রেলের দুই বছরের প্রকল্প ঝুলে আছে ৯ বছর
রংপুর, রাজশাহী, ফরিদপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল। এই অঞ্চলে লেভেল ক্রসিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণে নেওয়া একটি প্রকল্প দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ঝুলে আছে। ২০১৫ সালে নেওয়া দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৪ সালে এসে নতুন করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। এতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেভেল ক্রসিংয়ে স্থায়ী গেট কিপার নিয়োগ নিয়ে তৈরি জটিলতা থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়। এখন ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প গিয়ে ঠেকছে ১৩১ কোটিতে।
বিজ্ঞাপন
প্রকল্পের নাম ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’। এটির তৃতীয় সংশোধনীর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এটি নিয়ে সভা করেছে।
প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরপর প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে হয় ১১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বর্তমানে তৃতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর আগে প্রকল্পটি একনেক সভায় দুবার সংশোধন করা হয়। এসব সংশোধনীতে ব্যয় ছাড়া মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন
প্রকল্পের গুরুত্ব
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলে অনুমোদিত গেট রয়েছে ৯৭৮টি এবং অননুমোদিত গেট রয়েছে ২৭১টি। ৯৭৮টি অনুমোদিত গেটের মধ্যে ২২১টিতে গেট কিপার রয়েছেন। বাকি লেভেল ক্রসিং যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় এবং প্রয়োজনীয় গেট কিপার না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং দ্রুত মেরামত ও আপগ্রেডেশন এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক গেট কিপার নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
প্রকল্পের অধীনে যেসব কাজ হবে
এই প্রকল্পের অধীনে যেসব কাজ সম্পাদন করা হবে তার মধ্যে আছে- ৮৫১ জন গেট কিপার নিয়োগ, ৪৪৪০ বর্গমিটার গুমটি ঘর নির্মাণ/পুননির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেট সংলগ্ন ৪৭ হাজার ৯৭১ বর্গমিটার রোড সারফেস মেরামত, ৩১২ সেট গেট বেরিয়ার স্থাপন, ৪১৯ টন চেক রেল, ১০ হাজার ১৭১টি বেয়ারিং প্লেট, ১৪ হাজার ২১৮টি চেকব্লক, ৭ হাজার ৯৩৯টি চেকবোল্ট, ৫২ হাজার ৩১১টি ডগস্পাইক, ৫ হাজার ৪৮৫টি উডেন স্লিপার সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় সিগন্যালিং ওয়ার্ক সম্পাদন এবং লোডিং আনলোডিংয়ে ৩২২টি গেট তৈরি।
এখন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয় ৫ বার!
সর্বপ্রথম প্রকল্পটি জুলাই ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ওই সময়ের মধ্যেও বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর আবার তৃতীয়বারের মতো একবছর সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়েও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলে অনুমোদিত গেট রয়েছে ৯৭৮টি এবং অননুমোদিত গেট রয়েছে ২৭১টি। ৯৭৮টি অনুমোদিত গেটের মধ্যে ২২১টিতে গেট কিপার রয়েছেন। বাকি লেভেল ক্রসিং যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় এবং প্রয়োজনীয় গেট কিপার না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
এখন প্রকল্পটি তৃতীয় সংশোধনীর জন্য প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করতে চায় মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তরা আরও জানান, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরপর প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে হয় ১১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বর্তমানে তৃতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে ১৩০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন
তৃতীয় সংশোধনীর যুক্তিতে যা জানায় মন্ত্রণালয়
২০১৫ সালের ১ জুলাই একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদিত ডিপিপিতে ৮৫১ জন আউটসোর্সিং গেটকিপার নিয়োগের কথা ছিল। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদনের সময় গেট কিপারের পদে যথেষ্ট সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েছে বিধায় আউটসোর্সিং-এর পরিবর্তে সরাসরি নিয়োগের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
৮৫১ জন গেটকিপারের পদ সৃষ্টি ও রাজস্বখাতে স্থানান্তরে পশ্চিমাঞ্চলের প্রস্তাবনা ২০১৯ সালের আগস্টে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো হয়। অর্থ বিভাগের ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৭০৭ স্মারকের আলোকে ১৯৯৭ সালের জুলাই এবং তৎপরবর্তীতে শুরু হওয়া প্রকল্পের পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সুযোগ নেই বলে জানানো হয়।
সর্বপ্রথম প্রকল্পটি জুলাই ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ওই সময়ের মধ্যেও বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
পরবর্তীতে রেলওয়ের ক্যাডার বহির্ভূত নিয়োগ বিধিমালা ২০২০-এর তফসিল-১ এর ক্রমিক নং-১৪৫ ও ৪২৯-এর সংশোধন ও গেট কিপারদের রাজস্বকরণের সব ধাপ অতিক্রম করে গত মে মাসে প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (পিআইসি) সভায় উপস্থাপন করা হয়। পরে মহাপরিচালক দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়নপূর্বক প্রেরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তাই প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়ে শুধুমাত্র গেট কিপারদের বেতন-ভাতাদি প্রদানের জন্য তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।
বর্তমানে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী চলতি বছরের মে পর্যন্ত বেতন-ভাতাদি প্রদান করা সম্ভব হবে। তাই ২০২৪ সালের জুন ও আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরসহ মোট ১৩ মাসের বেতন-ভাতাদি প্রদানে তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে ১৩০.৯৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।
দায়িত্বশীলদের বক্তব্য
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের উপ-প্রধান মো. নাজমুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তৃতীয় সংশোধনীর জন্য প্রকল্পটির উপর আমরা পিইসি সভা করেছি। তৃতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের একবছর মেয়াদ ও ১৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত গেট কিপারদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ী করতে এবং তাদের বেতন-ভাতা দিতে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হবে। এই দুটি কাজ ছাড়া প্রকল্পের সব কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বীরবল মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় গেট কিপাররা যতক্ষণ পর্যন্ত রাজস্ব খাতে না যাবে ততক্ষণ তাদের বেতন দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আশা করছি আগামী বছর প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাবে। শুধু গেট কিপারদের জন্য এখন ব্যয় ও সময় বাড়ছে।
এসআর/এমএসএ