গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরের চারটি শাখার পাশাপাশি ঢাকার কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এর মধ্যে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমির কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও বাঙলা কলেজ। 

নতুন কমিটি নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করছেন।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্যাম্পাসগুলোর জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পদবঞ্চিতরা তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের কথা জানান দিতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। তারা বলছেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ‘মাই ম্যান’ কমিটি দেওয়া হয়েছে।

পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক কমিটি দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে গত দুই দিনে ঢাকার ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, আগুন জ্বালানো, কুশপুত্তলিকা দাহসহ নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার মতো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।

বিশেষ করে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে দলটির পদবঞ্চিতরা তীব্র নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এসব ইউনিটের ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে ‘অছাত্র, অনিয়মিত ও ছাত্রলীগ নিয়ে গঠিত পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে ক্যম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আন্দোলন শুরু করেছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণার পরপরই ক্যম্পাসে আসেন পদবঞ্চিতরা। সেখানে তারা অবস্থান, শোডাউন, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে আহবায়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। রাতভর ক্যম্পাসে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে আবার ভোর থেকেই ক্যম্পাসের গেটসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে এসব নেতাকর্মীদের। 

কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও যাচাই ছাড়া হুট করে কমিটি ঘোষণার ফলে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার দায়ভার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারী এবং বিএনপির ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টাকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন পদবঞ্চিতরা। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারি বিভিন্ন ইউনিটে নিজেদের লোক তথা ‘মাই ম্যান’ বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কারা যোগ্য ও ত্যাগী এসব দেখার সময় তাদের নেই। ইউনিট চালানোর মতো যোগ্যতা ও দলের প্রতি ত্যাগ বিবেচনা করে একটু সময় নিয়ে কমিটি দিলে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্লাত পাটোয়ারী বলেন, প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি কারো সাথে কোনো পরামর্শ না করে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত লোকদের দিয়ে একটি পকেট কমিটি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা সক্রিয় রাজনীতি করে আসছে তাদের উপেক্ষা করে ঘোষিত এই কমিটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কমিটি ঘোষণার পর ক্যম্পাসে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে এর দায় কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি কোনোভাবে এড়াতে পারেন না। এ কমিটি বাতিল করে নতুন করে যোগ্যতা ও দলের প্রতি ত্যাগ বিবেচনা করে কমিটি ঘোষনা না করা পর্যন্ত আমরা ক্যম্পাসের অবস্থান ছাড়ব না।

কমিটি নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন পুরান ঢাকার আরেক প্রতিষ্ঠান সরকারি কবি নজরুল কলেজের সদ্য সাবেক সভাপতি মো. সাইয়্যেদুর রহমান সাঈদ। তিনি বলেন, বিগত দিনে যতগুলো কমিটি গঠন করা হয়েছে প্রত্যেকটি কমিটি গঠনের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চলমান কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারির সাথে কিছুটা হলেও আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এবার আমাদের সাথে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা না করেই আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যখনই আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম কমিটি দেওয়া হবে তখন থেকেই কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই আমরা সক্ষম হইনি। আমার নিজের কোনো প্রার্থী ছিল না। তবে যারা ছাত্রদলের হয়ে নিয়োমিত দলীয় প্রোগ্রাম করেছে তাদের ত্যাগকে যেন পরবর্তী কমিটিতে অবমূল্যায়ন না করা হয় সেজন্য আমরা যোগাযোগ করতে গিয়েও পারিনি।

যাকে এখন আহ্বায়ক করা হয়েছে তিনি আমাদের ৩৮টি মিছিলের মধ্যে ৮টিতে এবং সদস্য সচিব মাত্র ৩টি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন। অথচ যারা নিয়মিত প্রোগ্রাম করেছে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর কারণ একমাত্র কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারিই বলতে পারবেন। এছাড়া কমিটিতে এমন কিছু নাম দেখতে পেয়েছি তাদের আমি নিজেই চিনি না। বর্তমান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে জিজ্ঞেস করার পর তারাও বলেছেন যে, তাদেরকে চেনেন না।

একই ধরনের কারণের কথা বলে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাও। তারা কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারির কুশপুত্তলিকা দাহ করার মতো কর্মসূচিও পালন করেছেন।

গতকাল বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে ঢাকা কলেজের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। 

এসময় তারা ‘রাকিব নাছিরের কমিটি, মানি না মানব না’, ‘ছাত্রলীগের কমিটি, মানি না মানব না’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে, আমরাই থাকবো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা সাইন্সল্যাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে তারাই আজ ছাত্রদলের কমিটিতে এসেছে। আর আমরা যারা সাধারণ ছাত্রদের পাশে ছিলাম, আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম তারা পদবঞ্চিত। আমরা বলতে চাই, আপনারা যে কমিটি দিয়েছন সেখানে বিচক্ষণতার দরকার ছিল। তাই আমরা যারা রাজপথে ছিলাম তারা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম

পদবঞ্চিত নেতা ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, আমি ঢাকা কলেজে ভর্তির পর থেকে ছাত্রদল করি। এ পর্যন্ত যত প্রোগ্রাম ছিল সব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। ২০১৭ সালে যে কমিটি হয়েছিল সেখানে সদস্য ছিলাম এবং তার পরের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। গত ২৮ অক্টোবরের পর জীবন বাজি রেখে রাজপথে ছিলাম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তারেক রহমানের নির্দেশে সাধারণ ছাত্রদের পাশে থেকে আমরা সাইন্সল্যাব, ঝিগাতলা ও ঢাকা কলেজ এলাকায় আন্দোলন চালিয়ে যাই। আর এখন দলের একটি খারাপ চক্র নিয়ে কমিটি হয়েছে। ৩৬ জনের এই কমিটিতে ৪-৫ জন ছাত্রলীগের কর্মীও আছে। 

তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা সাইন্সল্যাবে আমাদের ওপর হামলা করেছে তারাই আজ ছাত্রদলের কমিটিতে এসেছে। আর আমরা যারা সাধারণ ছাত্রদের পাশে ছিলাম, আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম তারা পদবঞ্চিত। আমরা বলতে চাই, আপনারা যে কমিটি দিয়েছন সেখানে বিচক্ষণতার দরকার ছিল। তাই আমরা যারা রাজপথে ছিলাম তারা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তাসবিরুল ইসলাম বলেন, শুধু আমি নই দীর্ঘদিন যারা রাজপথে ছিল, আন্দোলন করেছে, কারা নির্যাতিত হয়েছে তাদেরকে এই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারি নিজস্ব লোকদের নেতা বানানোর জন্য এবং সেই কমিটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের অনুগতদের দিয়ে কমিটি করেছে। এ কমিটি আমরা মানি না। 

তিনি বলেন, আমরা গত ১৬ বছর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমাদের জীবনের সবকিছু দিয়ে আন্দোলন করেছি। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। আমরা রাকিবের এই অবৈধ কমিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে ন্যায্য অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে একই ধরনের অবস্থানে আছেন মিরপুর বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরাও।

তিন ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ 

ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা ঘিরে তিনটি ক্যাম্পাসে ককটেলসহ বিস্ফোরক জাতীয় কিছু বস্তু ফাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

গতকাল ঢাকা কলেজ এলাকায় সড়কে অগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত থেমে থেমে প্রায় ১০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। ঢাকা কলেজের মূল ফটক ও মিরপুর রোডের একাধিক স্থানে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিয়ে ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক জামিল বলেন, আমরা যারা পদবঞ্চিত, ত্যাগী, পরিশ্রমী নেতা ছিলাম তাদের উপর অতর্কিতভাবে বোমা হামলা করা হয়েছে। আমরা নিজ চোখে দেখেছি দুটি মোটরসাইকেল ককটেল নিক্ষেপ করে নীলক্ষেতের দিকে চলে গেছে। আমরা তাদের ধাওয়া করেও ধরতে পারিনি। 

ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ছাত্রদলের সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটির আহ্বায়ক পিয়াল হাসান বলেন, এমন ঘটনা আমি জানি না। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পেরেছি। আমাদের কেউ এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। ৫ আগস্টের পর অনেক সুবিধাভোগী দলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।

কমিটি নিয়ে বিক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বিক্ষোভ করছে তাদের অনেকেই আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা। কমিটি দিলে ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আছে দ্রুত কমিটি পূর্নাঙ্গ করার। কমিটি পূর্নাঙ্গ করার সময় যোগ্যরা পদ পাবেন।

ককটেল বিস্ফোরণ নিয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসেন উদ্দীন বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্রদলের কমিটি হয়েছে। পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ-পরবর্তী ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এজন্য কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা কলেজ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজে দুপুরের পর মূল ফটকের সামনে এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজের ভেতরে সন্ধ্যার পর ককটেল অথবা তীব্র শব্দ তৈরি করে এমন বস্তুর বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। 

ক্যাম্পাসে অনিরাপদ বোধ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণসহ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় অনিরাপদ বোধ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা হলো ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করবেন এবং একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কিন্তু এখনই ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা একেবারেই কাম্য নয়। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে ছাত্র সংসদ চালু করা। কিন্তু আমরা এখন উল্টো জিনিস দেখছি। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ তো দূরের কথা, ক্যম্পাসে আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ককটেল ফোটানো হচ্ছে। আমরা আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন এবং অনিরাপদ বোধ করছি। শিগগিরই এমন পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার। 

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাক সেটি সবার কামনা। রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শান্তির জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু এখন সেই শান্তিই বিনষ্ট হতে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে এমন কার্যক্রম হতে দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার বলি শিক্ষার্থীরা কেন হবেন? একটি সুন্দর সমাধান আসা প্রয়োজন। এটি যত তাড়াতাড়ি আসবে তত ভালো।

ছাত্রদলের নিজেদের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যম্পাসে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।

তারা বলছেন, ক্যাম্পাসে একটি সুষ্ঠু পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার নেপথ্যে যারাই থাকুক না কেন কোন ছাড় দেওয়া হবে না। ক্যম্পাসের এই পরিবেশ দেখার জন্য জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা রক্ত দেয়নি। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান প্রামানিক বলেন, গতকাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত ৩-৪ বার লাঠিসোঁটা নিয়ে শোডাউন দিয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে প্রধান ফটক বন্ধ করে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নিয়ে আছেন। এই দৃশ্য দেখার জন্যই কি আমরা জুলাই বিপ্লবে রক্ত দিয়েছি? তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত করা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। 

এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে হল পাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে সমন্বয়ক রাকিব হাসানের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে জিরো টলারেন্স : ছাত্রদল সেক্রেটারি

কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সেক্রেটারি নাসিরুদ্দিন নাসির।

কোনোভাবেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আমরাও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি বৃহত্তর সংগঠন। আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অসংখ্য ছাত্রদল নেতা নিজ নিজ ইউনিটের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তবে সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে আমরা সবাইকে প্রত্যাশিত পদে দিতে পারছি না। যারা প্রত্যাশিত পদ পাননি তারা যোগ্য নন, এমন নয়। মূল্যায়ন না হলে যদি কেউ ক্ষুব্ধ হয় তাহলে তার ক্ষোভের প্রকাশ অবশ্যই গণতান্ত্রিক রীতি এবং সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করতে হবে।

তিনি বলেন, কোনোভাবেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আমরাও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। 

নাসিরুদ্দিন আরও বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে সেগুলো মাত্র ৪৫ দিনের জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। অর্থাৎ আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সম্মেলন আয়োজন করে বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ব্যবস্থা করে বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছেই নেতৃত্ব হস্তান্তর করবে। এই কমিটির দায়িত্ব মূলত ৪৫ দিনের মধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। 

এছাড়া সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আকার সেশন অনুসারে সমন্বয় করে দ্রুত বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান তিনি। 

আরএইচটি/এমএল