রমজানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আলেমদের গ্রেফতার বন্ধ, কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়াসহ চার দফা দাবি তুলে ধরে হেফাজতে ইসলাম। সরকারও দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল— দাবি সংগঠনটির। কিন্তু এখনো গ্রেফতার অভিযান চলমান থাকায় এবং মাদরাসাগুলো খুলে না দেওয়ায় হতাশ তারা। 

এরপরও অরাজনৈতিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ফের সাক্ষাতের চেষ্টা চালাচ্ছেন হেফাজতের নেতারা। একইসঙ্গে হেফাজতের পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজও শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।

হেফাজতের নেতারা বলছেন, গত ৪ মে রাতে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই সাক্ষাতে হেফাজতের পক্ষ থেকে গ্রেফতার হওয়া আলেমদের মুক্তি দেওয়া, নতুন করে গ্রেফতার বন্ধ করা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সংঘটিত তাণ্ডবে দায়ের হওয়া মামলাগুলো আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাহার করা এবং কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি তুলে ধরা হয়। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়। কিন্তু হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি থেমে থাকেনি। সর্বশেষ ২২ মে গ্রেফতার হন হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইনামুল হাসান ফারুকী

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডব
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার না করাসহ বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো মেনে নেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি থেমে থাকেনি। ফলে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা

এছাড়া এখনো কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, নতুন করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। তারা তাদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকারের হয়রানি ও কথা না রাখায় হতাশা বাড়ছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

এ বিষয়ে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন তো হচ্ছে না, উল্টো আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি।’

বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে হেফাজতের তাণ্ডব

সরকার কথা রাখছে না। এ বিষয়ে আপনাদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়ার তো কিছু হয়নি। তারা (সরকার) বাস্তবায়ন করে কি না, সেটা দেখছি। কীভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেটার অপেক্ষা আছি আমরা।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তো আমাদের দুবার দেখা হয়েছে। আপাতত আর দেখা করার চিন্তা-ভাবনা নেই। কিন্তু আমাদের যোগাযোগ আছে। দেখি কী হয়?’

হেফাজতের বর্তমান কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরও গ্রেফতার হচ্ছে। অন্যদিকে, সরকারের সঙ্গে শফীপন্থীদের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। ফলে জুনায়েদ বাবুনগরীপন্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

র‌্যাবের হাতে আটক জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রেস সচিব ইনামুল হাসান

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি আবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হচ্ছে না।’

সরকারের সঙ্গে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীদের যোগাযোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের

এদিকে, সরকারের সঙ্গে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারীদের যোগাযোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের। তারা বলছেন, শফীপন্থী অনুসারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খবর শোনা যাচ্ছে, তারা নাকি হেফাজতের নামে কমিটি করবে। কিন্তু তাদের আগে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন যে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি আছে সেটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও গুছিয়ে আনা হয়েছে। তবে এবার কমিটিতে ভারসাম্য আনা হবে। সেখানে সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত এমন নেতাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে আবারও সরকারের বিরাগভাজন হলে নতুন ঝামেলায় পড়তে হবে সংগঠনটির।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। ঘোষণা হলে জানতে পারবেন।

হেফাজতের কমিটিতে রাজনৈতিক দলের কাউকে রাখা যাবে না— সরকারের পক্ষ থেকে এমন শর্ত আরোপ করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে এমন শর্ত আরোপের বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকার আমাদের এ ধরনের কোনো শর্ত দেয়নি।’

এএইচআর/এমএআর/