ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে ‘দুরবস্থা’
• ৭৫ শতাংশ মালামাল আনতে হবে ভারত থেকে
• প্রকল্পের ভবন নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত
• দুটি বৈদ্যুতিক লাইন অপসারণে ৮ কোটির আবদার
• আড়াই বছরে পিডি নিয়োগ ছাড়া হয়নি কোনো কাজ
• দুই অর্থবছরে খরচ হয়নি ঋণের কোনো অর্থ
ভারতীয় ঋণ ও ঋণের আওতায় চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতি। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ঋণের অধীন নেওয়া প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ সময়মতো আলোর মুখ না দেখায় বাড়ছে ব্যয়, থাকছে দুর্নীতির সুযোগও। এমন একটি প্রকল্প হলো- ‘কক্সবাজার, নোয়াখালী, যশোর ও পাবনা মেডিকেল কলেজকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীতকরণ’। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত। সময় শেষ হতে চললেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ০.১ শতাংশ। ফলে উঠেছে সংশোধনী প্রস্তাবনা। প্রস্তাবনায় প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হয়েছে তিন হাজার ৫২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পের এমন দুরবস্থা-কে ‘হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
এলওসি ঋণ প্রকল্পের এমন দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঋণের টাকায় মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় নানা শর্ত। এর অংশ হিসেবে প্রকল্পের ঠিকাদারসহ বেশির ভাগ মালামালই ভারত থেকে আনতে হয়। দেশীয় প্রকিউরমেন্ট ফলো (ক্রয়প্রক্রিয়া অনুসরণ) করে ভারত থেকে মালামাল ক্রয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার পাশাপাশি বাস্তবায়নও থমকে যায়।
ইআরডি সূত্র জানায়, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (দ্বিতীয় এলওসি) ঋণে ২০১৮ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল অ্যান্ড অংসিলারি বিল্ডিংস ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা, আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নূরুল হক আধুনিক হসপিটাল, নোয়াখালী’ শীর্ষক প্রকল্পটি।
আমাদের দেশে অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হয়। প্রকল্প অনুমোদনের সময় যে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়, সেসময়ে কোনো প্রজেক্টের বাস্তবায়ন হয় না। ফলে সময় বেশি লাগে এবং সময় বেশি লাগায় খরচ বেড়ে যায়। মূলত, এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে
ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম
অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৬৪ কোটি টাকা আর এলওসি ঋণ থেকে এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা। বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো- কক্সবাজার, নোয়াখালী, যশোর ও পাবনা মেডিকেল কলেজকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীতকরণ। কারণ ওই চার জেলায় মেডিকেল কলেজের সঙ্গে হাসপাতাল নেই। মেডিকেল কলেজগুলোকে হাসপাতালে রূপ দিতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে কাজের অগ্রগতি মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে ব্যয় আবার সংশোধন করতে হয়। তখন দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে যখন প্রকল্পের মূল্যায়ন করা হয়, প্রকিউরমেন্ট করা হয়, এরপর সংশোধন করতে গেলে পরবর্তীতে আর কিছু ঠিক থাকে না। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ব্যত্যয় ঘটে। সুতরাং এগুলো কাঙ্ক্ষিত নয়। ব্যয় ও মেয়াদ বাড়লে অরিজিনাল প্রকিউরমেন্টে গুড গভর্নেন্সের (সুশাসন) ব্যত্যয় হয়
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান
প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, ‘অনুমোদনের আড়াই বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ছাড়া সেভাবে আর কোনো কাজ করা হয়নি। ফলে এ পর্যায়ে এসে প্রকল্পের আরও তিন বছর মেয়াদসহ প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলো।’ সংশোধনী প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক হাজার ৯৯১ কোটি টাকা এবং এলওসি ঋণ থেকে এক হাজার ৫৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাস্তবায়ন মেয়াদ জুন ২০২৪ সাল পর্যন্তও প্রস্তাব করা হয় প্রস্তাবনায়।
গত মাসে প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প পরিচালক ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পে মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ মাস পর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের নির্মাণব্যয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলন করা। প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সিডি-ভ্যাটের সংস্থান না থাকায় প্রকল্পটি সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রায় ৭০০টি আইটেমের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণে প্রকল্পটির সংশোধন প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদার/এজেন্ট/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়, সেহেতু বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দাম মূল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) বৃদ্ধি পেয়েছে যা সংশোধন প্রয়োজন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় শেষপর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর অগ্রগতি মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, এটি হতাশাজনক। সংশোধনীতে এসে প্রকল্পটির অনেক যন্ত্রপাতির দাম পুনর্নির্ধারণ করতে বলেছি প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে। আমি পিইসি সভায় নির্দেশনা দিয়ে বলেছি, কোনোভাবেই যেন প্রকল্পের আর সংশোধন করা না হয়
আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ
প্রকল্প পরিচালকের ডিপিপি সংশোধনের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানায়, পিপিআর (গণখাতে ক্রয়বিধি) অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের আগে বাজারমূল্য যাচাই করতে হবে। এটি পৃথক একটি কমিটির মাধ্যমে করতে হবে।
পিইসি সভায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ ভারতীয় এলওসি’র অর্থে এবং যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক ইকুইপমেন্ট ক্রয় সরকারি অর্থে করতে হবে। ৭৫ শতাংশ নির্মাণসামগ্রী ভারত থেকে আনা হবে, তাই শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এর অনুকূলে মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে কোনো অর্থের সংস্থান ছিল না। এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের রেট সিডিউল কার্যকর থাকায়, উপযুক্ত রেট সিডিউল অনুযায়ী এলওসি’র আওতায় নতুন করে ব্যয় নির্ধারণে টেন্ডার করা হবে।
পিইসি সভায় আর্থ-সামাজিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আ এ মো. মহিউদ্দিন ওসমানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের নির্দেশনা অনুযায়ী যত-তলা ভিত, তত-তলা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও প্রকল্পটির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ১০তলা ভিতবিশিষ্ট ১০তলা ভবন নির্মাণের আগে ভবিষ্যতে বর্ধিত করার সুবিধার্থে ভবনের পাশে প্রয়োজনীয় স্থানের সংস্থান রাখতে হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্প ঋণ থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। কারণ ভারতীয় ঋণের টাকা নির্মাণকাজে ব্যয় হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের নির্মাণব্যয় হালনাগাদ করা হয়নি। এলওসি’র মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করাও সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে আর্থ-সামাজিক বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় শেষপর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর অগ্রগতি মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশত, এটি হতাশাজনক। সংশোধনীতে এসে প্রকল্পটির অনেক যন্ত্রপাতির দাম পুনর্নির্ধারণ করতে বলেছি প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে। আমি পিইসি সভায় নির্দেশনা দিয়ে বলেছি, কোনোভাবেই যেন প্রকল্পের আর সংশোধন করা না হয়। কারণ এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জনসাধারণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন।
ভারতীয় ঋণ ও ঋণের আওতায় চলমান প্রকল্পের দুরবস্থা সম্পর্কে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “এলওসি বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে এবং বিলম্বের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক যে মূল্যায়ন (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সেগুলো অনেক সময় ক্রস করে যাচ্ছে। ফলে আবার নতুন করে ঋণ নেগোশিয়েট করতে হচ্ছে, এটার ফলে একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ২০১০ সালের প্রথম এলওসি’র সবগুলো প্রকল্প এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। দ্বিতীয় এলওসি’র চুক্তি হয়েছে ২০১৫ সালে এবং তৃতীয়টা হয়েছে ২০১৮ সালে। সুতরাং প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা না থাকায় এগুলো জটিল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এলওসি’র প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই আরও যত্নবান হতে হবে।”
প্রকল্পে মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ মাস পর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের নির্মাণব্যয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলন করা। প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সিডি-ভ্যাটের সংস্থান না থাকায় প্রকল্পটি সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রায় ৭০০টি আইটেমের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণে প্রকল্পটির সংশোধন প্রয়োজন
প্রকল্প পরিচালক ড. মাহাবুবুর রহমান
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়া আমাদের দিক থেকে যেমন সমস্যা আছে, এক্সিম ব্যাংকেরও টাকাছাড়ের দিক থেকে সমস্যা আছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতে কিন্তু ভারতীয় হাই কমিশনার এবং আমাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কমিটিও করা আছে। কমিটির এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তারা আরও ভালোভাবে কাজ করলে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আরও গতি আসবে।’
প্রকিউরমেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকিউরমেন্টের ওখানে যদি সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এটা সব প্রজেক্টেই হয়ে থাকে। আগে ভারত থেকে ৮৫ শতাংশ মালামাল আনতে হতো, সেটা পরে সমঝোতার মাধ্যমে ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা ৬৫ শতাংশও করা হয়েছে। তারপরও আমার মনে হয়, শর্তগুলোকে আরও সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে।
‘এক্ষেত্রে প্রকিউরমেন্ট পলিসিগুলো আরেকবার সংশোধন করা দরকার বলে আমার মনে হয়। দুদিকেই আমদের চেষ্টা করা উচিত। একটা হলো, মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে এ ধরনের শর্ত না রাখা। কারণ অনেক প্রজেক্টের মালামাল আমাদের এখানে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়টা হলো, যদি শর্ত ৭৫ শতাংশই হয়, তাহলে সেটা যেন সমস্যা না হয় আমাদের প্রকিউরমেন্ট পলিসির সঙ্গে।’
তিনি আরও বলেন, বিলম্ব শুধু এলওসি’র নয়, এটা জেনারেল সমস্যা। আমাদের এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও, অন্যান্য প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এটা দেখছি। এগুলোর দিকে আমাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা যে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, মেগা প্রকল্প থেকে শুরু করে এটার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, জনবল এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন— এগুলোতে সেভাবে নজর দেওয়া হয়নি। এগুলো আরও উন্নত করতে হলে এখনই নজর দিতে হবে।
ব্যয়, মেয়াদ বাড়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির কোনো সুযোগ থাকে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে ব্যয় আবার সংশোধন করতে হয়। তখন দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে যখন প্রকল্পের মূল্যায়ন করা হয়, প্রকিউরমেন্ট করা হয়, এরপর সংশোধন করতে গেলে পরবর্তীতে আর কিছু ঠিক থাকে না। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ব্যত্যয় ঘটে। সুতরাং এগুলো কাঙ্ক্ষিত নয়। ব্যয় ও মেয়াদ বাড়লে অরিজিনাল প্রকিউরমেন্টে গুড গভর্নেন্সের (সুশাসন) ব্যত্যয় হয়।
২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্প ঋণ থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। কারণ ভারতীয় ঋণের টাকা নির্মাণকাজে ব্যয় হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের নির্মাণব্যয় হালনাগাদ করা হয়নি। এলওসি’র মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করাও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হয়। প্রকল্প অনুমোদনের সময় যে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়, সেসময়ে কোনো প্রজেক্টের বাস্তবায়ন হয় না। ফলে সময় বেশি লাগে এবং সময় বেশি লাগায় খরচ বেড়ে যায়। মূলত, এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু ভারতীয় এলওসি প্রকল্পেই নয়, আমাদের দেশীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রেও মেয়াদ, ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ও মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে বা অদক্ষতার কারণে এটা হয়ে থাকে। এডিপি বাস্তবায়নে এটা সাধারণ বিষয়। সার্বিকভাবে দেখা যায়, এডিপি বাস্তবায়নে বছরের প্রথমদিকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়, শেষদিকে ঠেলেঠুলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ হয়। কাজ ঠিক মতো হয় না, কাজ না করে চেক লেখা হয়— এমন নানান সমস্যা এখনও চলমান।
পিইসি সভার সিদ্ধান্তগুলো
প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হওয়ার বিষয়টি হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক। ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকতে হবে। যেসব যন্ত্রপাতির মূল্য সংশোধন করা হয়েছে, সেসব যন্ত্রপাতি সম্পর্কে লিখিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হবে। সব যন্ত্রপাতি প্রকল্পের নির্মাণ কার্যক্রমের শেষ বছরে ক্রয় করতে হবে।
পিপিআর অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের আগে বাজারমূল্য যাচাইয়ের জন্য একটি ‘বাজারমূল্য যাচাই কমিটি’ গঠন করতে হবে।
দুটি বৈদ্যুতিক লাইন অপসারণে আট কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা সংশোধিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
প্রকল্পের আওতায় ১০তলা ভিতবিশিষ্ট ১০তলা ভবন নির্মাণের আগে ভবিষ্যতে বর্ধিতকরণের সুবিধার্থে ভবনের পাশে প্রয়োজনীয় স্থানের সংস্থান রাখতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে নির্মিত ভবনের একটি স্ট্যান্ডার্ড নির্মাণব্যয় প্রাক্কলনের আগে ভবনের নকশা পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত গ্যারেজ ও পাবলিক টয়লেট আলাদাভাবে নির্মাণ করতে হবে।
অটোমেশন (হার্ডওয়্যার) ও অটোমেশন (সফটওয়্যার) অঙ্গ দুটি সংশোধিত ডিপিপি থেকে বাদ দিতে হবে।
কক্সবাজারে ০.৩৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের প্রত্যয়নপত্র সংশোধিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে। প্রত্যেকটি হাসপাতালের জন্য দুটি করে অ্যাম্বুলেন্স এবং হাসপাতালের পরিচালকদের ব্যবহারের জন্য কারের পরিবর্তে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তসাপেক্ষ একটি করে জিপ প্রকল্পের শেষ বছরে ক্রয় করতে হবে। রেডিওথেরাপি বিভাগে প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতিগুলো বাদ দিতে হবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রাক্কলনে নববর্ষ ভাতা নামে অন্তর্ভুক্ত পৃথক নতুন অঙ্গ বাদ দিতে হবে। এছাড়া সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের আওতায় ক্রয়তব্য বই ও সাময়িকীর সুনির্দিষ্ট তালিকা সংযোজন করতে হবে। প্রকল্পটির যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই করার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন সংশোধিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
প্রকল্পের আর্থিক নিশ্চয়তা সংক্রান্ত সচিবের প্রত্যয়নপত্র ও মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) প্রত্যয়নপত্র ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে।
এসআর/এমএআর