কিছুতেই থামে না মাদকের ঢেউ
• ১২ বছরে মাদক মামলা ৮ লাখ ৮ হাজার ৯৩০
• আসামি ১০ লাখ ৩০ হাজার ৮শ ৩২ জন
• ১২ বছরে ইয়াবা জব্দ ২৩ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৯শ ৭৯ পিস
• ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ৫৯৯ মাদক কারবারি নিহত
• ‘গণতন্ত্র-নৈতিকতা না থাকলে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়’
দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কত তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। মাদকের ছোবলে কত পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা বা স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে, তারও সঠিক হিসেব নেই। প্রতিদিন যে পরিমাণ মাদকদ্রব্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জব্দ হয়, এ থেকে মোটাদাগে স্রেফ একটা ধারণা পাওয়া যায়, ডালপালা মেলে কতটা বিস্তৃত হয়েছে মাদক কারবারীদের নেটওয়ার্ক।
মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে শক্ত আইনও প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ। ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন ও প্যাথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, পরিবহন, চাষাবাদ, উৎপাদন, আমদানি-রফতানি বা বাজারজাতে রাখা হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান। তবে এমন শাস্তির খড়্গও ঠেকাতে পারছে না মাদকের চোরাচালান।
বিজ্ঞাপন
আইন কিংবা মাদক নির্মূলে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টার পরও ইয়াবাসহ মাদক আসছেই। সীমান্তে কড়াকড়ি, কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ, গণআত্মসমর্পন কিংবা কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে বিশেষ ও যৌথ নজরদারি জোরদারের পরও বন্ধ হয়নি মাদক আসা।
গত ১২ বছরের পরিসংখ্যান বলছে মাদকের চোরাচালান বেড়েছে। এমন কোনো দিন নেই সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির হাতে মাদকদ্রব্য জব্দ হচ্ছে না। মাদকের ট্রানজিট রুট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার।
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে লড়াইটা দৃশ্যত ইয়াবার বিরুদ্ধে; যা আসে গোলাপি ট্যাবলেট হিসেবে। এটি তৈরি হয় মূলত মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে। কখনও কখনও এর সাথে হেরোইন মেশানো হয়। এ মাদকের মূল উপাদানগুলোর চোরাচালান বেশি হচ্ছে থাইল্যান্ড, চীন, মিয়ানমার থেকে।
বাংলাদেশে যে ইয়াবা ঢুকছে তার একটা বড় অংশ আসছে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজারের টেকনাফ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে নানা কৌশলে তা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। টেকনাফ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মাদকবিরোধী তৎপরতাও তাই বেশি।
গত বছরের জুলাইয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার পর ওই সড়কে একদিকে যেমন কড়াকড়ি, নজরদারি বেড়েছিল, তেমনি কমেছিল দেশে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। তবে ওই ঘটনা চাপা পড়তেই ইয়াবা আসা ফের বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক ভূমিকায়। বিজিবি মাদকের চোরাচালান বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ও সীমান্ত বাসিন্দাদের মধ্যে মাদকবিরোধী সচেতনতায় কাজ করছে বিজিবি।
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো অপরাধই রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব না। আর মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধের সামনে-পেছনে অনেকের সম্পৃক্ততা থাকে। ইয়াবার বাহক বা কারবারির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নেপথ্যে থেকে যারা ডিমান্ড তৈরিসহ সব ধরনের অপকর্ম করছে তাদের শনাক্ত করা। আমরা ইতোমধ্যে এমন মাদকের মাস্টারমাইন্ডদের তালিকা আদালতে দাখিল করেছি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ১২ বছরে মাদক আইনে মামলা হয়েছে ৮ লাখ ৮ হাজার ৯৩০টি। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১১ সালে, ৩৭ হাজার ৩৯৫টি। পরের ছয় বছরে মামলার সংখ্যা কমলেও ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা লাখ পেরিয়ে যায়। ২০১৯ সালে মামলা হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৮টি, ২০২০ সালে ৮৫ হাজার ৭১৮টি। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র দুই মাসেই মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৪৮টি।
১২ বছরে মাদক মামলায় আসামি ১০ লক্ষাধিক
প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মাদকদ্রব্যসহ ধরা পড়েন মাদক কারবারিরা। নিয়মমাফিক তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। গত ১২ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় এক বছরে মাদক মামলায় সর্বনিম্ন আসামি হয়েছেন ৩৪ হাজার ৩১৫ জন, আর সর্বোচ্চ আসামি হয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৪৭ জন।
মাদক মামলায় ২০০৯ সালে গ্রেফতার হন ৩৪ হাজার ৩১৫ জন, ২০১০ সালে ৩৭ হাজার ৫১০ জন, ২০১১ সালে ৪৭ হাজার ৪০৩ জন, ২০১২ সালে ৫৪ হাজার ১০০ জন, ২০১৩ সালে ৪৭ হাজার ৫৩১ জন, ২০১৪ সালে ৬২ হাজার ৮০ জন, ২০১৫ সালে ৭০ হাজার ১৫৯ জন, ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার ১৪ জন, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৩ জন, ২০১৮ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৪৭ জন, ২০২০ সালে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ জন। আর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ হাজার ১১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন মাদক মামলায়। ১২ বছরে মোট আসামি হয়েছেন ১০ লাখ ৩০ হাজার ৮৩২ জন।
২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে মাদকব্যবসা ও চোরাচালানে জড়িত ৫৯৯ জন নিহত হয়েছেন। এরপরও মাদক বিশেষ করে ইয়াবা আসা বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী যখন মাদকে আসক্ত হন, তখন এর অপকারিতা বা ক্ষতির দিক সম্পর্কে তারা জানতেন না। নিছক আগ্রহ বা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তারা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
১২ বছরে সবচেয়ে বেশি জব্দ মাদকের নাম ইয়াবা
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত মাদকের নাম ইয়াবা। ২০০৯ সালে এই ইয়াবা জব্দ করা হয় ১৩ লাখ ২ হাজার ২৮৭ পিস, ২০১০ সালে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭১৬ পিস, ২০১১ সালে ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৩০১ পিস, ২০১২ সালে ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৫ পিস, ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮ পিস, ২০১৪ সালে ইয়াবা জব্দ করা হয় ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬৯ পিস, ২০১৫ সালে ২ কোটি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮১ পিস, ২০১৬ সালে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ১৭৮ পিস, ২০১৭ সালে ৪ কোটি ৭৯ হাজার ৪৪৩ পিস, ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৮ পিস, ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৮ পিস, ২০২০ সালে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজার ১৭ পিস এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৮ পিস ইয়াবা। গত ১২ বছরে মোট ইয়াবা জব্দ হয়েছে ২৩ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৯ পিস। অর্থাৎ গত ১২ বছরে দিনে গড়ে ৫২ হাজারের বেশি ইয়াবা জব্দ হয়েছে।
গত ১২ বছরে হেরোইন জব্দ হয়েছে ২৫৯৩ কেজি, কোকেন ৪৫ কেজি, আফিম ২৭৭ কেজি, গাঁজা ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৭ কেজি, ফেনসিডিল ১ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ১৭৫ বোতল ও ২২ হাজার ৪৩৭ লিটার, বিদেশি মদ ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৭ বোতল ও ১১ হাজার ৮০০ লিটার, বিয়ার (ক্যান) ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৪১, বিয়ার বোতল ৫৫ হাজার ৫৮৮টি, ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৩২০টি ইনজেকটিং ড্রাগ (এ্যাম্পুল) জব্দ করা হয়েছে।
সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিলে সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ২৭৬ পিস ইয়াবা, ১৮ হাজার ৩৫৯ বোতল ফেনসিডিল, ১৭ হাজার ৬৫৩ বোতল বিদেশি মদ, ১৩শ ৫৫ ক্যান বিয়ার, ১৭শ ১৭ কেজি গাঁজা, ১৩ কেজি ৯৭ গ্রাম হেরোইন, ১৯ হাজার ৬৫৮টি উত্তেজক ইনজেকশন, ৪ হাজার ৫৯৮টি ইস্কাফ সিরাপ, ১১ হাজার ৫৯৮টি এ্যানেগ্রা ট্যাবলেট এবং ২ লাখ ১১ হাজার ৯৯৭টি অন্যান্য ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
চলতি বছরের শুধু মে মাসেই দেশের সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে আট লাখ ৯২ হাজার পিস ইয়াবা, ১৮ হাজার ৫০৮ বোতল ফেনসিডিল, ১৩ হাজার ৩৮ বোতল বিদেশি মদ, এক হাজার ৮৫৮ ক্যান বিয়ার, এক হাজার ৫৮৮ কেজি গাঁজা, ১৬ কেজি ৮৭৯ গ্রাম হেরোইন, ১৩ হাজার ৩৫৫টি উত্তেজক ইনজেকশন, চার হাজার ২৮২টি ইস্কাফ সিরাপ, ২০ হাজার ৯৯৫টি এ্যানেগ্রা বা সেনেগ্রা ট্যাবলেট এবং দুই লাখ আট হাজার ৬১৫টি অন্যান্য ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
নতুন আতঙ্ক এনপিএস, আইস ও এলএসডি
ইয়াবার মতো মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি ও অভিযানের মধ্যে বিকল্প হিসেবে নতুন ধরনের মাদকের বাজার তৈরির অপচেষ্টাও থেমে নেই। মাদকসেবীরাও ঝুঁকছেন নতুন মাদকে। ইয়াবার বিকল্প হিসেবে বাজারে খাত বা এনপিএসের মতো মাদকের আবির্ভাব ঘটেছে।
নিউ সাইকোট্রফিক সাবস্টেনসেস (এনপিএস) বা খাত প্রথম ধরা পড়ে ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট। তবে আরও দুই বছর আগে এ ব্যাপোরে সতর্ক করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এনপিএস বা খাতের চালান জব্দের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে সময় তদন্তে উঠে আসে ২১ প্রতিষ্ঠান এনপিএস বা খাত আমদানি ও ব্যবসায় জড়িত।
২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আইস বা ক্রিস্টাল মেথ নামক নতুন মাদকের সন্ধান পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় নজরদারিতে রেখে ২০১৯ সালের ২৭ জুন ফাঁদ পেতে এক নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর জানায়, ইয়াবার চেয়ে ৫০ গুন বেশি শক্তিশালী ‘আইস’। আইস উচ্চমাত্রার মাদক যা সেবনের পর মানবদেহে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। আইসের দাম ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি। আবার ক্ষতি বা প্রভাবও বেশি।
এলএসডি নামক নতুন মাদকের আবির্ভাব ঘটে ২০১৯ সালে। ওই সময় মহাখালীর ডিওএইচএসে দুই তরুণের কাছ থেকে ৪৬ স্ট্রিপ এলএসডি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলাও হয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এলএসডি নেশাগ্রস্থ হয়ে নিজের গলা নিজেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে মারা যাওয়ার পর ফের আলোচনায় আসে এলএসডি। লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইড বা এলএসডি এক ধরনের তরল। সাধারণত ব্লটিং পেপারের ওপরে এই তরল মাদক ফেলে সেই কাগজ শুঁকে নেশা করে মাদকাসক্তরা। এলএসডি মাখা এক-একটি ছোট ছোট টুকরো ব্লটিং পেপারের দাম কয়েক হাজার টাকা।
নতুন পথে নতুন কৌশলে আসছে ইয়াবা
ইয়াবা টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তবে গত কয়েক বছরে পুরোনো পদ্ধতি বদলে নতুন কৌশলে নতুন পথে আসছে এ মাদকের চালান। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। ইয়াবা এখন কুড়িগ্রাম হয়ে ভারত থেকেও প্রচুর পরিমাণে আসছে। চোরাচালানে মাদক কারবারিরা দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলো বিশেষ করে পটুয়াখালীর সমুদ্রসীমাকে ব্যবহার করছে। এরপর পণ্যবাহী ট্রাকে, পিকআপে, মুরগির খোপে, বাহকের পেটে, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, নারিকেল, ডাবের ভেতরে করে জেলায় জেলায় পাচার হচ্ছে ইয়াবা।
মিয়ানমার সীমান্তে ৪৯ ইয়াবা ল্যাব
বাংলাদেশ ঘেঁষা মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে তোলা ৪৯টি গোপন ইয়াবা ল্যাবের তালিকা ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলকে (সিসিডিএসি) দিয়েছিল বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। ডিএনসির প্রত্যাশা ছিল, মিয়ানমার বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু গত চার বছরের চিত্র ঠিক যেন উল্টো।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদর দফতরের মিডিয়া অফিসার লে. কমান্ডার আমিরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নৌ ও সমুদ্র সীমায় এখনো যে কোস্টগার্ডের নজরদারি এড়িয়ে মাদক চোরাচালান হচ্ছে না, তা নয়। তবে আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কোস্ট গার্ডের নজরদারি সক্ষমতা বেড়েছে। চোরাচালান কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সীমান্ত পথে মাদকের চোরাচালানে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা অবশ্যই অ্যালার্মিং। এটা বন্ধে কার্যকরী সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক মুহাম্মদ আহসানুল জব্বার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সর্বশেষ ২০২০ সালেও ভার্চুয়ালি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। আমরা একই দাবি জানিয়েছি, মিয়ানমার যেন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়, ইয়াবার ল্যাবগুলো গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু মিয়ানমার দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সীমান্ত পেরিয়ে ইয়াবা দযাচ্ছে জেলা-উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএনসি কি ব্যর্থ জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, নার্কটিক্সের অনেক সীমাবদ্ধতা। এরপরেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা সম্প্রতি ডগস্কোয়াড, আর্মস মোবাইল ট্র্যাকার চেয়েছি। জনবল নিয়োগ হচ্ছে। এগুলো হলে ডিএনসি’র সক্ষমতা ও আভিযানিক পরিচালন ক্ষমতা বহুগুন বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে মাদক বিশেষজ্ঞ সাবেক সচিব ভূইয়া শফিকুল ইসলাম বলেন, যদিও বলি আমাদের অনেক দেশপ্রেম, স্বাধীন দেশ... কিন্তু এই দেশ কী করে মাদকে ডুবে গেল? আসলে মাদক এ দেশে ঠেকানো সম্ভব না। যে দেশে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ থাকে না, যে দেশের সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর ভর করে চলে, সে দেশে নৈতিকতা থাকে না। এখানে নৈতিক মানুষরাই বিপন্ন ও সংখ্যালঘু। দুর্বৃত্তরা সর্বত্র ছড়ি ঘুড়াচ্ছে। যে কারণে আইন যতোই কঠিন করুন না কেন নৈতিকতা না থাকলে মাদক নির্মূল সম্ভব না।
জেইউ/এনএফ