রাজনৈতিক দলের হাতেই মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব এবং সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন, ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। দেশের জনগণ বিষয়টি বুঝতে পেরে আস্তে আস্তে একমুখী হয়ে পড়েছেন, সেটা শেখ হাসিনার প্রতি। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি...

মাহবুবউল-আলম হানিফ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টানা চারবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে হয়েছেন পৈতৃক জেলা কুষ্টিয়ার সংসদ সদস্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক চালচিত্রের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় কাউন্সিলের মাধ্যমে। এখানে ঘরে বসে কোনো নির্বাচন হয় না। ভবিষ্যতেও কখন, কোনপর্যায়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে, আদৌ হবে কিনা— সেটা কাউন্সিলররাই ঠিক করবেন

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেন দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন খোলামেলা। বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা দেখালেও ‘মানবিক’ উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত সফলতা দেখাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রক্ষমতা এখনও আমলাতন্ত্রের অধীন— বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিন পর্বের সাজানো আলাপচারিতার শেষটি আজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। আলাপচারিতায় ছিলেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মাহবুবউল-আলম হানিফ

ঢাকা পোস্ট : রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন গোয়েন্দা সংস্থার ওপর নির্ভর হয়ে গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোনো সংস্থার দ্বারা হচ্ছে, যেটা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, এটা হয়তো তাদের সময়ে প্র্যাকটিস। বিএনপি একটা অগণতান্ত্রিক দল, তাদের মধ্যে কখনোই গণতান্ত্রিক চর্চা ছিল না। তাদের দল পরিচালিত হয় সুদূর লন্ডন থেকে, সেখানে আমাদের দেশের একজন পলাতক আসামি যে নির্দেশনা দেন, সেটার ওপর ভিত্তি করে তারা দল পরিচালনা করেন। এ দলটা, যাদের নিজস্ব কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই, নিজস্ব কোনো সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি নেই, যারা সবসময় বিশেষ কোনো জায়গা থেকে নির্দেশিত হয়ে দল পরিচালনা করেন, তাদের কাছে অন্যদের সম্পর্কে এমন ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

তারা মানুষকে ধোঁকা দিত, তারা আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে— সেটা মানুষ বুঝতে পারায় আস্তে আস্তে জনগণের আস্থাটা একমুখী হয়ে গেছে, সেটা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ একটা গণতান্ত্রিক দল। এ দেশের সবচেয়ে বৃহৎ, প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ এ দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। মহান স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সবকিছুই অর্জন হয়েছে আওয়ামী লীগের দ্বারা। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল বলেই অতীত, ঐতিহ্য এবং তাদের সাংগঠনিক অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিকভাবেই সবকিছু মোকাবিলা করে। সেটা করে বলেই আওয়ামী লীগের একটা গণভিত্তি আছে এ দেশের একেবারে গ্রাম পর্যন্ত। 

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে না, কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ারও প্রয়োজন হয় না।

ঢাকা পোস্ট : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগই দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে এবং তা ধরার অভিযানের নামে ফায়দা লুটছে। এ বিষয়ে আপনার কী মত?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : মির্জা ফখরুলরা এটা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ এ দেশের মানুষ দেখেছে কীভাবে জঙ্গিবাদকে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল। এ দেশের মানুষ তো ভুলে যায়নি একসঙ্গে ৬৪ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ, ৫০০টি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এ দেশে কীভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। ঝালকাঠিতে জঙ্গিরা দুই বিচারপতিকে বোমা মেরে হত্যা করেছিল। গাজীপুরের আদালতে বোমা মেরে প্রায় ১২ আইনজীবীকে আহত করা হয়েছিল, দুজন নিহত হয়েছিল। এ বাংলাদেশে প্রকাশ্যে রাজশাহীতে সেই জঙ্গিনেতা বাংলা ভাই, তার নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় পুলিশ প্রোটেকশনে তারা রাজপথে মিছিল নিয়ে বেরিয়েছিল— এটাও বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। বাংলাদেশে যে ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল, যেটা ভুলক্রমে ধরা পড়ে যায়, সরকার এটা লুকাতে না পেরে বাধ্য হয়েছিল নিয়ে আসতে। সেই অস্ত্রগুলো কার ছিল? কার মাধ্যমে কোথায় যাচ্ছিল?

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে না, কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ারও প্রয়োজন হয় না

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

এ দেশে সেই সময়ে হবিগঞ্জ থেকে পার্বত্য এলাকায় কীভাবে জঙ্গিদের মদদ দেওয়া হতো, আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর এখানে ট্রেনিং ক্যাম্প বানানো হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ট্রেনিং দিয়ে তাদের মাধ্যমে সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছিল। এগুলো তো দেশের মানুষ দেখেছে। এগুলো কীভাবে মির্জা ফখরুল সাহেব ভুলে যান? 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে একে একে সেগুলো কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগ যখন শুরু করেছিল তখন কিন্তু বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে, তাল মিলিয়ে সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছিল। গাড়িঘোড়া পুড়িয়ে দিয়েছিল, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, ট্রেনে আগুন দিয়েছিল। এ সন্ত্রাসের, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্যাম্পগুলো যখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তখনও কিন্তু বিএনপি, তারা মর্মাহত হয়ে মিউ মিউ করে দোষ এড়ানোর চেষ্টা করেছিল— এগুলো তো জাতি দেখেছে, জঙ্গি কারা পালন করে সেটাও দেখেছে।

হাওয়া ভবনে বসে উগ্র জঙ্গিনেতা তাইজুর রহমানকে নিয়ে, হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রহমান বৈঠক করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক করেছিল। জঙ্গিদের সঙ্গে বসে হাওয়া ভবনে বৈঠক, এটাও জাতি দেখেছে। এরপর আবার কোন মুখে, কোন লজ্জায় মির্জা ফখরুল বলেন, জঙ্গিবাদ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে আবার আওয়ামী লীগই নিধন করে? এটা তো দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার যে এ দেশে জঙ্গি কারা সৃষ্টি করেছিল?

ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখছেন?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ এখন পর্যন্ত ভালোভাবে এবং ইতিবাচক দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ বাংলাদেশকে সবসময় রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করে রাখার চেষ্টা হতো। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করা হতো। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সরকার পরিবর্তনের ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হতো না। যদি কেউ করতে চাইত, বিএনপি তার পাঁচ বছরে দেশকে ঠিক উল্টো পথে নিয়ে যেত। এখন যখন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হচ্ছে, একটা স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশও তৈরি হয়েছে।

যাদের নিজস্ব কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই, নিজস্ব কোনো সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি নেই, যারা সবসময় বিশেষ কোনো জায়গা থেকে নির্দেশিত হয়ে দল পরিচালনা করেন, তাদের কাছে অন্যদের সম্পর্কে এমন ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

সবমিলিয়ে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিটা ভালোর দিকে যাচ্ছে। কারণ দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে, রাজনৈতিক দলের হাতেই মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব এবং সেটা বর্তমান সরকার, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সক্ষম হয়েছে। তার নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যরা যারা ছিল, তারা মানুষকে ধোঁকা দিত, তারা আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে— সেটা মানুষ বুঝতে পারায় আস্তে আস্তে জনগণের আস্থাটা একমুখী হয়ে গেছে, সেটা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। সেদিক থেকে বিবেচনায় বলা যেতে পারে, ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি আরও এগিয়ে যাবে। দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনার পরবর্তী যোগ্য উত্তরসূরি কে হতে পারেন?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দল। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ উত্তরসূরী কে হবেন, না হবেন; সেটা সময়ই বলে দেবে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় কাউন্সিলের মাধ্যমে। এখানে ঘরে বসে কোনো নির্বাচন হয় না। প্রতিটা কাউন্সিলের মাধ্যমেই আমাদের নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যতেও কখন, কোনপর্যায়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে, আদৌ হবে কিনা— সেটা কাউন্সিলররাই ঠিক করবেন। কাউন্সিলের মাধ্যমেই আমাদের নেতৃত্বে নির্ধারিত হবে।

এইউএ/এমএআর/