গেল অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) ফলাফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ২৪তম। চার বছর আগে এপিএ-তে টানা দুবার ‘সেরা মন্ত্রণালয়’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় মন্ত্রণালয়টি। হঠাৎ কেন এমন অধঃপতন? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সাত কারণে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। টানা দুবার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এ মন্ত্রণালয়কে কড়া বার্তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ...

বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গত ৭ জানুয়ারি তাদের দায়িত্বগ্রহণের দুই বছর পূর্ণ হয়। কতটুকু সফল হয়েছেন এ জুটি— এ নিয়ে গত বছর গণমাধ্যমের সামনে এলেও এবার তারা আসেননি।

তবে কোন মন্ত্রণালয় কতটুকু সফল, তার মাপকাঠির একটি প্যারামিটার হলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রকাশিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি- এপিএ। মন্ত্রণালয়টি চার বছর আগে এপিএ-তে টানা দুবার ‘সেরা মন্ত্রণালয়’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সেই মন্ত্রণালয় গত দুই বছর ধারাবাহিকভাবে পিছিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫২টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এপিএ-তে শিক্ষার অবস্থান ২৪তম।

২০১৯-২০ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ’ ৫১টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে ৮১.৯২ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে ২৪তম অবস্থানে গিয়ে ঠেকেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বিভাগের কাজের বাস্তবায়নের হার ছিল ৮১.৬৮ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ অর্থবছরে (২০১৭-১৮) কাজের বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে শীর্ষে অবস্থান করে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাবছর কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরগুলো কী কী কাজ করবে, তার একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা সরকারপ্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়। যা ‘এপিএ’ নামে পরিচিত। এ দলিলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব বা সচিব, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী প্রতিনিধি হিসেবে সই করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল | ছবি- সংগৃহীত
যেসব মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে তাদের সতর্ক করে চিঠি দিচ্ছি। অন্যদিকে যারা ভালো করার পরও এখন খারাপ করছে, তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত তা সমাধানের চাহিদাপত্র দিচ্ছি

যুগ্ম সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, অর্থবছর শেষে সরকারপ্রধানের কাছে অঙ্গীকারনামার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৫২টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ৮১ দশমিক ৯২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ২৪তম অবস্থানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ মন্ত্রণালয়টি চার বছর আগে টানা দুবার সেরা মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সাতটি প্রধান কারণে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো- পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রে চরম অনীহা থাকা; দুর্বল মূল্যায়ন পদ্ধতি; পদস্থ কর্তা-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজের সমন্বয়হীনতা; নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকা বড় কারণ। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গতানুগতিক মনোভাব এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতি অনীহা।

এদিকে কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সেগুলোতে গতি আনতে শিক্ষার দুই বিভাগের সচিবকে তাগিদপত্র দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আধা-সরকারিপত্রে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দুই বিভাগের আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে।

এপিএ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে দ্রুত এগুলো সমাধানের আহ্বান জানান তিনি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের করুণ অবস্থার জন্য কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পদস্থ কর্তা-কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়হীনতার বিষয়টি স্বীকার করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপিএ’র মূল্যায়নের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এবার যেসব সূচকে অগ্রগতি শূন্য ছিল সেগুলোসহ শিক্ষার সবগুলো সেক্টরে আগামীবার শতভাগ সফলতা দেখাতে হবে— এ মর্মে সব দপ্তরপ্রধানকে সতর্ক করে দিয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল | ছবি- সংগৃহীত

দীপু মনি-নওফেলের দুই বছর

সরকারি নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে এপিএ মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হয়। এরপর টানা দুই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ‘সেরা’অবস্থান নিশ্চিত করে। কিন্তু বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ডা. দীপু মনি ও মহিবুল হাসান চৌধুরী।

গত ৭ জানুয়ারি তাদের দায়িত্বগ্রহণের দুই বছর পূর্ণ হয়। দায়িত্বগ্রহণের দুই বছর পূর্তিতে এবার মন্ত্রণালয়টি সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাদের কাজের কোনো ফিরিস্তি তুলে ধরতে পারেনি। যদিও দায়িত্বগ্রহণের প্রথম বছর বেশকিছু সফলতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।

করোনার মধ্যেও বছরের প্রথমদিনে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে ৩৫ কোটি বই তুলে দেওয়া হয়েছে। সব স্তরে ভর্তির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটা কয়টা মন্ত্রণালয় করতে পেরেছে? দুই বছরে আমরা শতভাগ সফল, এটা বলব না। তবে চেষ্টা করছি

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ’ ৫১টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে ৮১.৯২ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে ২৪তম অবস্থানে গিয়ে ঠেকেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বিভাগের কাজের বাস্তবায়নের হার ছিল ৮১.৬৮ শতাংশ। তার আগের বছর অর্থাৎ বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ অর্থবছরে (২০১৭-১৮) কাজের বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে শীর্ষস্থানে চলে আসে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কাজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ৭৯টি কর্মসম্পাদন সূচকের মধ্যে ৫২টিতে শতভাগ অর্জন করেছে এবং ১৪টি সূচকে কোনো কাজ হয়নি।

বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম দুই বছরেই ‘সেরা’ তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা’ এবং ‘কারিগরি ও মাদরাসা’ শিক্ষা বিভাগ। বিভাগটি এপিএ-তে সর্বশেষ ৩১তম অবস্থানে আছে।

যে কারণে ছিটকে পড়ল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

করোনার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম থমকে যায়। এপিএ-তে যে ক্যাটাগরিতে নম্বর দেওয়া হয় তার বেশির ভাগ ক্যাটাগরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো নম্বর পায়নি। ২০১৯-২০ সালে তিনটি পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলে একটিও হয়নি। এতে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের নম্বর পায়নি মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে করোনার কারণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়ধীন বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজ ছিল বন্ধ।

আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্পে (পর্যায়-২) কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কারণে এপিএ-তে দেওয়া টার্গেট পূরণ করা যায়নি। প্রকল্পটি তাদের এপিএ-তে এক লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষককে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বললেও মন্ত্রণালয়ের চাপে তড়িঘড়ি করে কিছু শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণের নামে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকা তছরুপের প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এখানে এপিএ’র নম্বর পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা খাতে উচ্চতর গবেষণার জন্য এপিএ চুক্তিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের শেষে এসে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণক দেখাতে পারেনি সংস্থাটি। এখানেও নম্বর কমেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্নমন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যেতথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(আইসিটি) বিভাগ ৯৮ দশমিক৯৭ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নকরে শীর্ষে অবস্থান রয়েছে। এপিএ মূল্যায়নেএবারও সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে গৃহায়ন ওগণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ৯৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে শীর্ষে অবস্থান রয়েছে। এপিএ মূল্যায়নে এবারও সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরও জানায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চলতি বছর ৩৬ কোটি বই ছাপানো ও বিতরণের টার্গেট দিলেও তারা ৩৫ কোটির মতো বই ছেপেছে। এর কারণ হিসেবে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘একটি হিসাব ধরে আমরা ৩৬ কোটি বই ছাপানোর এপিএ চুক্তি করেছিলাম। পরবর্তীতে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী বই ছাপানো হয়। যে কারণে সংখ্যার তুলনায় প্রকৃত চাহিদায় বইয়ের কিছু গরমিল হয়।’

এর বাইরে বেশ কয়েকটি সূচকের অবনতির কারণে স্কোর কম পেয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। অন্যদিকে কারিগরি সেক্টরে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিভাগটি। এজন্য কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ এবার সাতটি সূচকে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল | ফাইল ছবি

অধিদপ্তর-দপ্তরওয়ারী কাজের খতিয়ান

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবগুলো অধিদপ্তর, দপ্তর ও সংস্থার ২০১৯-২০ অর্থবছরের কাজের বাস্তবায়নের হার নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নিজস্ব মূল্যায়ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শতভাগ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) তাদের কাজ করেছে ৬৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ; শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ কাজ করেছে; ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কাজের বাস্তবায়নের হার শতভাগের ৩৩ শতাংশ।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কাজ করেছে ৬০ দশমিক ৭৯ শতাংশ; জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কাজের বাস্তবায়ন ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ; বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো কাজ করেছে ৫২ দশমিক ৯১ শতাংশ; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ কাজ করেছে; প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্ট ৪৯ দশমিক ৩০ শতাংশ কাজ করেছে; পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ করেছে; বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশ; বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ করেছে।

মন্ত্রিপরিষদের কড়া বার্তা

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে যেসব মন্ত্রণালয় বারবার সরকারে নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় টানা দুবার কাজের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাদেরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নির্দেশে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ মন্ত্রণালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং কারণ জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মসম্পাদন নীতি ও মূল্যায়ন অধিশাখার যুগ্ম সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপিএ মূলত একটি প্রতিযোগিতা। এখানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা হবে— এটাই আমরা আশা করি। তবে যেসব মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে তাদের সতর্ক করে চিঠি দিচ্ছি। অন্যদিকে যারা ভালো করার পরও এখন খারাপ করছে, তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত তা সমাধানের চাহিদাপত্র দিচ্ছি

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপিএ রিপোর্ট দিয়ে পুরো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের মূল্যায়নের সুযোগ নেই। এপিএ-তে সর্বোচ্চ ৫০-৫২ ক্যাটাগরির কাজের মূল্যায়ন হয়। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকশ ক্যাটাগরির কাজ করে। যা এপিএ রিপোর্টে আসে না।

তিনি বলেন, দুই বছরের মধ্যে গত এক বছর তো করোনার মধ্যে পার করেছি। এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার স্বাভাবিক অনেক কাজ হয়নি। ফলে এপিএ’র স্কোর স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ৯৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন করে শীর্ষে অবস্থান করছে। এপিএ মূল্যায়নে এবারও সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টি এবার ৬৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ কাজ করে সবার নিচে অবস্থান করছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সবগুলো মন্ত্রণালয়/বিভাগের অর্জন গড়ে ৮২.০৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৮৬.০৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৮৬.৭৩ শতাংশ।

এনএম/এমএআর/ওএফ