ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে করোনার টিকা দিচ্ছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা / ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সোমবার (২৬ জুলাই) করোনার টিকা নিতে এসেছেন আনিসুর রহমান বুলবুল। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন সকাল ৮টা। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখতে পান, টিকা নিতে আসা মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ সিরিয়াল দিচ্ছেন, কেউ আবার ডেস্কের সামনে গিয়ে তথ্য জেনে নিচ্ছেন।

অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি সামাল দিতে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল, আজকের তারিখে যারা মেসেজ পেয়েছেন শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে। হেল্প ডেস্কের কর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। আগতদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে এসে দেখি ১০ জনের গ্রুপ করে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। সেখানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবীরা আছেন। তারাও ভালোভাবে সহায়তা করছিলেন। তাদের পক্ষ থেকে টিকা নেওয়া মানুষদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছিল, টিকা নেওয়ার স্থানে সাবান-তেল-লোশন লাগাবেন না, ঘষামাজা করবেন না। ব্যথা বা জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাবেন।

সেখানে কিছুক্ষণ বসার পর আনিসুর রহমানের ডাক এলো। মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা নিলেন। পরে তিনি বলেন, শারীরিক কোনো অস্বস্তি বোধ করছি না। ভাগ্য ভালো টিকা নিতে পেরেছি।

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে টিকাদানের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি টিকা সংগ্রহ, মজুত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। করোনা থেকে রক্ষা পেতে টিকার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিও

রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালসহ টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে এখন মানুষের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।

এদিকে, দেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই ভাঙছে আগের মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (২৫ জুলাইয়ের হিসাব) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪৭ জন মারা গেছেন। এটি একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড। এছাড়া এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ১৯২ জন। এটিও একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। ঈদুল আজহার ছুটি শেষে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার শীর্ষে রয়েছেন বৃদ্ধরা / ছবি- সংগৃহীত

তারা মনে করছেন, প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ। কিছুদিন আগে পাশের দেশ ভারতে করোনার সংক্রমণের হার ছিল আমাদের মতো ঊর্ধ্বগতি। এ কারণে তারা টিকা দেওয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। বন্ধ করে দেয় টিকা রফতানি। বর্তমানে সেখানে ৩ শতাংশের নিচে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। আমাদের এখানে তা ৩২ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকা দেওয়ার অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে টিকাদানের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি টিকা সংগ্রহ, মজুত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের মতে, করোনা থেকে রক্ষা পেতে টিকার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনদিন ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। যেটি সর্বশেষ আসে, সেটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পৃথিবীর ১০০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা গণহারে টিকা দিতে পেরেছে, তারা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিটি দেশেই সংক্রমণ ছড়ানোর নিয়ম যেমন এক, তেমনি নিয়ন্ত্রণের নিয়মও এক। যেহেতু নতুন ভ্যারিয়েন্ট আগের চেয়ে খুবই দ্রুত ছড়ায় এবং এর ক্ষতিসাধনের সক্ষমতাও বেশি; এ কারণে রোগীদের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, তীব্র কষ্ট অনুভব করছে। এটির প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কেবল টিকার মাধ্যমে।

২০২২ সালের মধ্যে ২১ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের লক্ষ্য সরকারের / ছবি- সংগৃহীত

এদিকে, করোনার টিকা দেওয়ার কার্যক্রম আরও জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কার্যক্রম যেন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে শুরু করা যায়, সেই নির্দেশনাও দেন তিনি। সোমবার (২৬ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ওয়ার্ডপর্যায়ে যেসব বয়স্ক লোক আছেন, তাদের ভ্যাকসিনেশনের (টিকাদান) ব্যবস্থা করা হবে। গ্রামের বয়স্ক রোগীরাই এখন বেশি হাসপাতালে আসছেন, এ সংখ্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ। ঢাকা শহরেও তাই। তাদের মৃত্যুর হার বেশি, আক্রান্তের হারও ৯০ শতাংশ।

‘এ কারণে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলাপর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম আমরা দ্রুত শুরু করে দেব’— বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের প্রথম দিকে দেশে আসবে ২১ কোটি ডোজ টিকা। চীনের সিনোফার্মের তিন কোটি ডোজ, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ, কোভ্যাক্সের আওতায় সাত কোটি এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকা আনতে এরই মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২২ সালের প্রথম দিকে দেশে আসবে ২১ কোটি ডোজ টিকা। চীনের সিনোফার্মের তিন কোটি ডোজ, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ, কোভ্যাক্সের আওতায় সাত কোটি এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকা আনতে এরই মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছিলেন, এসব টিকা ১৪ কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ মানুষ তা পাবে। ২১ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে এক কোটি করে ধরলে ২১ মাস সময় লেগে যাবে।

ইথিওপিয়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে গিয়ে করোনার টিকা দেওয়ার কর্মসূচি চালাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ এক স্বাস্থ্যকর্মী / ছবি- সংগৃহীত

আগস্টের মধ্যে গ্রামপর্যায়ে টিকার প্রয়োগ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সোমবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টিকাদান কর্মসূচিতে খুব দ্রুতই গতি আসবে। আমরা এ কর্মসূচি ইউনিয়নপর্যায়ে নিয়ে যাব। এটি আপনারা দেখতে পাবেন। আমাদের পরিকল্পনা হলো, আগামী ৭ বা ৮ আগস্টের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামপর্যায়ে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা। যদি আমরা এ সময়ে না পারি, তাহলে ১৫ আগস্টের পর শুরু করব।’

তিনি আরও বলেন, গ্রামপর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে এটি প্রয়োগে গতি আসবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্রামপর্যায়ে দিনে আমরা এক কোটি পর্যন্ত টিকা দিতে পারি। সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো টিকার তাপমাত্রা। ফাইজার থেকে যে টিকা আসবে তা আমরা কীভাবে গ্রামে দেব? এ ধরনের কিছু সমস্যা তো আছেই। আমরা চাইলেই সব টিকা গ্রামপর্যায়ে দিতে পারব না। টেকনিক্যাল দিকটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

‘গ্রামপর্যায়ের তাপমাত্রায় যে টিকা রাখা যাবে, সেগুলোই আমরা দেব। বিশেষ করে সিনোফার্মের তিন কোটি টিকা গ্রামপর্যায়ে দেওয়ার কথা ভাবছি’— বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।

গ্রামপর্যায়ে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে হলে এখনই প্রস্তুত করতে হবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো / ছবি- সংগৃহীত

গতি আসছে না টিকার ব্যবস্থাপনায় 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে টিকার ব্যবস্থাপনায় অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে তেমন গতি আসেনি। উল্টো দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, নিবন্ধনের দুই-তিন সপ্তাহ পরও অনেকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাচ্ছেন না। আবার অনেককে ভুল তারিখ দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী বাড্ডার বাসিন্দা সাইফুজ্জামান সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন সপ্তাহ আগে রেজিস্ট্রেশন করি।  কিন্তু এখনও কোনো মেসেজ দেওয়া হয়নি। হাতিরপুলের বাসিন্দা সুমন শিকদার বলেন, আমাকে ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে খুদে বার্তা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার জন্য ওইদিন সেখানে যাবার পর জানতে পারি, টিকা নিতে হবে ২৮ জুলাই।

দিনে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এক হাজার ৫৫টি হাসপাতালে এ কার্যক্রম চালু হয়। এখন পর্যন্ত দেশে চার ধরনের টিকা দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ জুলাই পর্যন্ত এক কোটি ১৮ লাখের বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দিনে দেওয়া হয়েছে গড়ে ৮৭ হাজার ডোজ টিকা।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি- ইপিআই এর আওতায় দেশে এক লাখ ২০ হাজারটি স্থায়ী টিকাকেন্দ্র আছে। দিনে প্রায় দুই কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে এসব কেন্দ্রে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কেন্দ্র প্রস্তুত করে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা দরকার— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

কর্মসূচির শুরুতে দিনে তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিনে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে। কম সময়ে বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন / ফাইল ছবি

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে করণীয় তিনটি। তার মধ্যে অন্যতম হলো টিকা প্রয়োগ। যেহেতু এ মুহূর্তে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা আছে এবং ২০২২ সালের মধ্যে ২১ কোটি ডোজ টিকা আসবে, তাই এখন থেকেই গ্রামপর্যায়ে ক্যাম্পেইন শুরু করতে হবে। টিকা আসামাত্রই সবাই যেন টিকা নেয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি- ইপিআই এর আওতায় দেশে এক লাখ ২০ হাজারটি স্থায়ী টিকাকেন্দ্র আছে। দিনে প্রায় দুই কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে এসব কেন্দ্রে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কেন্দ্র প্রস্তুত করে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা দরকার— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার টিকাকেন্দ্র বাড়াতে চাইছে, সেহেতু মজুত-সাপেক্ষে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। ‘ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি’ শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।

২০২২ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা হবে। সে লক্ষ্যে আগামী জুনের মধ্যে সরকার প্রায় ১৪ কোটি ডোজ টিকা কিনবে। পরবর্তী মাসগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ করা হবে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে দুই কোটি ১২ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ডোজ, ফাইজারের এক লাখ, সিনোফার্মের ৫১ লাখ ও মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা এখনও মজুত আছে। মজুত শেষ হওয়ায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া বন্ধ আছে। তবে, নতুন করে দুই লাখ ৪৫ হাজার ডোজ টিকা আসায় সেগুলো ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন কেন্দ্রে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া এক লাখ ফাইজারের টিকার ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এদিকে, ১২টি সিটি করপোরেশন ছাড়া দেশের সব জেলা শহর ও উপজেলাপর্যায়ে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে ১২ লাখের অধিক মানুষকে। ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা। এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৬৩ হাজার ৯০৪ মানুষকে এ টিকা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মডার্নার টিকার মজুত কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

টিকা ছাড়া করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই / ছবি- সংগৃহীত

 স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সরকার টিকা কেনা ও সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। চলছে ক্রয় ও সংগ্রহের প্রক্রিয়া। ২০২২ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা হবে। সে লক্ষ্যে আগামী জুনের মধ্যে সরকার প্রায় ১৪ কোটি ডোজ টিকা কিনবে। পরবর্তী মাসগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ করা হবে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (গত ২৫ জুলাই পর্যন্ত), দেশের প্রায় ৭৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন। ৪৩ লাখেরও বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। টিকার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক সোমবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদেরও টিকার আওতায় আনব। মন্ত্রীমহোদয় বলেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। আমাকে তিনি বলেছেন, টিকা নিয়ে আর সমস্যা নেই, টিকা আসছে। তুমি টিকা দিতে থাক। শিগগিরই গ্রামপর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

পিএসডি/টিআই/এমএআর