‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’
নিবন্ধন করেও টিকা নিচ্ছেন না, কঠোর হচ্ছে সরকার
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখনও টিকা নেননি ৯০ লাখেরও অধিক মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা মজুত আছে। নিবন্ধন করেও অনেক মানুষ টিকা নিতে আসছেন না।
কেন টিকা নিচ্ছেন না— জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠপর্যায়ে করোনা টিকার ব্যাপারে সঠিক তথ্য মানুষ পাচ্ছেন না। তারা জানেনই না কখন টিকা নিতে হবে। এছাড়া করোনার প্রকোপ কমে আসায় মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহও কমে গেছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন সাত কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬১ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধন করেছেন সাত কোটি ২৪ লাখ ১৪ হাজার ২৭৭ জন। পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করেছেন ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮৪ জন।
এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ছয় কোটি ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৩০ জনকে। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন তিন কোটি ৭৮ লাখ ২৯ হাজার ৪২০ জন। অর্থাৎ নিবন্ধন করেও এখনও টিকা নেননি ৯০ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩১ জন
এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ছয় কোটি ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৩০ জনকে। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন তিন কোটি ৭৮ লাখ ২৯ হাজার ৪২০ জন। অর্থাৎ নিবন্ধন করেও এখনও টিকা নেননি ৯০ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩১ জন।
আরেকটি ঢেউ আসবে, টিকাই ভরসা : ডা. মুশতাক হোসেন
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। করোনার নতুন নতুন ঢেউ যেগুলো আসছে, সেগুলো পূর্ববর্তীগুলোর চেয়ে অধিকতর শক্তি নিয়ে আঘাত হানছে। সবমিলিয়ে আমরা যেহেতু বুঝতে পারছি করোনার আরেকটি ঢেউ আসবেই, এখন আমাদের লক্ষ্য হলো যেন মৃত্যুর সংখ্যাটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারি।
‘আমাদের করণীয় সেই আগের মতোই। আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। শনাক্ত হওয়া প্রতিটা রোগীকে আমরা আলাদা করে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসব। সেই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে।’
মুশতাক হোসেন বলেন, টিকা প্রয়োগে আমরা এখনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বহু দূরে রয়েছি। যেভাবে টিকার কার্যক্রম চলছে, এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এই বছরের শেষ নাগাদ ৪০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবেন। সেটা কিন্তু যথেষ্ট হবে না। কারণ, ৬০ ভাগ মানুষ টিকার বাইরেই থাকবেন। যাদের মধ্যে বয়স্কসহ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষও থাকছেন।
সংক্রমণ কমলেও বলা যাচ্ছে না ঝুঁকি নেই : ডা. আবু জামিল ফয়সাল
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের আসলে টিকা প্রয়োগের হার খুবই কম। আমরা যদি ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারতাম, তখন হয়তো একটু দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারতাম যে সংক্রমণ ততটা ঝুঁকিতে নেই। কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে ২০ শতাংশের কিছু ওপরে মানুষকে প্রথম ডোজের টিকার আওতায় আনতে পেরেছি। দুই ডোজ হিসাব করলে সেটি আরও কম হবে।
‘এই অবস্থায় আমাদের করণীয় হলো দ্রুততম সময়ে শতভাগ টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করা। কারণ, একজন মানুষও টিকার বাইরে থাকলে পরবর্তীতে তিনি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন। এর বাইরে একমাত্র অবলম্বন হলো স্বাস্থ্যবিধিসহ সামাজিক রীতিগুলো পালন করা। সেগুলো হলো- হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।’
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখন প্রতিনিয়তই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসছে। সারা পৃথিবীতে আগে যেমন প্যানডেমিক বা অতিমারি ছিল, এখন সেটা হয়ে যাচ্ছে এন্ডেমিক। এর মানে, রোগটি এই থাকবে, আবার থাকবে না। এই বাড়বে, আবার কমে যাবে; ঠিক যেন ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। উত্তর-পশ্চিমা দেশগুলোতে ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য প্রতি বছরই একটি করে ভ্যাকসিন নেওয়া হয়। কারণ, দেখা যায় যে সারা বছরই ইনফ্লুয়েঞ্জা পরিস্থিতি ঠিক আছে, কিন্তু শীতকালে একটু বেড়ে যায়। তাই শীত আসার সময় যেন এর সংক্রমণ না বাড়ে, সে লক্ষ্যে প্রত্যেকে একটি করে ভ্যাকসিন নিয়ে নেন। করোনাভাইরাসও এই অবস্থায় চলে এসেছে।
টিকায় আগ্রহ কম, তবে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এত দিন মাস্ক না পরলে সরকারি কোনো সংস্থায় সেবা মিলত না। তবে এখন সেবা নিতে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণও বাধ্যতামূলক হচ্ছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, এখনও অনেকেই টিকা নেননি। অনেকের টিকা নিতে আগ্রহ কম। এ কারণে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ নিয়ম চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে আমাদের স্লোগান ছিল ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। এখন থেকে আমরা বলতে যাচ্ছি ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’। এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেব।
মন্ত্রী বলেন, টিকা আমাদের বড় হাতিয়ার। অনেকেই টিকা নিতে আসছেন না। আমি তাদের আহ্বান করব, আপনারা সবাই টিকা নিতে আসুন। আমাদের হাতে এখনও চার কোটি টিকা মজুত আছে। আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা টিকা গ্রহণ করবেন; নিরাপদ থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
গতকাল শনিবার (৪ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সারাদেশে আজ নয় লাখ চার হাজার ১৭৯ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আট লাখ ৯৯ হাজার ৫১০ শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৮৬ হাজার ৬৩৭ জন।
শিক্ষার্থীসহ এদিন প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ছয় লাখ ৪২ হাজার ৬৩৫ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৫৪৪ জনকে।
টিআই/এমএআর/