করোনার ভ্যাকসিন/ ছবি সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ভারতের পক্ষ থেকে ‘নিষেধাজ্ঞা’ দেয়া হয়েছে বলে সোমবার (৪ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিকসহ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো আপাতত পাচ্ছে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে এ  বিষয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, তাদের টিকা রপ্তানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

তবে কোম্পানিটি এখন অন্য দেশে টিকা রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা পেতে কয়েকমাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সোমবার সেরাম ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এসব কথা জানান।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ তাদের টিকা রপ্তানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

এদিকে, টিকা রপ্তানি না করতে পারার বিষয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা আসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেয়া সাক্ষাৎকারে সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা বলেন, রোববার ভারতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তাদের ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দিয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে- ভারতের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে পারবে না। আমরা এ মুহূর্তে শুধু ভারত সরকারকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারব। এমনকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও ভ্যাকসিন বিক্রি করা থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে ভ্যাকসিন মজুত না করার বিষয়েও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেন জানান পুনাওয়ালা। মূলত, তার এমন বক্তব্যের পরই ভারতের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন রপ্তানিতে ‘নিষেধাজ্ঞা’ দেয়া হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা 

রপ্তানি শুরুর আগেই ভারত সরকারকে ১০ কোটি টিকা দেবে সংস্থাটি। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা রপ্তানি করতে পারবে না, যেহেতু তাদের রপ্তানির অনুমতি নেই।

তবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ‘ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে সরকার এখনও নিরাশ নয়’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘ভারতের বন্ধুত্বে আমাদের আস্থা আছে, ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। আমরা নিরাশ হচ্ছি না, চুক্তির বিষয়ে তারা অনার করবে (সম্মান)। আজকের মধ্যে যে কথা হয়েছে, তা পজিটিভ হিসেবে দেখছি। আলোচনার কারণে আমরা আশ্বস্ত হচ্ছি, নিরাশ হচ্ছি না।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমি এখন যে ফোনটা করলাম, ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনারের কাছে… তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আমরা যে চুক্তি করেছি এটার অর্থনৈতিক যে লেনদেন, অর্থাৎ কীভাবে টাকাটা যাবে… যেহেতু কাজটি জিটুজি। অর্থাৎ সরকার টু সরকার। কিন্তু ভারত সরকার যে বিষয়টি বলেছে, কমার্সিয়াল অ্যাক্টিভিটিজের (বাণিজ্যিক কার্যক্রম) ওপর নিষেধাজ্ঞা হয়েছে। আমাদের গুলোতে না। কারণ এটি সরকার টু সরকার।’

এদিকে, চুক্তি অনুযায়ী আগামী মাসের শুরুতেই বাংলাদেশ সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে পুরো তিন কোটি টিকা পেতে ভারতীয় সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা সেরামের অ্যাকাউন্টে রোববার জমাও দেয়ার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

সব দেশ টিকা পাবে?

১৭২টি দেশের একটি জোট (যুক্তরাষ্ট্র এ জোটে নেই) কোভ্যাক্স। সব দেশের সব নাগরিকের কাছে দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত ও পক্ষপাতহীন উপায়ে ভ্যাকসিন পৌঁছানোর নিশ্চয়তা চায় এ জোট। প্রাণঘাতী ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের জীবনরক্ষায় টিকা প্রদানে ভূমিকা রেখে আসা আন্তর্জাতিক জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহ-নেতৃত্বে কোভ্যাক্স ৯টি ফার্মাসিউটিক্যালস ডেভেলপারের কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ব্যবস্থা করে রেখেছে। ভ্যাকসিনগুলো অনুমোদন পেলেই তা সংগ্রহ করা হবে।

ভ্যাকসিনের ২০০ কোটি ডোজ সংগ্রহের উদ্দেশে ২০২১ সালের মধ্যে কোভ্যাক্স ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে চায়। কিন্তু কোনো ভ্যাকসিনের যদি একটি ডোজেও কাজ হয় (এখনও অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলোর দুটি ডোজ প্রয়োজন হয়) তবেও ২০০ কোটি ডোজ দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না। আর যদিও এমন আশা আছে যে, ভারতের মতো দেশগুলোতে উৎপাদকরা স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে, তারপরও বৈশ্বিক জোগান চাহিদার চেয়ে কমই থেকে যাবে। এরপরও আপাতত ভারত টিকা রপ্তানি করতে পারবে না বলে যে সিদ্ধান্ত জানা গেল তাতে পরিস্থিতি কার্যত আরও জটিল হচ্ছে।

এফআর