বিদায়ের প্রহর গুনছে হুদা কমিশন
আর মাত্র পাঁচ দিন; নতুন কমিশনের আগমনী বার্তায় বিদায়ের প্রহর গুনছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মেয়াদের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেবেন সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চার কমিশনার। তাদের অধীনে পরিচালিত হবে পরবর্তী সব নির্বাচন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ও পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে সিইসি হিসেবে আরও আট থেকে ১০ জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে সবকিছু চূড়ান্ত করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বিজ্ঞাপন
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ও পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে সিইসি হিসেবে আরও আট থেকে ১০ জনের নাম আলোচনায় রয়েছে
এছাড়া কমিশনার পদের জন্য ১৫ থেকে ২০ জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনার পদে বিগত দুটি কমিশনের মতো এবারও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সাবেক জেলা জজ, সিভিল প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা ও এক নারী সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত ১২ জন সিইসি ও ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিতে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন কমিশন কেমন হওয়া উচিত— এমন প্রশ্নের জবাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে গত দুটি কমিশন গঠনে মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথমে রকিব উদ্দিন কমিশন, এরপর হুদা কমিশন গঠন করা হয়। ওই দুই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে।’
‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটা তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। একই সঙ্গে জনগণের ভোটাধিকারও হরণ করেছে। যেখানে জনগণের ভোটাধিকারের আমানতকারী হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা আমানতের খেয়ানত করেছে।’
বদিউল আলম মজুমদারের মতে, ‘এই প্রক্রিয়া জাতি হিসেবে আমাদের এখন মহাসংকটে ফেলে দিয়েছে। এটা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের অনুসন্ধান কমিটিকে সত্যিকার অর্থে অনুসন্ধান করতে হবে। তাদের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। তারা যেন কথিত রাজনৈতিক দলের চতুরতার শিকার না হন।’
সুজন সম্পাদকের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলোর চতুরতার শিকার হয়ে অনুসন্ধান কমিটি বারবারই একই নাম প্রস্তাব করছে এবং সত্যিকার অর্থে তারা (অনুসন্ধান কমিটি) কোনো অনুসন্ধান না করে যাদের নাম বেশি আসছে তাদের নামই সুপারিশ করেছে। ফলে অনুসন্ধান কমিটি তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।’
নাগরিকদের কাছ থেকে নাম নেওয়ার সুযোগ অনুসন্ধান কমিটির আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে বলা আছে, ‘রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করিতে হইবে।’ অন্যদের কাছ থেকে পারবে না— এমন তো নয়। তার মানে, নাগরিকদের কাছ থেকেও নাম নিতে পারবে। তবে, এখানে অস্পষ্টতা আছে। অনুসন্ধান কমিটি নাগরিকদের কাছ থেকে নাম চেয়েছে কি না? যদি না চেয়ে থাকে তাহলে এটা আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।
‘রাজনৈতিক দলের বাইরেও অনুসন্ধান কমিটির নাম চাওয়া উচিত এবং সত্যিকারের অনুসন্ধান করে নামের তালিকা প্রকাশ করা উচিত। একই সঙ্গে যাদের নামের তালিকা এসেছে, তাদের নিয়ে গণশুনানিও করা উচিত।’
নতুন কমিশনের প্রতি বার্তা দিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘নতুন কমিশনকে সত্যিকার অর্থে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। কোনো দলের পক্ষে নয়, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার যাতে হরণ না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
যেভাবে গঠন হয় হুদা কমিশন
নতুন ইসি গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা দেওয়া হয় সার্চ কমিটিকে।
১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে চার দফা বৈঠক করে। প্রথম বৈঠকে কার্যপরিধি ঠিক করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচটি করে নাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
দ্বিতীয় বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া ১২৫টি নাম থেকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি এবং তৃতীয় বৈঠকে ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সর্বশেষ বৈঠকে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পর ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দেয় সার্চ কমিটি। ওই দিনই নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারগণ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
এসআর/এমএআর/