‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বললেও কাজে পূর্ব পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নীতিতে বিশ্বাসী’— এমন দাবি করেছেন গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার পুরনো আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তারা এখন গণবিরোধী একটি দল।’

সম্প্রতি গুলশানের বাসভবনে ‘গণ অধিকার পরিষদ’-এর কার্যক্রম, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ রাজনীতির নানা প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আদিত্য রিমন।

ঢাকা পোস্ট : দল ঘোষণার কথা বলে আপনারা কয়েক দফা তা পিছিয়ে দেন। শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করে দল ঘোষণার কথা বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পল্টনে দলের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণ অধিকার পরিষদের ঘোষণা দেওয়া হলো। এর কারণ কী?

ড. রেজা কিবরিয়া : মূলত দুটি কারণে আমাদের দল ঘোষণা করতে দেরি হয়েছে। একটা হচ্ছে, সাংগঠনিক কিছু বড় কাজ আছে যেগুলো আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, আমরা হল (অনুষ্ঠানের জায়গা) পাচ্ছিলাম না। কেউ হল বুকিং দিতে চাচ্ছিল না। কারণ, বর্তমানে হলের ভেতরে মিটিংয়ের জন্য সরকারের লিখিত অনুমতির দরকার হয়। যদিও এটি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রত্যেক নাগরিকেরই অধিকার আছে কথা বলার। কিন্তু বাংলাদেশের সবাই এখন ভয় পান। হল-মালিকরা ভয় পান। তারা পুলিশের লিখিত অনুমতি ছাড়া হল ভাড়া দিতে রাজি হন না। যদিও পুলিশ সরাসরি কোনো বাধা দেয় না, আবার লিখিত অনুমতিও দেয় না।

ড. রেজা কিবরিয়া

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ছেড়ে রেজা কিবরিয়া গণফোরামে যোগ দেন। দলটির সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন। কিন্তু তাকে ঘিরে গণফোরামে বিরোধ দেখা দিলে চলতি বছরের (২০২১ সাল) ৭ ফেব্রুয়ারি দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সেমিনারে দেখা গেলেও গত ২৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নিয়ে ‘গণ অধিকার পরিষদ’ নামের নতুন দলের ঘোষণা দেন রেজা কিবরিয়া। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া (শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল কিবরিয়া) আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছেলে রেজা কিবরিয়া সেই পথে না চলে ভিন্ন পথ বেছে নেন।

গণফোরাম ছেড়ে নুরুল হক নুরের সঙ্গে ‘গণ অধিকার পরিষদ’ গঠন করেন ড. রেজা কিবরিয়া / ছবি- ঢাকা পোস্ট

প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করেছি পুলিশের অনুমতির জন্য। তারা অনুমতি দেবে না, এটাও ফরমালি বলে না। এমন চালাকি তারা করেছে। পরবর্তীতে হল ভাড়া না পেয়ে কার্যালয়ে দল ঘোষণা করতে হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : আগামী নির্বাচনে (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) আপনারা অংশ নেবেন কি না, নিলে জোটগতভাবে নাকি এককভাবে?

ড. রেজা কিবরিয়া : আমরা অবশ্যই নির্বাচনে প্রার্থী দেব। কিন্তু দুই বছর পর আসলে কেমন পরিস্থিতি দাঁড়ায়, সেটা এখন বলা কঠিন। সময় এলে দেখব আমরা কোনো জোট করব নাকি এককভাবে নির্বাচন করব। এ বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব, এটা নিশ্চিত।

ঢাকা পোস্ট : এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন লাগে। বর্তমানে নিবন্ধন পাওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি গণ অধিকার পরিষদের আছে কি না?

ড. রেজা কিবরিয়া : প্রত্যেক জেলায় দলের কমিটি গঠন হয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয় নেতাদের চূড়ান্ত অনুমোদন দরকার। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের জন্য কী কী শর্ত প্রযোজ্য, সেগুলো আমাদের জানা আছে। ইতোমধ্যে সেই শর্তগুলোর ওপর কাজও হয়েছে। আমরা যদি সব শর্ত পূরণ করতে পারি তাহলে নিবন্ধন না পাওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

গত ২৬ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের দল ‘গণ অধিকার পরিষদ’ / ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা পোস্ট : আপনার দলের ২১ দফায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকারপ্রধান একই সঙ্গে দলীয়প্রধান হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের (১০ বছর) অধিক সরকারপ্রধান কিংবা পাঁচ মেয়াদের (১০ বছর) বেশি দলীয়প্রধান বা অন্য কোনো পদ বা একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটার বাস্তবায়ন সম্ভব কি না?

ড. রেজা কিবরিয়া : এটা তো অন্যান্য দেশে আছে। তবে সব দেশে এমন নিয়ম কার্যকর হয়েছে, এমনও নয়। আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মানসিকতা। যারা দলীয়প্রধান আছেন, তারা কোন নীতিতে চলবেন, তাদের চেতনা কী— সেটার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। বাংলাদেশে ৫০ বছর ধরে পরিবারতন্ত্র কেন্দ্রিক রাজনীতি চলছে। আমার মনে হয় না যে দেশের সব মানুষ এতে খুশি। এ কারণে আমরা একটু ভিন্নভাবে দল পরিচালনা করতে চাচ্ছি। যদিও সময়ের ব্যবধানে এটা আমাদের প্রমাণ দিতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : আপনার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আপনি সেই দলে না গিয়ে শুরুতে গণফোরাম, এখন নতুন দল গঠন করলেন। আসলে আপনার রাজনৈতিক লক্ষ্য কী?

ড. রেজা কিবরিয়া : আমি কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও (ওবায়দুল কাদের) এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমি কখনও আওয়ামী লীগ করি নাই। তার ওই বক্তব্য সঠিক। আওয়ামী লীগে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

গণ অধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী / ছবি- সংগৃহীত

গণফোরামে যোগ দিয়েছিলাম মূলত ড. কামাল হোসেনকে দেখে। উনাকে অনেক আগে থেকেই চিনি, তাই ভেবেছিলাম ওই দলে থাকাটা ভালো। কিন্তু পরে দেখি গণফোরামে যারা আছেন তারা ঠিক গণতান্ত্রিক অধিকারের মূল যে জিনিস ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সেখানে নাই। তারা নির্বাচনমুখী দল নয়। এ কারণে সেখান থেকে সরে এসে নুরসহ (নুরুল হক) অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নতুন দল করেছি।

বর্তমান আওয়ামী লীগ আর ৯৬-এর আওয়ামী লীগ এক নয়। তারা তাদের পুরনো আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। তারা এখন গণবিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের মুখে এখন বঙ্গবন্ধু, কাজে আইয়ুব খান। তারা আর মধ্যপন্থী দল নয়। তারা এখন মানুষের অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করে না, উল্টো অধিকার খর্বে ব্যস্ত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যা করেছে, সারাদেশে তারা ভোটচোর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

জনগণ তাদের (আওয়ামী লীগ) ভোটচোর বলে ডাকে। এটা তারা কীভাবে সহ্য করে আমি বুঝি না। ক্ষমতায় থেকে তারা টাকার পাহাড় বানিয়েছে। হয়তো এটাই তাদের (আওয়ামী লীগ) সান্ত্বনা দেয় যে জনগণ ঘৃণা করলেও তাদের প্রচুর টাকা আছে।

ঢাকা পোস্ট : দেশে নির্বাচন হয় মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেন্দ্রিক। আপনারা যদি জোটবদ্ধ রাজনীতি করেন, তাহলে কোন জোটে যোগ দেবেন?

ড. রেজা কিবরিয়া : নির্বাচনের (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এখনও দুই বছর বাকি। এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। দুই বছর পর কেমন পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তখন আমরা বসব। ওই সময়ের পরিস্থিতি তো ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে মাত্র কয়েকটি দলই ক্ষমতায় এসেছে। রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতন হয়। ৪৭ সালে যে দল বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল, আমাদের বাবা-দাদারা যে দলের জন্য যুদ্ধ করেছেন, যে দলের পক্ষে ছিলেন, সেই দলটা এখন মোটামুটি বিলুপ্ত। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ যে কাজগুলো এখন করছে, জনগণের সঙ্গে যেভাবে প্রতারণা করছে, তারাও এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ বিরাট একটা রাজনৈতিক শূন্যস্থান রেখে দিয়েছে। আমরা মনে করি, ওই শূন্যস্থান পূরণের জন্য আমাদের ভালো একটা সুযোগ রয়েছে। মধ্যপন্থী দল হিসেবে আমরা সেই সুযোগ নিতে চাই। আওয়ামী লীগ এখন আর মধ্যপন্থী দল নয়, তারা ফ্যাসিস্ট স্টাইলে রাজত্ব কায়েম করেছে।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যোগদানের দেড় বছরের মাথায় দলটি ছাড়েন রেজা কিবরিয়া / ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা পোস্ট : গণ অধিকার পরিষদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের জায়গাটা কোথায়? সেটা অর্জনে আপনারা কতটুকু সফল বলে মনে করেন?

ড. রেজা কিবরিয়া : মাত্র কিছুদিন হলো আমরা দল গঠন করেছি। আগামীতে আমরা মানুষের কাছে যাব। তাদের কাছে তো আমাদের ম্যাসেজটা পৌঁছাতে হবে। তবে, এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি, জনগণের ভালো সাড়া পাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও সাড়া মিলবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হওয়া। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই সেই স্থানে যেতে পারব।

ঢাকা পোস্ট : দেশে এত এত রাজনৈতিক দল থাকতে কেন মানুষ গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হবে, কেন এ দলকে সাপোর্ট করবে?

ড. রেজা কিবরিয়া : আমরা পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। আমরা স্বৈরাচারী শাসনেও বিশ্বাস করি না। আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এক সময় আওয়ামী লীগও এ ধরনের কথা বলত। এখন তারা উল্টো পথে হাঁটছে। আওয়ামী লীগ এখন পরিবারতন্ত্র ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাস করে না।

টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানীর মাজারে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা / ছবি- সংগৃহীত

আমরা কিন্তু ভিন্ন মতের মানুষদের কথা বলতে দেব। কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেব না। এমন অধিকার সবার থাকা উচিত, কারণ এটা তো মুক্ত দেশ। কিন্তু এ মুহূর্তে আমরা মুক্ত নই। বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়, অ্যাকশন নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আমাদের দলের অনেকে জেলে গেছেন। তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ঘটনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি, আমরা কত পিছিয়ে গেছি।

অনেক ক্ষেত্রে দেশ এগিয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে পিছিয়েছে। আইয়ুব খানের সময় রাজনৈতিক কারণে মানুষকে যখন জেলে নিত, তখন তাদের খুব সম্মানের সঙ্গে রাখা হতো। বন্দীদের ঠিক মতো খাবার দেওয়া হতো। ভালো জায়গায় রাখা হতো। শারীরিক নির্যাতন কিংবা ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো না। আওয়ামী লীগের নেতারাও ৭০-এর আগে এ ধরনের ঘটনার কথা (নির্যাতন) কখনও বলেননি, আমরাও শুনিনি। এখন জেলে যারা যান বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হন। আইয়ুব খানের আমলে খুব সহজেই মানুষের জামিন হতো। এখন ছোটখাটো ব্যাপারে, মিথ্যা মামলায়ও জামিন পাওয়ার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ও পুলিশ মিলে এমন অদ্ভুত এক মামলা করে যে…, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা রাস্তা বন্ধ করেছে, সেখানে ৫০০ জনের নামে মামলা হয়। সেই মামলায় যে কাউকে আসামি করা যায়। আর একবার জেলে ঢুকলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।

ঢাকা পোস্ট : বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামীর নির্বাচন হোক। কেউ কেউ আবার জাতীয় সরকার চান। আপনারা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছেন। আসলে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আপনার দল অংশ নেবে?

ড. রেজা কিবরিয়া : একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক— এটা কিন্তু সবাই চাই। এখন কীভাবে সেই সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, সেটা নির্ধারণে কারও কোনো আইডিয়া (ধারণা) নাই। আমরা কিন্তু বিএনপির প্রস্তাবেও সমর্থন জানাই। একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কয়েকটি নির্বাচনে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ফল দিয়েছে। যারা হেরেছে তাদের কিছুটা আপত্তি ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফল সবপক্ষ মেনে নিয়েছে।

বরিশালে গণ অধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা / ছবি- সংগৃহীত 

আরেকটা সমাধান হলো, জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আ স ম আব্দুর রব (জেএসডি সভাপতি) এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। এটাও ভালো প্রস্তাব। আর তৃতীয়টি আমাদের। সেটা হলো, জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন হোক। যেসব দেশে যুদ্ধের জন্য, স্বৈরাচারী শাসকের জন্য সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা বা নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে জাতিসংঘ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। জনগণের এমন দাবি উঠলে সংস্থাটি নির্বাচনের দায়িত্বও নিতে পারে। কিন্তু কোনো স্বৈরাচারী সরকার চাইবে না জাতিসংঘ এখানে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক। আমরা আশা করি, আমাদের সেনাবাহিনীও এ কাজে তাদের (জাতিসংঘ) সহায়তা করবে।

বর্তমান সরকার যদি তিন প্রস্তাবের কোনোটিই মেনে না নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা আন্দোলনে যাব।

ঢাকা পোস্ট : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আপনি। সেই নির্বাচনে ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেনের অংশগ্রহণ না করা এবং তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগসাজশের অভিযোগ প্রসঙ্গে কী বলবেন?

ড. রেজা কিবরিয়া : আমি তখন কিন্তু নেতৃত্বের পর্যায়ে ছিলাম না। শুধু একজন প্রার্থী ছিলাম। ওই সময় অনেক ঘটনার কথা শুনেছি। সেগুলো নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো। কারণ, শোনা কথার ওপর মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমার যুক্তি বলে, নির্বাচনে সবার অংশ নেওয়ার দরকার ছিল। কিছু ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা স্বীকার করি। কিন্তু নির্বাচনে যাওয়াটা প্রয়োজন ছিল। কারণ, আওয়ামী লীগ যে ভোটচোর, এটা কিন্তু প্রমাণ হয়েছে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে।

বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও রেজা কিবরিয়া বেছে নেন ভিন্ন পথ / ছবি- সংগৃহীত 

২০১৪ সালে তো অনেক দল তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেনি। ১৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশে এখন যেমন পরীক্ষা ছাড়া পাস হয়, তখন তারা পাস করেছেন ভোটছাড়া। ২০১৮ সালেও তারা (আওয়ামী লীগ) একই জিনিস করেছে, তবে সেটা অন্য স্টাইলে। আওয়ামী লীগের আসল চেহারাটা কী, সেটা উন্মোচনের জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার দরকার ছিল আমাদের। তারা ২০১৮ সালের ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন করেছে, (কেন ২৯ ও ৩০ তারিখ বলছি, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন) ওই নির্বাচনের কারণেই মানুষ তাদের ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা একেবারে নামিয়ে দেওয়ার জন্য এটার দরকার ছিল।

ঢাকা পোস্ট : আপনার দল কখনও যদি রাষ্ট্রক্ষমতা যায়, সেক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেবেন?

ড. রেজা কিবরিয়া : আমাদের দল ঘোষিত ২১ দফায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা ও ভোটের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সব মানুষের স্বার্থে আমাদের দেশ পরিচালিত হবে। কয়েকজন কোটিপতি বা বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, তাদের সম্পদ আরও বাড়ানোর জন্য সরকার পরিচালিত হবে না।

অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু তাদের স্বার্থ রক্ষায় নিজ দেশের স্বার্থ খর্ব করা হবে না। অনেক বিদেশি শক্তি আছে, তারা মনে করে যে তাদের স্বার্থেই আমাদের দেশের রাজনীতি পরিচালিত হবে; বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেটা করছে। আমরা সেটা করব না। দেশের মানুষের স্বার্থে, তাদের কল্যাণেই দেশ পরিচালিত করব।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার নেই বললেই চলে। ধনীরা আরও ধনী হয়েছে, গরিব আরও গরিব হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের শক্ত পদক্ষেপ থাকবে। আমি নিজে ৩৫টি দেশের বাজেটের ওপর কাজ করেছি। একটি দেশের বাজেট ও ব্যাংকিং খাতকে কীভাবে কোটিপতি ও একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ থেকে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়, সেটা আমার জানা আছে। সুযোগ পেলে সেই কাজটি আমি করতে পারব।

তরুণ নেতৃত্বে আস্থা রাখছেন গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া / ছবি- ঢাকা পোস্ট

এ দেশের ক্ষুদ্র কোনো নৃগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হবে— এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। আওয়ামী লীগ সরকার এখন যেটা করছে। তারা বিভিন্ন সময় নাটক সাজায় মূলত বিদেশি একটি শক্তিকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য। এগুলো আমরা বন্ধ করব।

সন্ত্রাসবাদ আমরা খুবই শক্ত হাতে দমন করব। একজনের নামে আরেকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, যেটা সমগ্র পৃথিবীতে হয়, বাংলাদেশেও যেটা এখন বেশি দেখা যাচ্ছে; এটা কোনোভাবেই আমরা মেনে নেব না।

ঢাকা পোস্ট : প্রার্থী হিসেবে আপনারা কাদের মনোনয়ন দেবেন, নতুন দল হিসেবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব কি না?

ড. রেজা কিবরিয়া : প্রার্থী হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি। এছাড়া আমাদের দলের যে প্রার্থী তালিকা, সেখানে অন্যান্য দলের প্রার্থীদের চেয়ে তাদের বয়সটা একটু কম। আমাদের অনেক তরুণ নেতা আছে। একটা জিনিস খেয়াল করবেন, ৬০-এর দশকে আমাদের দেশে যেসব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাদের মতো ছেলেরা এখন আমাদের দলে আছে।

অধিকার থেকে স্বাধীনতা, যত আন্দোলনই বলুন সবকিছু কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হয়েছে। এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ। আমরাও এখন তাদের ওপর ভরসা রাখছি। আমাদের দলের সবচেয়ে শক্তিশালী ফোর্স হচ্ছেন তারা। আমি মনে করি সামনের সংসদে তাদের উপস্থিতি থাকবে বেশ।

এএইচআর/এমএআর/