপনি বলছেন..., সেরকম করে কেউ দেখাতে পেরেছেন; সেজন্যই তিনি জয়যুক্ত হয়েছেন, এটা আওয়ামী লীগের কথা। তারা যেকোনোভাবেই শেখ মুজিবকে দেবতার কাছে নিয়ে যেতে চান। দেবী বটের কাছে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু রিয়েলিটি-টা (বাস্তবতা) কী? বাস্তবতা হচ্ছে, এত ভোট পাওয়ার পরও সেই বড় সেনাপতি, যিনি যত কম রক্তে বিজয় অর্জন করতে পারেন কিন্তু তিনি সেটা তো পারেন নাই। তিনি মনে করেছিলেন পাকিস্তানের শাসনে যেতে পারবেন, প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। সেটা তিনি হতে পারেন নাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান আক্রমণটা করেছে, তখন আমরা দিক-নির্দেশনাহীন ছিলাম।

আমেরিকার ওই ঘটনায় বোঝা গেল ইনস্টিটিউশন কতটা পাওয়ারফুল (শক্তিশালী)। বাংলাদেশে যদি ওই রকম হতো তাহলে ট্রাম্পের জায়গায় যিনি থাকতেন, তিনি টিকে থাকতেন। কিন্তু আমেরিকাতে পারেননি ট্রাম্প। আমাদের এখানে সেই ইনস্টিটিউশন গড়ে ওঠেনি

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

রাজপথের আন্দোলন, বক্তব্য রাখছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না | ছবি- সংগৃহীত

কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই তাদের মতো প্রচার করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দেখেন, মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট বাঙালি ব্রিগেডিয়ার মজুমদার (অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার), তিনি তার ডায়েরিতে কী লিখেছিলেন? এ কে খন্দকার, যিনি মন্ত্রী ছিলেন, তিনি তার বইতে কী লিখেছিলেন? তাজউদ্দিনের ডায়েরিতে কী আছে? ওই সময় তারা একেবারে হতবুদ্ধি ছিলেন। তো, কী স্বপ্নের কথা বলছেন? সোনার বাংলার স্বপ্ন যে বলছেন, সেটা একটা স্লোগানের মতো, সোনার বাংলা গড়ব। কিন্তু কীভাবে? সেটা তিনি বলেন নাই।

এটা তো ভাঙবেই, চিরস্থায়ী হতে পারে না। সেটা কি এক মাস, এক বছর, নাকি তিন বছরে ভাঙবে, সময় বলছি না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, আরেকটা রাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে পারবে না তারা

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

একটা কথা আছে, সময় যত যায় মানুষের জ্ঞান তত বাড়ে, এমনিতেই। আমি বলি, পুত্র অবশ্যই পিতার চাইতে অধিক জ্ঞানী। হবেই, কারণ সে তো আরও আধুনিক সময়ের জ্ঞান নিয়ে আসছে। সেই সময়ের নেতৃত্ব যত যোগ্য ছিলেন, তার চাইতে বর্তমান সময়ের নেতৃত্ব আরও বেশি জ্ঞানী। আজ যিনি রাজনীতি করছেন, যিনি ছাত্র। ধরেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়— দুই জায়গাতেই নেতৃত্ব দিয়েছি। তখন আমাদের যে জ্ঞান ছিল, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র আইটির (তথ্যপ্রযুক্তি) কারণে যত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, সেটা আমি নিজেও পারি না। তাই বলব, এখনকার নেতারা অনেক বেশি স্বপ্ন দেখাতে পারছেন, বাস্তবে করেও দেখাতে পারছেন। কিন্তু এখনকার নেতারা যেটা পারছেন না, সেটা হলো... তারা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে জীবনবাজি দিয়ে লড়াই করে বিজয় অর্জন করতে। প্রশ্ন শুধু ওই জায়গাতে।

চরিত্রগতভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেমন? তাহলে বলব, একই রকম। জাতীয় পার্টি কেমন, একই রকম। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নাই, বামপন্থী দলগুলোর মধ্যেও এটা নাই

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

সেই সময় আমরা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছি, কোনো সফলতার গল্প আছে? আমি তো দেখি না। কিন্তু এখন আমাদের তো দুর্ভিক্ষ হচ্ছে না। এত বড় প্যানডেমিক (মহামারি), কতজন মানুষ না খেয়ে মারা গেছে? ইউরোপ, আমেরিকা যত বড় সংকটে পড়েছে, আমি তো তত বড় সংকটে পড়ি নাই। হতে পারে এখানে আল্লাহর রহমত ছিল বলেই এত বেশি আক্রমণ হয়নি করোনাভাইরাসের। সেভাবে মানুষ মরে নাই। আমাদের অর্থনীতি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। হয়েছে, দারিদ্র্যের হার চূড়ান্ত জায়গায় গেছে। অর্ধেকের বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। তারপরও কিন্তু আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এখন কেউ কি আগের তুলনা করতে চায়? এটাই আমি বুঝি। শেখ মুজিব কত বড় ছিলেন? নিশ্চয়ই শেখ মুজিব অনেক বড় নেতা ছিলেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। স্বাধীনতা তার নেতৃত্বে অর্জিত, তিনি থাকুন বা না থাকুন, হয়েছে। কিন্তু তার মতো আজ পর্যন্ত কেউ হতে পারেননি, এটা হতে পারে নাকি!

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না | ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : নাগরিক ঐক্য নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? রাজনীতিতে নাগরিক ঐক্যের অবস্থান বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছে বলে মনে করেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না : আগে বলা হতো রাজনীতি মানে রাজার নীতি। আমি মনে করি, রাজনীতি মানে রাজ্যের নীতি। রাজ্যে বাস করে বেশির ভাগ প্রজা। সেই প্রজার নীতি, প্রজার কল্যাণ সবচেয়ে ভালো কীভাবে হয়, দেশটা কীভাবে ও কতখানি অগ্রগতি সাধান করতে পারে, অর্থাৎ কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণায় আমরা বিশ্বাস করি।

আমাদের এখানকার সংস্কৃতি হচ্ছে, আমরা রাজাকে মেনেছি, জমিদারকে মেনেছি। দলের মধ্যেও একটা রাজা-জমিদার দেখতে চাই বা দেখতে পছন্দ করি। এজন্য আমাদের এখানে প্রায় সব দল এক ব্যক্তিনির্ভর

মাহমুদুর রহমান মান্না, আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্য

নাগরিক ঐক্য ক্ষমতায় গেলে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণাটা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি বলে মনে করি। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে আমরা খুব সহজ ভাষায় বলি, কল্যাণকর রাষ্ট্র মানে যে রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণটাকে বড় করে দেখে। সেরকম রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, এটা তো না বোঝার কিছু নাই। দলের জন্য যে কাজকর্ম করেছি, সেখানেও বেশ অগ্রগতি আছে।

গত ২৪ জানুয়ারি আমরা গণঅভ্যুত্থান দিবস পালন করেছি। খুবই ভালো প্রোগ্রাম হয়েছে, অন্য কেউ করেনি। এর আগে নূর হোসেন দিবস পালন করেছি, সেটাও ভালো হয়েছে। তবে, বাইরে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা একটা জেলায় কমিটি করে এসেছি, পুলিশ তাদের ভয় দেখায়, তাহলে কীভাবে কাজ করব? এজন্য নাগরিক ঐক্য ততটা দৃশ্যমান হতে পারেনি। কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি স্বপ্ন দেখি, একসময় আমরা ক্ষমতায় যাব। কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব।

এএইচআর/এমএআর/