‘পরীদের’ বিরুদ্ধে অভিযানে আওয়ামী লীগের নৈতিক সমর্থন
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেশ কয়েকজন আলোচিত সেলিব্রেটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযান এখনও চলমান। এসব অভিযানে নৈতিক সমর্থন আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। দলটির নেতারা বলছেন, তারা এ ধরনের অভিযানের পক্ষে। তবে, দলের ভেতরে এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।
আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য (পরবর্তীতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশান- ২ এর ৩৬ নম্বর রোডের বাসভবনে গত ২৯ জুলাই রাত ৮টার পর অভিযান চালায় র্যাব। ওই সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, বিদেশি মুদ্রা, হরিণ ও ক্যাঙারুর চামড়া, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে চার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এর ধারাবাহিকতায় গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বনানীতে অভিযান চালানো হয় অভিনেত্রী পরীমণির বাসায়। প্রায় তিন ঘণ্টার অভিযান শেষে তাকে মাদকসহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর পরদিন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এছাড়া পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিসহ বিভিন্ন সময়ে আটক হন মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। পরবর্তীতে মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অভিযান নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র।
আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অভিযানগুলোরও পজিটিভ রোল থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ এ ধরনের পদক্ষেপের পক্ষে। তবে, আমাদের দলে এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ, করোনার জন্য আমরা মিটিং করতে পারছি না। দলের মিটিং হলে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই আমরা। সেখানে যেকোনো অন্যায়, অপসংস্কৃতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। মাদকের সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অভিনয়-মডেলিং শিল্প ও সংস্কৃতিরই অংশ। যারা এগুলো চর্চা করেন, তারা এ অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেন, জীবিকাও নির্বাহ করেন। কিন্তু এর আড়ালে কেউ যদি অবৈধ-অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকেন, তিনি যে-ই হন দায় তো তাকে নিতে হবে।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছি। কিন্তু নৈতিকভাবে আমরা পিছিয়ে গেছি। অভিযানের মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে এ অনৈতিকতা দূর করতে চাই। অভিযান শুরু হয়েছে, চলতে থাকবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের কিছু তথাকথিত সেলিব্রেটি সমাজে অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছেন। তাদের মুখোশ উন্মোচনে কঠোর অভিযান চলছে। তাদের মুখোশ আমরা উন্মোচন করছি। আশা করছি অন্যরাও সাবধান হবেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দিয়ে তরুণ সমাজ ও জাতিকে তারা বিভ্রান্ত করছেন। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অপসংস্কৃতি রোধে এ অভিযান চলমান থাকবে।
এইউএ/এইচকে/এমএআর/