নিজেদের হেফাজতের ‘মূলধারা’ দাবি করে কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীরা। কিন্তু সরকার ও হেফাজতের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় তাদের এ উদ্যোগ কিছুটা থমকে গেছে। ফলে, দ্বিতীয়বারের মতো কমিটি গঠনের কথা বলেও পিছু হটতে হচ্ছে তাদের।

যদিও শফীপন্থীদের দাবি, আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের যে কমিটি ছিল, সেটাই তাদের কমিটি। সেখানে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে কমিটি চূড়ান্ত করা আছে। কিন্তু কৌশলগত কারণে এখনই কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। তবে, যেকোনো সময় কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।

হেফাজতের শফীপন্থী আলেমরা বলছেন, জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের বর্তমান কমিটি ‘একটি সংস্থার’ নিয়ন্ত্রণে চলছে। ইতোমধ্যে ওই কমিটি থেকে আহমদ শফীর ছেলেসহ কয়েকজন পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন। তারপরও আমরা এ কমিটি নিয়ে সংগঠনের তৃণমূলের নেতাদের পর্যবেক্ষণ বা মূল্যায়ন কী, তা বোঝার চেষ্টা করছি। একইসঙ্গে আহমদ শফী হেফাজতের আমির থাকাকালে সারাদেশের জেলা কমিটিতে যেসব আলেম-ওলেমা ছিলেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন থাকায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করা যাচ্ছে না।

শফীপন্থী হেফাজতের অন্যতম সংগঠক মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতের যে কমিটি ছিল সেটাই আমাদের কমিটি। ওই কমিটিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে আমরা তা চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু কৌশলগত কারণে এখনই কমিটি ঘোষণা করছি না। আগামীতে যেকোনো সময় আমরা কমিটি ঘোষণা করব।’

কমিটিতে আহমদ শফীর পরিবারের কেউ আমির হিসেবে থাকবেন কি না— জানতে চাইলে রুহী বলেন, ‘আমরা পরিবারতন্ত্র কমিটি করছি না। গণতান্ত্রিক কমিটি করব। সেখানে সংগঠনের আমির হিসেবে আল্লামা শফীর পরিবারের কেউ থাকবেন না।’

কমিটি ঘোষণায় দেরি হওয়ার বিষয়ে রুহী বলেন, হেফাজতের নামে বর্তমান যে কমিটি আছে তারা তো একটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণে চলে। যদিও তারা আহমদ শফীর নীতি ও আদর্শবিরোধী। আমরা হেফাজতের পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

এদিকে, শফীপন্থী আলেমদের একটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে কর্মসূচি দেওয়া হয়। ওই কর্মসূচির পর হেফাজতের বাবুনগরীপন্থী নেতাদের গ্রেফতার চলাকালে আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন আমরা হেফাজতের কমিটি গঠনের আগ্রহ দেখালে সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে সাড়া পেয়েছি, বর্তমানে সেই আগ্রহের জায়গাটা কম মনে হচ্ছে। এটার কারণ হতে পারে বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের বর্তমান কমিটির ওপর তাদের মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে। তাই আমাদের কমিটি গঠনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতা কম দেখাচ্ছে। তবে আমাদের সর্বশেষ যে কর্মসূচি (১৭ জুন, জাতীয় প্রেস ক্লাবে) সেখানে সরকারের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। ওই কর্মসূচিতে চলমান সংকট নিরসনে ওলামায়েদের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা হয়।

শফীপন্থী ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, হেফাজত নিয়ে আমরা একান্তে কাজ করছি। এটা নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। সময় হলে সবকিছু আপনারা দেখতে পাবেন।

নাম প্রকাশ না করে আহমদ শফীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক আলেম বলেন, যেহেতু হেফাজতের নামে একটি কমিটি গঠন হয়ে গেছে। সেই কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদির ওপর সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আছে, তাই একই নামে আরেকটি কমিটি হোক সেটা তারা চান না। আবার শফীপন্থী আলেমদের সঙ্গেও সরকার সুসম্পর্ক চায়। এ কারণে আমাদের প্রোগ্রামেও তারা সহযোগিতা করে।

ওই আলেম আরও বলেন, আমরা চাইলে এখনই হেফাজতের নামে আরেকটি কমিটির ঘোষণা দিতে পারি। কিন্তু সেটা করে তো কোনো লাভ নেই। তাই হেফাজতের তৃণমূলের আলেমদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন করার চেষ্টা করছি। সেই কারণে এখনই কমিটি গঠন থেকে আমাদের পিছু হটতে হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আগম উপলক্ষে রাজপথে তাণ্ডব চালিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয় হেফাজত 

জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটিতে সহকারী মহাসচিব ছিলেন আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কমিটিতে আমাকে রাখার বিষয়ে তারা কিছুই জানায়নি। আমার সঙ্গে তারা কোনো যোগাযোগও করেনি। আমি আগেও হেফাজতের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, আগামীতেও যুক্ত হব না। আমি আমার মতো থাকতে চাই। এর সঙ্গে আমি নাই।’

প্রসঙ্গত, গত ২ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আহমদ শফীকে ‘হত্যায়’ অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আহমদ শফীর ভক্ত ও অনুসারীরা। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, আমরা কখনই নিশ্চুপ ছিলাম না। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছি। হেফাজতের আহমদ শফীর অনুসারীরা আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা কমিটি করব।

গত ৭ জুলাই হেফাজতের কমিটি প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। এছাড়া গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের কমিটি হলেও তখন কমিটি করার ঘোষণা দেয় শফীপন্থীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটেন।
 
এএইচআর/এমএআর/