আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা দেখালেও ‘মানবিক’ উন্নয়নে এক যুগ পরও কাঙ্ক্ষিত সফলতা দেখাতে পারেনি ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরিবার থেকে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষা দিতে পারলে অর্জিত হবে সে লক্ষ্য— মনে করেন মাহবুবউল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা মিলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। ‘দেশে ঘুষ-দুর্নীতি আছে’ স্বীকার করলেও তা দমনে সরকার দৃঢ়ভাবে সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের টানা চারবারের যুগ্ম এ সাধারণ সম্পাদক।

মাহবুবউল-আলম হানিফ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টানা চারবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে হয়েছেন পৈতৃক জেলা কুষ্টিয়ার সংসদ সদস্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের রাজনৈতিক চালচিত্রের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেন দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন খোলামেলা। তিন পর্বের সাজানো আলাপচারিতার প্রথমটি আজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। আলাপচারিতায় ছিলেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের যুগপূর্তি হলো। উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল, কোথায় যেতে পারলেন?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১২ বছর ধরে যে উন্নয়নের ধারা বয়ে চলেছে এটা কিন্তু পূর্বের কোনো সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশের দায়িত্ব জনগণ দিয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত পাঁচ বছর এবং সেনাবাহিনীসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল আরও দুই বছর। এ সাত বছরে দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই দেশটাকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একেবারে ভয়াবহ মাত্রায় আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মাহবুবউল-আলম হানিফ
অভিভাবকরা যদি ছোট বেলা থেকেই তাদের সন্তানদের দিকে নজর দেন, নীতিনৈতিকতা, মানবিকতা— এসব গুণে যদি তারা তৈরি করতে সক্ষম হন তাহলে আস্তে আস্তে সমাজের মধ্যে পরিবর্তন আসবে এবং রাষ্ট্র, এ দেশ বা এ সমাজ একটা নৈতিকতাপূর্ণ সমাজ বা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

সেই সময়ের একটা চিত্র যদি দেখা যায়, আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম খাদ্যের ঘাটতি ছিল প্রায় ৪০ লাখ টন। বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল মাত্র তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। আমাদের বৈদেশিক রপ্তানি আয় ছিল ছয় থেকে সাত বিলিয়ন ডলার। আমাদের ফরেন রেমিট্যান্স ছিল মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলার। সেখান থেকে এই ১২ বছরে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে টেনে এনেছেন, আজ আলোয় উদ্ভাসিত দেশ। বর্তমানে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। 

আমাদের বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বাকি ১ শতাংশ যেটা দুর্গম চরাঞ্চল বা বিভিন্ন দুর্গম এলাকা আছে, সেগুলো এ বছরের মধ্যে সোলার অথবা সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া যাবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে।

আমাদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন অসচ্ছল, দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা— এ ধরনের অনেকগুলো কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের বৈদেশিক রপ্তানি আয় এখন প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আমাদের ফরেন রেমিট্যান্স এ মুহূর্তে ৪৩ বিলিয়ন ডলার ক্রস করেছে। মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে এখন ২১০০ ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সবজি রপ্তানিকারক দেশ। মৎস্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। এই যে সব সেক্টরের উন্নয়ন, শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন; মানুষের দৌরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। এসব সম্ভব হয়েছে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং তার নেতৃত্বে। এ কাজগুলোর কারণে আজ আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) আমাদের দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিমত হচ্ছে, একটা বিধ্বস্ত দেশকে আজ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এমডিজি বা আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতির পেছনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতা, একাগ্রতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে আজ দেশ এ পর্যায়ে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের পাশে মাহবুবউল-আলম হানিফ
আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের একটা দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা, আমি মনে করি সেটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আছে

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

আমাদের এ যাত্রা, এ পথচলা কিন্তু ১২ বছরে খুব মসৃণ ছিল না। বার বার আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের দেশে সেই সময়ে বিরোধী দল হিসেবে যারা ছিল প্রথমদিকে, যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি করতে পারেনি, তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচির নাম করে, অজুহাতে দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে গেছে। ধ্বংসাত্মক এসব কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে হাজার হাজার যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, ট্রেনে আগুন দিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে— এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণেই কিন্তু আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। 

বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সংস্থার অভিমত হচ্ছে, আগামী দশকে দ্রুত ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন-অগ্রগতির মধ্যে যে কয়টি দেশ আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ কিন্তু আগামী দশকে বিশ্বের ২৯তম শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি আমাদের সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সফলতা।

ঢাকা পোস্ট : সরকার দৃশ্যমান উন্নয়ন করছে, কিন্তু মানবিক উন্নয়নের প্রশ্নে সরকার কতটুকু সফল?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : মানবিক উন্নয়নের যে কথা বলা হয়েছে সেই উন্নয়নে হয়তো আমরা এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে মানুষকে। মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, মানুষের মূল্যবোধে কিছুটা ঘাটতি এখনও আছে। এ নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ— এগুলোর জন্য দরকার আমাদের প্রতিটি পরিবারকে, তাদের সন্তানকে ছোট থেকেই এ শিক্ষায় জ্ঞানদান এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। প্রতিটা শিশুর প্রাথমিক পাঠশালা হচ্ছে তার ঘর, পরিবার। শিক্ষক হচ্ছেন তার বাবা-মা। প্রত্যেকটা পরিবারের অভিভাবকরা যদি ছোট বেলা থেকেই তাদের সন্তানদের দিকে নজর দেন, নীতিনৈতিকতা, মানবিকতা— এসব গুণে যদি তারা তৈরি করতে সক্ষম হন তাহলে আস্তে আস্তে সমাজের মধ্যে পরিবর্তন আসবে এবং রাষ্ট্র, এ দেশ বা এ সমাজ একটা নৈতিকতাপূর্ণ সমাজ বা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

ঢাকা পোস্ট : সরকার কি উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : উন্নয়নের অগ্রগতির বিষয়ে আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, আমি মনে করি সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ছিল দরিদ্র দেশ। সীমিত সম্পদ, বিশাল জনগোষ্ঠী। এটা নিয়ে এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) গ্রোথ ধরে রাখা— এটা কিন্তু খুব সহজ বিষয় ছিল না। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণে।

দলীয় কর্মসূচি শেষে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন মাহবুবউল-আলম হানিফ
আমরা মনে করি দেশে বাকস্বাধীনতা যথেষ্ট আছে। বর্তমানে দেশে ৩০টার ওপরে ইলেকট্রনিক মিডিয়া আছে। আছে শতাধিক দৈনিক পত্রিকা। প্রায় এক-দুই হাজার অনলাইন পত্রিকা। বিভিন্ন মাধ্যমে সবাই নিজ নিজ মত প্রকাশের অবাধ সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি দল, বিরোধী দল, যেকোনো দলই তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারা তাদের সভা-সেমিনার, মানববন্ধন— সবকিছুই প্রতিদিন করছে। এগুলোতে তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

যেটুকু আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমি মনে করি সে লক্ষ্য আমরা পূরণ করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, সেটা পূরণ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে একটি প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মাণ করা, সেটাও সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তিসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলা যায়, কারণ এখন প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের একটা দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা, আমি মনে করি সেটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আছে।

ঢাকা পোস্ট : গণতান্ত্রিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, দুর্নীতি, প্রশাসনিক জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়গুলো সম্পর্কে কী বলবেন?

মাহবুবউল-আলম হানিফ : আমরা মনে করি দেশে বাকস্বাধীনতা যথেষ্ট আছে। বর্তমানে দেশে ৩০টার ওপরে ইলেকট্রনিক মিডিয়া আছে। আছে শতাধিক দৈনিক পত্রিকা। প্রায় এক-দুই হাজার আছে অনলাইন পত্রিকা। বিভিন্ন মাধ্যমে সবাই নিজ নিজ মত প্রকাশের অবাধ সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি দল, বিরোধী দল, যেকোনো দলই তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারা তাদের সভা-সেমিনার, মানববন্ধন— সবকিছুই প্রতিদিন করছে। এগুলোতে তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

আমাদের একটা বড় রাজনৈতিক দল যারা ক্ষমতায় ছিল। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে। কিছুদিন আগেও আমরা দেখেছি, একটা জনসভার নাম করে তারা গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এমন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়তো দমনের চেষ্টা করে। কেউ যদি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে সেটার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা পদক্ষেপ নেবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এটার সঙ্গে বাকস্বাধীনতা মিলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।

মাহবুবউল-আলম হানিফ
অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে যে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য কি-না। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমনের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক, দৃঢ়ভাবেই দুর্নীতি দমনের চেষ্টা করছে

মাহবুবউল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

আমাদের এখানে অনেক সময় বিরোধী দল থেকে অভিযোগ করা হয় যে বাকস্বাধীনতা নেই। আমি মনে করি, এটা ভুল। তাদের এটা অসত্য তথ্য। আমাদের বাংলাদেশে দুর্নীতি আছে, ঘুষ আছে। পৃথিবীর সব দেশেই, যেসব দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয় সেসব দেশেও দুর্নীতির খবর পাই। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়, বাংলাদেশেও আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা বেশি মাত্রায় খবর পাওয়া যায়। তবে এটার বিষয়ে আমাদের সরকারের জিরো টলারেন্স আছে। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে। যাদের বিরুদ্ধে, যখনই কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে, সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকার দুর্নীতি বন্ধের বিষয়ে শক্তভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছে। 

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে যে সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সরকারদলীয় লোকজন অনেক অপরাধ করে আইনের হাতের বাইরে চলে যায়। বর্তমান সরকার কিন্তু এসব, কারও কোনো নৈতিক স্খলন বা অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে আইনের হাত থেকে রেহাই দিচ্ছে না। যার বিরুদ্ধে যখনই কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে, তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারদলীয় নেতাকর্মী, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে যে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য কি-না। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমনের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক, দৃঢ়ভাবেই দুর্নীতি দমনের চেষ্টা করছে। (চলবে) 

এইউএ/এমএআর/