কাস্টমসে ৪৭১৯ মামলার জট, আছে আশারও সংবাদ
মামলার জটে হিমশিম খাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। এনবিআরের কাস্টমস ও ভ্যাট সংক্রান্ত আপীলাত ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে চার হাজার ৭২৯টি মামলা। মামলার জটে আটকে আছে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।
তবে আশার কথা হলো- এনবিআরের নতুন কিছু উদ্যোগ সম্প্রতি মামলার নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়িয়েছে। যেখানে আগে মাসে একশর মতো মামলা নিষ্পত্তি হতো, সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে মামলার নিষ্পত্তি বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ।
বিজ্ঞাপন
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল চার হাজার ৭২৯টি মামলা। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ছয় হাজার ৬২৬টি মামলা। যদিও ডিসেম্বরের শুরুতে অনিষ্পত্তি মামলার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ১৩০টি। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বর মাসেই ৫০০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে আরও ৯৯টি মামলা দায়ের হয়েছে
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল চার হাজার ৭২৯টি মামলা। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ছয় হাজার ৬২৬টি মামলা। যদিও ডিসেম্বরের শুরুতে অনিষ্পত্তি মামলার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ১৩০টি। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বর মাসেই ৫০০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে আরও ৯৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। অর্থাৎ মামলার প্রবণতা থেকে মুক্তি মিলছে না প্রতিষ্ঠানটির।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাণিজ্যিক পর্যায়ে, সরকারি-বেসরকারি আমদানি কিংবা উৎপাদনকারী ও সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ও শুল্ক-করাদি অপরিশোধিত থাকার ঘটনা নিয়ে ৩০ বছরের পুরোনো মামলাও তালিকায় রয়েছে। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে মামলার সংখ্যা।
২০১২ সাল থেকে পুরোনো ও নতুন মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও তাতে তেমন গতি আসেনি। এজলাস ও জনবল সংকটের কারণে গৃহীত কার্যক্রম প্রসারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তবে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, আদালতের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া অর্থাৎ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআরের দিকে জোর দিলেও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না আমরা— বলেন ওই কর্মকর্তা।
বাণিজ্যিক পর্যায়ে, সরকারি-বেসরকারি আমদানি কিংবা উৎপাদনকারী ও সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ও শুল্ক-করাদি অপরিশোধিত থাকার ঘটনা নিয়ে ৩০ বছরের পুরোনো মামলাও তালিকায় রয়েছে। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে মামলার সংখ্যা
এডিআর কী
আদালতের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্পসময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর বলা হয়। যেখানে করদাতার মামলার খরচ ও সময় দুটিই বাঁচে। আবার সরকারও দ্রুত রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়। আপিল, ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। এনবিআর মনোনীত একজন নিরপেক্ষ সহায়তাকারীর মধ্যস্থতায় করদাতা ও কর বিভাগের প্রতিনিধিদের মতৈক্যের ভিত্তিতে সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চুক্তি হয়। এক্ষেত্রে মামলাটি যে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে বিচারাধীন, সেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এডিআর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হয়।
মামলা নিষ্পত্তির জন্য করদাতাকে বিরোধীয় করের ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন দুই হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা) ফি দিতে হয়। এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হতে সর্বোচ্চ সময় লাগে ৯০ দিন। এডিআরে মতৈক্য না হওয়ার ক্ষেত্রে করদাতা পুনরায় আদালতে ফিরে যেতে পারেন। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশের কর প্রশাসনে এ পদ্ধতি চালু হয়েছে।
এদিকে, পুরাতন মামলা নিষ্পত্তিসহ সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। যার মধ্যে ২০১২ সালে কাস্টমসের করা মামলা চার বছর এবং ভ্যাটের করা মামলা দুই বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে নিষ্পত্তিতে গতি এসেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আপীলাত ট্রাইব্যুনালে চারটি বেঞ্চ গঠন করায় মামলা নিষ্পত্তিতে গতি পেয়েছে। এনবিআরের সদস্য পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা আপীলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সঙ্গে আছেন চারজন কাস্টম কমিশনার ও চারজন জেলা জজ। এস এম মো. হুমায়ুন কবির বর্তমানে আপীলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মামলার নিষ্পত্তি বেড়েছে— দাবি করে হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়েছে। মাসে আমাদের কমপক্ষে ৫০০টি মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য রয়েছে। সেজন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটা হলো- কোনোক্রমেই যেন আদালতের বেঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ না হয়।
আপীলাত ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে মোট চারটি বেঞ্চ রয়েছে। কাস্টমসের একজন ও বিচার বিভাগের একজনের সমন্বয়ে বেঞ্চ গঠিত হয়। আগে যেমন দুই সদস্যের বেঞ্চের একজন বিচারক অসুস্থ বা অন্য কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে বেঞ্চ বসত না। এখন একজন অসুস্থ থাকলে তার বিকল্প একজন উপস্থিত থাকেন। অর্থাৎ বেঞ্চের কার্যক্রম নিয়মিত চলছে।
মামলা নিষ্পত্তির জন্য করদাতাকে বিরোধীয় করের ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন দুই হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা) ফি দিতে হয়। এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হতে সর্বোচ্চ সময় লাগে ৯০ দিন। এডিআরে মতৈক্য না হওয়ার ক্ষেত্রে করদাতা পুনরায় আদালতে ফিরে যেতে পারেন
এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের বারবার চিঠি, ইমেইল কিংবা ফোন করে মামলার দিন উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যাও বেড়েছে।
এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে মাসিক সমন্বয় সভায় মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি মামলার নিষ্পত্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পাশাপাশি এডিআর-কে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করারও নির্দেশনা দেন।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে কাস্টমস, এক্সাইজ, ভ্যাট, আয়কর ও বন্ড-সংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আটকে আছে।
আরএম/এসএসএইচ/এমএআর/