ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ / ফাইল ছবি

তিন মাসের অধিক সময় ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। কিন্তু বর্তমানে এই রাজনীতিবিদের শারীরিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র কী— তা জানেন না জাতীয় পার্টির নেতারা। এমনকি তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানেন না।

অভিযোগ রয়েছে, রওশন এরশাদের সঙ্গে ব্যাংককে থাকা তার ছেলে সাদ এরশাদ জাতীয় পার্টির নেতাসহ রওশন এরশাদের সরকারি ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে অনাগ্রহী। মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ হলেও মায়ের শারীরিক অগ্রগতি বা অবনতি সম্পর্কে খুব বেশি জানাতে উৎসাহ দেখান না। ফলে, রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র দেশে অবস্থানরত দলীয় নেতাকর্মী ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কাছে নেই।

চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। দিনদিন তার শরীরে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আজ একটি রোগ ভালো হচ্ছে তো কাল আবার নতুন করে আরেকটির উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ফলে, অধিকাংশ সময় তাকে আইসিইউতে থাকতে হচ্ছে

জাতীয় পার্টি ও রওশন এরশাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা বলছেন, যতটুকু জানা যাচ্ছে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। দিনদিন তার শরীরে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আজ একটি রোগ ভালো হচ্ছে তো কাল আবার নতুন করে আরেকটির উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। ফলে, অধিকাংশ সময় তাকে আইসিইউতে থাকতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে আইসিইউ থেকে কেবিনে হস্তান্তর করা হলেও এক-দুই দিনের বিরতিতে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। তখন আবার তাকে আইসিইউতে নিতে হচ্ছে।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংকক যাওয়ার সময় রওশন এশাদের সঙ্গে তার ছেলে সাদ এরশাদ / ছবি- সংগৃহীত

মৃত্যুর আগে একই অবস্থা হয়েছিল জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। তখন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কেবিন আর আইসিইউতে আনা-নেওয়া করা হতো— বলেন তারা।

রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সাদ এরশাদের সরাসরি কথা হয় না। তবে, কয়েক দিন আগে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে জানতে পেরেছি রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই। তেমন কোনো উন্নতি নেই।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজেও গত ১৫ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) তিনি করোনামুক্ত হন। তার কাছে রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ব্যাংককের হাসপাতালের চিকিৎসকদের মোবাইল নম্বর তো আমার কাছে নেই। ফলে, চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ করাও সম্ভব নয়। তবে, আমার সঙ্গে সাদ এরশাদের কথা হয়। বর্তমানে রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।’

তিনি আরও বলেন, রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও সেটা খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। বয়স ও অন্যান্য রোগ মিলিয়ে তার শারীরিক উন্নতির অবস্থা খুব বেশি স্থিতিশীল নয়।

রওশন এরশাদ বর্তমানে হাসপাতালের কেবিনে নাকি আইসিইউতে আছেন— জানতে চাইলে জি এম কাদের তা জানাতে পারেননি।

রওশন এরশাদের সুস্থতা কামনা করে নেতাকর্মীদের দোয়া প্রার্থনা / ছবি- সংগৃহীত

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে এরিক এরশাদ ঘোষিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। বর্তমানে এই অংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। তার দলের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা কী— জানতে চাইলে বিদিশা বলেন, ‘উনার অবস্থা আগের চাইতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’

রওশন এরশাদ এখন হাসপাতালের কেবিনে নাকি আইসিইউতে আছেন— জানতে চাইলে বিদিশাও প্রকৃত তথ্য জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘রওশন ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা এই ভালো, এই খারাপ। ফলে, উনাকে কখন আইসিইউতে নেওয়া হয় আবার কখনও কেবিনে স্থানান্তর করা হয়, এটা বলা মুশকিল।’

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মামুন হাসান। তার কাছে রওশন এরশাদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই গত কয়েক দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত। সাদ এরশাদের সঙ্গেও আমার কথা হচ্ছে না। এ কারণে উনার (রওশন এরশাদ) বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা নেই।’

ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদক গত এক সপ্তাহে একাধিকবার ব্যাংককে অবস্থানরত সাদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যানের দাবি, সাদ এরশাদ জাপার নেতাদের কারও ফোন ধরেন না। শুধুমাত্র দলের চেয়ারম্যান চাচা জি এম কাদেরের ফোন ধরেন। সেটাও নিয়মিত না।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে রওশন এরশাদ / ফাইল ছবি

ওই নেতা আরও বলেন, জি এম কাদের কিছুদিন আগে রংপুরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে বলেছিলেন, আগামীতে সংসদ নির্বাচনে তিনি রংপুর-৩ আসন থেকে প্রার্থী হবেন। যেই আসনে এরশাদ মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন সাদ এরশাদ। ওই বক্তব্যের পর থেকে চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক আরও কিছুটা অবনতি ঘটেছে।

এদিকে, এরিক এরশাদ ঘোষিত জাতীয় পার্টির এক নেতার দাবি, জাপার নেতারা রওশন এরশাদের খোঁজ রাখেন না। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পার্টি থেকে প্রকাশিত পোস্টার থেকে রওশন এরশাদের ছবিও বাদ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে জি এম কাদেরের সঙ্গে সাদ এরশাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রওশন এরশাদকে থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে ১৪ আগস্ট ফুসফুসে জটিলতা দেখা দিলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বেশ কিছুদিন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কেবিনে নেওয়া হয়।

হাসপাতালে থাকাকালে আবারও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতাল থেকেই ব্যাংককে নেওয়া হয় রওশন এরশাদকে।

এএইচআর/এমএআর/আইএসএইচ