দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার ‘সূতিকাগার’ হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন খ্যাতিমান চিকিৎসক ও গবেষক অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। গত ৪ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্বগ্রহণ, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন দক্ষ অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে পরিচিত দেশের চিকিৎসা সেবায় পথপ্রদর্শক এ বিজ্ঞানী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীরুল ইসলাম।

ঢাকা পোস্ট : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির সর্ববৃহৎ ও দেশসেরা বিদ্যাপীঠের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাচ্ছি।

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এটি অবশ্যই আমার জন্য আনন্দের। তবে সত্যি বলতে কী, আমি যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হব, এটি পুরোপুরি আমার ধারণার বাইরে ছিল। প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগ পর্যন্তও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সাধারণত এসব পদে কেউ এলে আগে থেকেই আঁচ করা যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনি এবং এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। এমনকি আমি কখনও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হব— এমনটা কখনও চিন্তাও করিনি। যে কারণে সর্বপ্রথম যখন খবরটা পাই, তখন আমি বেশ অবাক হই।

আমার প্রতিপালক যেহেতু আমাকে এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়েছেন, অবশ্যই আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শুধু দেশসেরা নয়, বিশ্বের মধ্যে একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। আশা করি ভালো একটা ফল পরবর্তী প্রজন্ম পাবে- উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম । ছবি- সংগৃহীত  

ঢাকা পোস্ট : নতুন বছরে নতুন দায়িত্ব, আপনার প্রত্যাশা কী?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : বলতে গেলে চলতি বছরটা বিএসএমএমইউ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। বছরের শুরু থেকে একের পর এক ইস্যু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরনের স্থবিরতা বিদ্যমান ছিল। দীর্ঘ একটা সময় প্রশাসনিক পদগুলোতে শূন্যতা ছিল। বলতে গেলে, কাজ করার মতো তখন কেউই ছিলেন না। ফলে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে আশানুরূপ কোনো উন্নতি হয়নি।

তবে, আশা করছি আগামী বছর সবাই মিলে কাজ করলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া নিয়মে এখনও কাজ চলছে। কতটা স্বস্তিতে কাজ করতে পারছেন?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : এখানে এসে যতটুকু মনে হলো, অনেক অনিয়মের উত্তরাধিকার নিয়ে নিয়মে ফেরাটা খুবই কঠিন। দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে মনে হয় সেগুলো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ একটা সময় সিন্ডিকেট একটা নিয়ম করল, পরে অন্য একটা সিন্ডিকেট সেই নিয়ম পরিবর্তন করে ফেলল। যে কারণে এ জায়গায় স্ট্রিক্ট প্রিন্সিপাল খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হয়।

নতুন প্রশাসন আসার পর একটা শূন্যতা ছিল দীর্ঘদিন। এর মধ্যে প্রচুর মানুষ বঞ্চিত ছিলেন। যে কারণে বঞ্চিত মানুষদের দীর্ঘদিনের যে একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে, এটাকে নিয়মের মধ্যে এনে সমন্বয় করতে গিয়ে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, অনেক দিনের বঞ্চিত মানুষদের চাহিদাটাও অনেক বেশি। এ ছাড়া গত সময়টাতে বঞ্চনার পরিমাণটা অনেক বেশি ছিল। এ কাজটা না করে তো অন্য কোনো দিকে এগোনোও সম্ভব নয়। ফলে দেখা গেছে, বড় একটা সময় আমাকে এগুলো নিয়ে লেগে থাকতে হয়। এমনকি কাজগুলোতে কখনও কখনও সময়ও বেশি লাগছে।

এদিকে, বঞ্চিত মানুষদের জন্য সময় লাগাটা, এটা মেনে নেওয়াও অনেক কঠিন। আবার নিয়মের মধ্যে এটা সমাধান না করলে তিনি হয়তো আবারও বঞ্চিত হতে পারেন। তবে ভালো লাগার বিষয় হলো, প্রশাসন এরই মধ্যে বেশকিছু বঞ্চিত চিকিৎসক ও কর্মকর্তার প্রমোশনের ব্যবস্থা করেছে। আমরা চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঢেলে সাজানোর। সফলতা পেতে হয়তো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে, এর ভালো একটা ফল পরবর্তী প্রজন্ম পাবে— এটা আমার বিশ্বাস।

ঢাকা পোস্ট : বিএসএমএমইউয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছিল— এমনটি শোনা যায়। এ জায়গায় আপনি কতটা স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয় হবে দুর্নীতিমুক্ত— এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। কেউ যদি অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রয়োজনে আমরা সেটিই করব। যখনই এ রকম বিষয় কানে আসবে, তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। সর্বোপরি আমি যদি এ জায়গায় আমার পরিকল্পনাগুলোকে শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে অবশ্যই এ প্রতিষ্ঠান থেকে সব অনিয়ম-দুর্নীতি চিরতরে অবসান হবে।

বিএসএমএমইউতে ইথিক্যাল রিসার্চ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম । ছবি- সংগৃহীত 

ঢাকা পোস্ট : শেখ হাসিনার শাসনামলে পূর্ববর্তী ভিসিদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : গত ৫ আগস্টের পর নতুন প্রশাসনে আমরা দায়িত্ব নিই। এরপর গত ১৬ বছরের সব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এমনকি সর্বশেষ সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগের পুরো সময়কালের সব অনৈতিক কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়েও যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সে বিষয়েও আমরা একটি পৃথক তদন্ত কমিটি করেছি। এমনকি সেই কমিটির রিপোর্টও (প্রতিবেদন) আমাদের কাছে জমা হয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।

আপনারা জানেন, ড. শারফুদ্দিন সাহেবের সময়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়োগ বাণিজ্য এবং পরীক্ষায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছিল, সেগুলো নিয়ে পরবর্তী ভিসির (দীন মো. নূরুল হক) সময়েই দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। তবে, দুটি রিপোর্টেই অস্পষ্টতা রয়েছে। যে জন্য আমরা মনে করছি সে বিষয়ে আরেকটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টা হয়তো এভাবে আর ঝুলে থাকবে না। আমাদের হয় বলতে হবে অনিয়ম হয়েছে, অন্যথায় বলতে হবে অনিয়ম হয়নি। এখন যেহেতু এটা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে, একটা সমাধান আমাদেরকে করতেই হবে। হয়তো আমাদের আগামী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে বিষয়টি উঠবে এবং সবার পরামর্শ নিয়ে সেই নিয়োগ পরীক্ষা কি পুরোটা বাতিল হবে, নাকি আংশিক বাতিল হবে— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঢাকা পোস্ট : এখনও অসংখ্য ফ্যাসিবাদের দোসর তাদের নিজ নিজ জায়গাগুলোতে রয়ে গেছে। তাদের বিষয়ে বর্তমান প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কি না?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে সবগুলো ডিন পদে পরিবর্তন এসেছে। এর বাইরে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয়তো সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তা দৃশ্যমান হতে থাকবে।

ঢাকা পোস্ট : স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিন ধরে অনেক চিকিৎসক-কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সুবিধা তারা পাচ্ছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ভাবছে কি না?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভাগীয় প্রধানদের সহযোগিতা চেয়েছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের অবহিত করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তাদেরকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করেছি। এর মাধ্যমেও আমরা রিপোর্ট পেয়ে যাব যে কারা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত।

ডিজিটাল হাজিরার বিষয়ে সবসময়ই একটা অনীহা থাকে। তারপরও আমি মনে করি, এটি একটি ভালো পদ্ধতি। আমরা ডিজিটাল হাজিরার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি, এ বিষয়ে আমরা সবার সহযোগিতা পাব।

আমাদের গবেষণাটাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিকমান্ডেড একটা জায়গায় নিতে চাই- উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম । ছবি- সংগৃহীত  

ঢাকা পোস্ট : দক্ষ অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে আপনার একটা সুনাম আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা-গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে আপনি কীভাবে ভূমিকা রাখবেন?

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম : গবেষণাটা আমার নিজেরই একটা প্যাশন। আমি আমার সাধ্য মতো গবেষণার উন্নয়নে কাজ করব। আমি আসার পর ইতোমধ্যে গবেষণার মানোন্নয়নে কিছু কার্যক্রম শুরু করেছি।

আমাদের যারা নতুন পদোন্নতি নিয়ে এসেছেন, তাদের গবেষণা ট্রেনিং আমরা শুরু করেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত লাগাতার ট্রেনিং পরিচালনা করছি। আজ একটা ট্রেনিং হয়েছে রিসার্চ এথিক্স নিয়ে। এর আগে আমরা আইআরবি নিয়ে করেছি। আমরা আমাদের গবেষণাটাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিকমান্ডেড একটা জায়গায় নিতে চাই। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখব যেন কপি-পেস্ট না হয়। আমরা একই সময়ে আমাদের শিক্ষকদের জন্যও টিচিং মেথডোলজির (শিক্ষাদান পদ্ধতি) ওপর একটা ট্রেনিং শুরু করেছি। যে ডিপার্টমেন্টগুলো এসব নিয়ে কাজ করে, তাদের নিয়ে আমাদের লাগাতার ট্রেনিং প্রোগ্রাম চলছে। প্রতিদিনই এক গ্রুপের পর আরেক গ্রুপকে ট্রেনিং করাচ্ছি। আশা করছি, টিচিং ও রিসার্চে আমরা ভালো কিছু করব।

গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ৯০ জন শিক্ষক আমাদের আছেন। আমরা তাদের তালিকা করেছি। ওই ৯০ জনকে আমরা সামনের দিনে নেতৃত্বে নিয়ে আসব। এ ছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জার্নাল আছে, সেটা ইতোমধ্যে স্কোপাস-এ ইনডেক্স হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছরের মধ্যে আমরা পাবমেডে ইনডেক্স করতে পারব।

অধ্যাপক শাহিনুল আলমের বর্ণাঢ্য জীবন

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলমের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। কর্মজীবনে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

ডা. শাহিনুল আলম মেটাবলিক অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এমএএফএলডি/এনএএফএলডি) বিষয়ে দেশের অগ্রগামী বিজ্ঞানী। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ২০২০ সালে ‘মেটাবলিক অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নির্ণয় এবং পরিচালনার জন্য ক্লিনিক্যাল অনুশীলন নির্দেশিকা’ সংক্রান্ত গবেষণা করেন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশসহ ২৯টি দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে অনেক গবেষণাপত্রে কাজ করেছেন। স্কোপাস হিসেবে ডা. শাহিনুল আলম এফসিপিএস (মেডিসিন) এবং ডক্টরেট অব মেডিসিন (এমডি) করেছেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেপাটোলজির নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীদের সংস্থা ‘গ্লোবাল ন্যাশ কাউন্সিল’-এর সম্মানিত সদস্য। তিনি ২০টি থিসিস তত্ত্বাবধান করেছেন এবং পাঁচটি থিসিসের সহ-তত্ত্বাবধান করেছেন, যারা ডক্টরেট অব মেডিসিন (এমডি) হেপাটোলজি ডিগ্রি লাভ করেছেন।

খ্যাতনামা এ চিকিৎসক বিএসএমএমইউ-এর সাতটি গবেষণা প্রকল্পের প্রধান তদন্তকারী এবং সহ-তদন্তকারী হিসেবে অনুদান পান। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) । ফাইল ছবি

কোর্স সমন্বয়কারী ও এমডি হেপাটোলজি কোর্সের পাঠক্রম কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহিনুল বিএসএমএমইউতে ২০১১ সালে শুরু হওয়া ‘রেসিডেন্সি ভিত্তিক’ পাঠ্যক্রমের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স কমিটির (আইকিউএসি) সদস্য সচিব হিসেবে তিনি মূল্যায়নের আয়োজন করেন এবং কোর্সটি আপগ্রেড করার সুপারিশ করেন।

তিনি হেপাটোলজির ওয়ার্ল্ড জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য। বর্তমানে এলসেভিয়ার, স্প্রিংগার, ব্ল্যাকওয়েল পাবলিশিং, উইলি, স্প্রিংগার নেচারসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক প্রকাশকদের পর্যালোচনাকারী হিসেবে অবদান রাখছেন এ গবেষক।

অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম ২০০৯ সাল থেকে ঢাকার হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ‘বাংলাদেশের ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য খাদ্যতালিকাগত পরামর্শ’ বিষয়ে ফুড পিরামিডের কপিরাইট অর্জন করেন।

তিনি এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার (এপিএএসএল) ও ইউরোপীয় অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারের (ইএএসএল) সদস্য। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য।

এর বাইরে দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার (আইএনএএসএল), ব্রিটিশ সোসাইটি অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির (বিএসজি) সহযোগী সদস্য, ইউরোপীয় সোসাইটি অব গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপির (ইএসজিই) সদস্য এবং ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপির (আইএসজিই) আজীবন সদস্য।

টিআই/