দেশের ভেতরে ৭৮টি ডাক পাঠাতে ব্যয় হবে ১৫ লাখ!
দেশে বা বিদেশে ডাকযোগে চিঠি পাঠাতে খরচ কত হতে পারে? ১০০-২০০-৫০০ টাকা। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদিত প্রকল্পে দেশের ভেতরে ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠাতে খরচ ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৩০ টাকা। অনুমোদিত ওই প্রকল্পে মোট ৭৮টি ডাক পাঠাতে খরচ ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা!
সেখানে ২৯৭টি মোবাইল ট্র্যাকিং বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ২১ লাখ টাকা। প্রতিটি ট্র্যাকিংয়ে খরচ হবে সাত হাজার ৭০ টাকা। এমন আরও অনেক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রকল্পে, যা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনুমোদিত ওই প্রকল্পে দেশের ভেতরে ৩১৮টি ভ্রমণে ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ভ্রমণে ব্যয় হবে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকা। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয়ের সার-সংক্ষেপ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
• ২৯৭টি মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে লাগবে ২১ লাখ টাকা
• ৩১৮টি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ব্যয় ৪ কোটি ২৪ লাখ
• ৪১৪ জনের সম্মানীতে ব্যয় পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা (ইরেসপো-দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের নামে প্রকল্পে ডাক, ভ্রমণসহ বেশ কয়েকটি খাতের ব্যয় যৌক্তিক বলে মনে করছেন না কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয়ের সার-সংক্ষেপে যা আছে
৬০টি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে মোট ব্যয় হবে ১৯ লাখ টাকা। আপ্যায়নে ব্যয় হবে ১০ লাখ টাকা। শ্রমিক মজুরিতে ১৫ লাখ; ৫৯টি আইন সংক্রান্ত ব্যয় ২০ লাখ; ২৫১টি সেমিনার/ওয়ার্কশপ/সভাতে খরচ হবে এক কোটি ১৯ লাখ; ৫৯টি নিবন্ধন ফি’তে খরচ হবে সাড়ে ১৯ লাখ, ১১ হাজার ৮০০টি কমিশনে যাবে ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৪৪ হাজার ৫৪০ জনকে প্রশিক্ষণ বাবদ খরচ হবে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ১১ হাজার ৮০০ জন কিশোরীকে প্রশিক্ষণ দিতে খরচ হবে আট কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২৯৫টি অভ্যন্তরীণ বদলি ব্যয়ে যাবে ৩০ লাখ টাকা। ৪১৪ জনের সম্মানীতে ব্যয় হবে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ২৩২টি টেলেক্স/ফ্যাক্সে যাবে ৪৯ লাখ টাকা। ৭৭টি টেলিফোন/মোবাইলের পেছনে ব্যয় হবে ২৩ লাখ টাকা।
এ কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্টে আছেন ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুল আলম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঋণ বিতরণ এবং আদায়ে যেসব মাঠকর্মী ফিল্ডে (মাঠে) যাবেন তাদের জন্য এ অর্থ ব্যয় হবে। অনুমোদিত সরকারি বিধি অনুযায়ী এ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কুরিয়ার বা ডাকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় যেসব চিঠি পাঠানো হবে সেসব চিঠিপত্র আদান-প্রদানে সমুদয় অর্থ ব্যয় হবে। এখানে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের সার-সংক্ষেপে ৭৮টি ডাকের জন্য ১৫ লাখ টাকা ধরা হলেও পাঁচ বছরে এ অর্থ খরচ করা হবে। অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ মালামাল বা ডকুমেন্ট পাঠাতে অনেক টাকা লেগে যায়।’
মোবাইল ট্র্যাকিং বিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফিল্ডে যারা ঋণ বিতরণ-আদায় করবেন, তারা ঠিকভাবে যাচ্ছেন কি না— এটাই মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নির্ণয় করা হবে। তাদের মুভমেন্ট ট্র্যাক করতে এ ব্যয় ধরা হয়েছে। এটা মনিটরিংয়ের অংশ।’
সম্মানীর পেছনে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে কোনো বেতন দেওয়া হবে না। তাদের এ সম্মানী দেওয়া হবে। এ খাত থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে ৪১৪ জনকে সম্মানী দেওয়া হবে।’
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্পটি একনেক সভায় তোলা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পটি জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)।
খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের ১৭ জেলার ৫৯টি উপজেলার ৪৭২টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বিআরডিবি জানায়, পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র, অসহায়, সুবিধা-বঞ্চিত ও বেকার মহিলাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। পল্লী কর্মসংস্থান সৃজন ও জাতীয় দারিদ্র্যের হার কমাতে এটি অবদান রাখবে। প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
প্রকল্পটির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা পাওয়া সুফলভোগী সদস্যদের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এছাড়া স্কুলগামী কিশোরীদের গড় মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকার নিজস্ব সঞ্চয় তহবিল সৃষ্টি করা হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঞ্চয় প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত স্কুলগামী কিশোরীদের শতভাগ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা, গ্রামীণ শিক্ষিত বেকার মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ নোয়াখালী পল্লী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং মানব সম্পদ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে একনেকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এসআর/এসএম/এমএআর