পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ‘ছাত্র-শ্রমিক’ জনতার ব্যানারে। গত সপ্তাহে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খুলনাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় পার্টি গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দাসত্বের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে, দাবির বিষয়টি যৌক্তিক মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ হচ্ছে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকে পরাজিত করার অন্যতম পথ। যারা আসলে চায় যে আগামীতে স্বৈরাচার না আসুক, লুণ্ঠন ও দুর্নীতিমূলক রাজনীতি না থাকুক; সেক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হয় সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।

জাতীয় পার্টি গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দাসত্বের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে, দাবির বিষয়টি যৌক্তিক মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশ হচ্ছে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকে পরাজিত করার প্রধান পথ। যারা আসলে চায় যে আগামীতে স্বৈরাচার না আসুক, লুণ্ঠন ও দুর্নীতিমূলক রাজনীতি না থাকুক; সেক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হয়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া

তাদের মতে, বারবার পাল্টি খাওয়া জাতীয় পার্টি গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের যখন এবং যেভাবে প্রয়োজন; সেভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাব হয়েছে। অর্থাৎ মেরুদণ্ডহীন দাসত্বের ভূমিকা পালন করেছে তারা। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-লুণ্ঠনের সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নানা অপকর্মের বিচার না করে আওয়ামী লীগ সেগুলো মানুষের সামনে এনে নিজেদের ইচ্ছামতো দলটিকে ব্যবহার করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

‘রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রবিরোধী একটি দল’— বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ‘এই দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজেও একজন স্বৈরাচার এবং গত ১৫ বছর ধরে তারা স্বৈরাচারের একনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। বিনিময়ে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে।’

তবে, জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীলদের দাবি, তারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে থাকলেও শেখ হাসিনার গণবিরোধী কাজের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তারা মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ছাড়তে চেয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের দাবি যৌক্তিক মনে করি না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘দল নিষিদ্ধ করলে সুবিধা কী? নিষিদ্ধ করলে তো তাদের রাজনীতি হাওয়ায় মিশে যাবে না। যারা এই দলের সমর্থক ও বিশ্বাসী, তারা তো সমাজ থেকে মুছে যাবে না। তারা থাকবেই।’

‘দল নিষিদ্ধ করলে রাজনীতি যে নিষিদ্ধ হয় না তার প্রমাণ জামায়াত-শিবির। তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাদের রাজনীতি তো শেষ হয়ে যায়নি, বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে কি তাদের রাজনীতি চলে যাবে? এখন তারা কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে যাবে, কেউ ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরে যোগ দেবে। আসলে এগুলো কোনো সমাধান নয়।’

খুলনায় জাতীয় পার্টির একটি কার্যালয় ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা কার্যালয়টির আসবাবপত্র বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

তবে, জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে ‘মেরুদণ্ডহীন দাসত্বের ভূমিকা’ হিসেবে দেখছেন আনু মুহাম্মদ। বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগের পা-ধরা পার্টি। আওয়ামী লীগের যখন এবং যেভাবে প্রয়োজন; জাতীয় পার্টি সেই অনুযায়ী ভূমিকা পালন করেছে।’

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ ছিল। জেনারেল মঞ্জুর (মেজর জেনারেল এম আবুল মঞ্জুর) হত্যাকাণ্ড, জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড— এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া আরও অনেক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। লুণ্ঠন, দুর্নীতির অভিযোগ তো ছিলই। এগুলোর সঠিক বিচার হলে, তিনি সর্বোচ্চ সাজা পেতেন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এগুলো মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।’

এই বিশ্লেষকের মতে, ‘এসব অপরাধ এরশাদের মাথার ওপর ঝুলিয়ে রেখে আওয়ামী লীগ তাকে ব্যবহার করেছে। তারাও ব্যবহার হতে রাজি ছিল। কারণ, ব্যবহার হয়ে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া যায়। নিয়েছেও তারা। এক কথায়, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-লুণ্ঠনের সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টি।’

‘রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি জনবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী একটি দল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা স্বৈরাচারের দোসর’— বলেন আনু মোহাম্মদ।

তবে, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করলে স্বৈরাচারী শাসক আগামীতে জন্ম নেবে না— এমনটা মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যারা আওয়ামী লীগের অনিয়মের নির্বাচনসহ দুর্নীতি, লুণ্ঠন, গুম-খুনের সহযোগী ছিলেন; তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে স্বৈরশাসনের বিপরীতে জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ঘটানো দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ / ছবি- ঢাকা পোস্ট

এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এই ধরনের রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে গেলে গণতান্ত্রিক শক্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করাই হচ্ছে সহজ সমাধান। জাতীয় পার্টি স্বৈরাচারের দোসর ছিল। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে অনিয়মের নির্বাচনসহ নানা অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি পাওয়া যায়, তাহলে তার বিচার করা উচিত। এখানে ব্যক্তিকে বিবেচনায় আনা উচিত, দলকে নয়।’

যদিও জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) বলেন, ‘আমরা কখনও টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হাট-বাজার দখল করিনি। কখনও কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করিনি। সরকারের কোনো অন্যায়কে সমর্থন করিনি। সবসময় সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, সমালোচনা করেছি।’

জাপার গত ১৫ বছরের রাজনীতি

জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, গত কিছুদিন ধরে একটি মহল জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের সব অপকর্মের সঙ্গে আমরা ছিলাম। এজন্য জাপাকে শাস্তি ভোগ করা উচিত কিংবা রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত। অথচ এমন দাবির কোনো সত্যতা নেই।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দলটির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মন্ত্রী পদমর্যাদার ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত’ করা হয় / ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জাতীয় পার্টিকে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে না ডাকতে আহ্বান জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকা হয়নি। অথচ প্রথম দফার সংলাপে তাদের ডাকা হয়েছিল

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘অনেকে বলেন, নির্বাচন করে আমরা আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের অবৈধ শাসনকে বৈধতা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে একটু সংশোধন দরকার। ১৫ বছর নয়, ১০ বছর। কারণ, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে সম্পূর্ণ বৈধ সরকার ছিল।’

জাপার গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে অংশ নেয় এবং ২৭টি আসনে জয় পায়। ওই সরকারের মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ দুজন মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় তিন মাসের মন্ত্রী ছিলেন জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে নির্বাচন করি। সেই নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেছিল। সেই সময় আমি শেখ হাসিনার সরকারের মহাজোটের মন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু আমি তার কোনো অপকর্মের সঙ্গে ছিলাম না। অনেকে জানেন না, আমি বেসরকারি বিমানমন্ত্রী থাকাকালে আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এমন একটি বিমানে হজযাত্রীদের পাঠাতে নির্দেশ দিলে তখন আমি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। কাজেই শেখ হাসিনার গণবিরোধী কাজের সঙ্গে একাত্মতার বিষয়ে যে অভিযোগ উপস্থাপন করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত এক দশকের রাজনৈতিক পথচলায় পরম বন্ধুর মতো ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ / ফাইল ছবি

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফা ওই নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে জাপার ৩৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই নির্বাচন বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনার জন্ম দেয়। জাতীয় পার্টি একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে। ফলে তাদেরকে ‘সরকারি বিরোধী দল’ বা ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই সরকারের মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী ছিলেন। একইসঙ্গে দলটির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মন্ত্রী পদমর্যাদার ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত’ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের কথা ছিল। সেখানে জাতীয় পার্টিও ছিল। কিন্তু নির্বাচনে যখন বিএনপি-জোট আসেনি তখন আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় আরও সাতদিন বাড়িয়ে তাদেরকে আনার ব্যবস্থা করেন। তা না হলে আমরা নির্বাচনে যাব না। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চিঠি দেন। এরপর কী হলো আপনারা জানেন। এরশাদকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হলো। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ আমাদের দলের একটা অংশকে নিয়ে নির্বাচন করল।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন সফল হওয়ার পর দেশে নতুন করে বৈষম্য শুরু হয়েছে- জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের / ছবি- ঢাকা পোস্ট  

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেয় এবং ২২টি আসনে জয়ী হয়। গৃহপালিত বিরোধী দল থেকে বেরিয়ে আসতে জাপা ওই সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নেয়নি। সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে তারা। যদিও তারা সত্যিকারার্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই নির্বাচনের পর নানা ইস্যুতে, বিশেষ করে এরশাদের মৃত্যুর পর সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির। যে কারণে রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিতে জি এম কাদেরের নেতৃত্বের অংশ চিঠি দিলেও তৎকালীন স্পিকার সেটি বাস্তবায়ন করেননি।

এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশ নিয়েছিল। তাহলে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনকে সব দল বৈধতা দেয়নি, জাতীয় পার্টি কি একাই দিয়েছিল?’

মশাল মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি জানায় ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখা / ছবি- ঢাকা পোস্ট 

সর্বশেষ বিএনপিবিহীন ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয় গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এই নির্বাচনে ১১টি আসনে দলটির প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলেন তারা।

এ বিষয়ে জি এম কাদের দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে আমি বলেছিলাম, নির্বাচন করতে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় পার্টিকে ভাগ করে সরকারের একটি টিম করা হয়েছে। যারা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করেছিল। আমরা দলকে ভাঙতে চাইনি। ভাঙনের হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম।’

এএইচআর/এমএআর/