দেশবিরোধী প্রচারকদের সেবা দেবে না কানাডার হাইকমিশন
কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যারা দেশবিরোধী প্রচারণায় অংশ নেবেন তাদের কনস্যুলার সেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অটোয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং টরন্টোর কনস্যুলেট জেনারেল।
‘বিদেশে বসে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক রাষ্ট্রবিরোধী কাজে অংশ নিচ্ছেন তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’— মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের এমন মন্তব্যের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এমন ঘোষণা এলো। দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। হাইকমিশন জানায়, অটোয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং টরন্টোর কনস্যুলেট জেনারেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারসহ দেশের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের আপত্তিকর প্রচারণায় জড়িতদের কোনো প্রকার কনস্যুলার পরিষেবা দেওয়া হবে না।
বিজ্ঞাপন
হাইকমিশনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকা পোস্ট যোগাযোগ করে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমানের সঙ্গে। টেলিফোন আলাপে হাইকমিশনার বলেন, ‘আপনি দেশের পাসপোর্ট নিয়ে অন্য একটা দেশে এসে নিজ দেশের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, এটা তো ঠিক নয়। দেশের সার্ভিস পেতে হলে আপনাকে সেভাবে আচরণ করতে হবে। অন্য একটা দেশে এসে নিজ দেশের ইমেজ খারাপ করবেন, এটা হতে পারে না।’
‘আমরা কোনো ক্রিমিনালকে (অপরাধী) সার্ভিস না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবেন, তাদের আমরা সার্ভিস দেব না। যে দলেরই হোন না কেন, ডিসেন্ট বাংলাদেশিদের আমরা সার্ভিস দেব’- বলেন হাইকমিশনার খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কেউ যেকোনো দল করতে পারেন। সবাই তো এক দলের সমর্থন করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। সবাইকে সরকারি দল করতে হবে— এমনও কোনো কথা নেই। তাই বলে দেশের পাসপোর্ট নিয়ে অন্য দেশে এসে রাজনীতি করাটাও সমীচীন নয়।’
খলিলুর রহমান বলেন, ‘আপনার যদি একান্তই রাজনীতি করার ইচ্ছা হয়, দেশে গিয়ে করুন, বিদেশে কেন? এতে আমাদের দেশের বদনাম হয়। দেশের উন্নয়নে প্রভাব পড়ে। বিদেশিরা আমাদের দেশ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করেন। ফলে আমাদের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।’
‘যারা বিদেশের মাটিতে বসে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন তারা সবার শত্রু’ উল্লেখ করে হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখুন, তাদের বেশিরভাগই ক্রিমিনাল (অপরাধী)। তারা কোনো না কোনো অপরাধ করে বিদেশে এসেছেন। এখন বিদেশে বসে দেশের বদনাম করছেন। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা শুধু দেশের শত্রু নয়, সবার শত্রু। কারণ, তারা সবার ক্ষতি করেন।’
এমন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বাতিল করা উচিত বলেও মনে করেন হাইকমিশনার। বিদেশের মাটিতে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে কীভাবে দেশের ক্ষতি হয় সেই ব্যাখ্যাও দেন হাইকমিশনার। বলেন, ‘একটা লোক যখন বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন ওই দেশ সম্পর্কে তিনি যে দেশে থাকছেন সেই দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটা খারাপ ইমেজ তৈরি হয়। এতে বাণিজ্য ও ট্যুরিজম সেক্টর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই দেশের নাগরিকরা মুখ ফিরিয়ে নেন। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চান না। ফলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
‘আমরা আমাদের নাগরিকদের সবরকম সেবা দিতে সদা প্রস্তুত। তবে যারা ডিসেন্ট ও ভদ্র বাংলাদেশি তাদের সেবা দেব’— বলেন কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশনার।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক জানান, যারা বিদেশে বসে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন তাদের পাসপোর্ট যাতে বাতিল হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় আমরা পরামর্শ দিয়েছি। তাদের তালিকা প্রস্তুত করে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কারা করছে, কী কী করছে— সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে ব্রিফিংয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও একই তথ্য জানান। তিনি জানান, বিদেশে বসে যারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে- এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করছে- এগুলো রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কার্যক্রম। সুতরাং কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কার্যক্রম করে বা যুক্ত থাকে, রাষ্ট্র তার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে।’
‘সেই সিদ্ধান্ত গতকাল (বুধবার) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় নেওয়া হয়েছে। কারা এগুলো করছে, আমরা অনেকটা জানি। আরও কারা কারা এর সঙ্গে যুক্ত আছে প্রয়োজনে তাদেরও তালিকা করা হবে’- বলেন মন্ত্রী।
তালিকায় কারা আছেন— জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি এখানে বলার বিষয় নয়। কারা এগুলো করছে তা আমরা জানি, আপনারাও জানেন। অনেক লোক এ কাজগুলো করছে। কিন্তু চিহ্নিত কয়েকজন আছে, যারা ক্রমাগতভাবে এ কাজগুলো করে যাচ্ছে।’
এনআই/এমএআর/জেএস