বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সরকারের নির্দেশে শুরু থেকে মারমুখী ছিল পুলিশ। পুলিশের গুলিতে অনেকে নিহত হলে ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। গত ৫ আগস্ট সেই গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। এমন একটা বিধ্বস্ত পরিবেশে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন মো. মাইনুল হাসান। দায়িত্ব নিয়ে পুলিশকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেন তিনি। সেসব উদ্যোগে কতটা সফল হলেন, নিকট ভবিষ্যতের জন্য কী কী কর্মপরিকল্পনা রয়েছে, পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা কীভাবে ফিরবে- এসব নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এ পুলিশ কমিশনার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসীম উদ্দীন।

ঢাকা পোস্ট : ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাস হলো। কেমন মনে হচ্ছে? নিজেকে কতটা সফল বা ব্যর্থ মনে করছেন?

মাইনুল হাসান : সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করা কঠিন। আমি যখন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এখানে আসি, তখন আমাকে রিসিভ করার মতো কোনো লোক ছিল না ডিএমপি কমিশনার অফিসে। আনুষ্ঠানিকতাও ছিল না। থাকবেই বা কী করে? যে যার মতো তখন জানের ভয়ে অস্থির। ব্রোকেন ডাউন বা ডিজাস্টার অবস্থায় ছিল তখন পুলিশ। কিন্তু যেহেতু আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমাকে আসতে হয়েছে।

তখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকায় কর্মবিরতি চলছিল। পুলিশে তখন একটা বিদ্রোহের মতো অবস্থা চলছিল। তবে, আস্তে আস্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে। ডিএমপি এলাকায় যারা নিহত হয়েছে, ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী তাদের সৎকারের ব্যবস্থা করেছি। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। যারা অপরাধী নয়, কিন্তু বিদ্রোহে অংশ নিচ্ছিল তাদের আমরা কাউন্সিলিং করেছি। তাদের আহ্বান করেছি, নতুন নেতৃত্বে নতুন করে সব শুরু করব আমরা। আগের নেতৃত্বে চলবে না পুলিশ। মোটিভেশনাল স্পিচে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা ফিরেছে।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের যে বিরোধ, মুখোমুখি অবস্থা, আস্থাহীনতা, সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে জনগণের আস্থা ছাড়া পুলিশিং চলে না। রাষ্ট্র যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে পুলিশের ওপরে তা তো মানতে হবে। আমাদের এজন্য দরকার সবার সমর্থন ও সহযোগিতা। আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে পুলিশ সংস্কার, পুলিশ কমিশন, পোশাক পরিবর্তনসহ নানা দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব ইউনিটে এক ইউনিফর্ম হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ চলছে। 

পুলিশকে রিফর্ম করার ক্ষেত্রে স্বশস্ত্র বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিল। জীবনের ভয়ে যারা কর্মে না ফিরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল তাদের ফেরানো সহজ হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর কল্যাণে। আর্মির কারণে কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ফিরেছে। এখন সব থানায় কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : গুলি করা বা আক্রমণাত্মক ভূমিকার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়া পুলিশকে এখন জনগণ কতটা মেনে নিতে পারছে? 

মাইনুল হাসান : সরকার পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা আসলে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। পুলিশকে ট্রলের শিকার হতে হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ছিলেন। তবে, জনগণ এগিয়ে এসেছে, তারা আমাদের সাপোর্ট করেছে। মানুষ বলেছে পুলিশকে দরকার, পুলিশকে ফিরতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম দিয়েই কিন্তু পুলিশ তার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে, যে কার্যক্রম ছাত্র-জনতা মিলেমিশে প্রথম শুরু করে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশ, বিশেষ করে ডিএমপি। আন্দোলনে ডিএমপির ২২টি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ বক্সসহ দুইশ’র বেশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪ জন নিহত হয়েছেন। পাঁচশ’র মতো আহত হয়েছেন। তাদের অনেকে সুস্থ হয়েছেন। এখনো বেশ কয়েকজন (১৫জন) গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। ডিএমপির ১৮০০ এর বেশি অস্ত্র লুট হয়। তবে, ডিএমপি স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার পর ১১০০ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোর মেরামতের কাজ শেষ। দুটি থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পল্টন ও যাত্রাবাড়ীতে। এ দুটি থানাতেও আগামী সপ্তাহের মধ্যে কার্যক্রম শুরু হবে। তবে, ৫০ থানার কোনোটিরই কার্যক্রম থেমে নেই।  

ঢাকা পোস্ট : ডিএমপিতে এর আগে অনেক প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আসলে দৃশ্যমাণ কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইদানীং ট্রাফিক সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর কারণ কী? 

মাইনুল হাসান : ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাফিক এডুকেশন, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও এনফোর্সমেন্ট। ট্রাফিক এডুকেশনের মধ্যে রাস্তা যারা ব্যবহার করেন যেমন- পথচারী ও যানবাহন চালক। তাদের যদি মার্কিং করি, অধিকাংশই পাশ মার্কস পাবেন না। রাস্তার মাঝে স্টপেজ, যত্রতত্র পারাপার, ফুটপাত দখল, কোনো শৃঙ্খলা নেই। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ কিন্তু ট্রাফিক এডুকেশনের কাজটা করে না।

রাস্তার প্রশস্ততা, রাস্তার অবস্থা, রাস্তার সংখ্যা, ব্যবহারকারীর সংখ্যা, রাস্তার যে নানামুখী ব্যবহার, পার্কিং সুবিধা সব কিছু কিন্তু ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আওতায়। এই নগরীর ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও কিন্তু পাশ মার্কস দেওয়া সম্ভব না। রাস্তা খারাপ হলে বা স্পেসের তুলনায় যানবাহন বেশি হলে তো ‍পুলিশের দায় নেই। আর এটা পুলিশ দেখেও না।

এনফোর্সমেন্টের সঙ্গে জড়িত পুলিশ। এখন ট্রাফিক এডুকেশন আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায় নিয়ে পুলিশ এনফোর্সমেন্টের কাজে যখন সড়কে থাকে, তখন কিন্তু মানুষ পুলিশেরই দায়টা বেশি দেখে। আমরা যেভাবে ট্রাফিক মেইনটেইন করি... অনেকটা লেবার সিস্টেমের মতো। যত বেশি শ্রম দেব, তত বেশি স্মুথ হবে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর আন্দোলন করার জন্য অনেক গ্রুপ রাস্তায় নেমে আসছে। যারা বিগত ১৫ বছর সড়কে নামতেই পারেনি। এখন আমরা চেষ্টা করছি নিবৃত করতে। রাস্তা বন্ধ করলে তো ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হবেই। আবার আমরা যদি অ্যাকশনে যাই, রাস্তা ব্লক বা জনভোগান্তি কমাতে পুলিশ যদি চেষ্টা করে তখন অনেকে বলবে পুলিশের চরিত্র বদলায়নি, সেই আগের মতোই হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা করবটা কী? আমরা তো চাইলেই বলপ্রয়োগ করতে পারি। কিন্তু প্রতিবাদ বা দাবি-দাওয়ার মুভমেন্ট তো মানুষের অধিকার।
আরেকটা সমস্যা-উত্তরা থেকে রওনা দিলেন... শাহবাগ যে বন্ধ হয়ে আছে, সেটি যখন মানুষ জানবে না, তখন হিউজ সমস্যা তৈরি করে সড়কে। আসলে ট্রাফিক এডুকেশন, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও এনফোর্সমেন্ট এই তিনটি একসঙ্গে সক্রিয় হলে সবকিছু স্মুথ হবে। 

ঢাকা পোস্ট : ট্রাফিক সমস্যা সমাধানের কি কোনো পথ নেই? 

মাইনুল হাসান : ঢাকা মহানগর এত বড় শহর, অথচ কোনো ট্রাফিক কন্ট্রোলিং সিস্টেম নেই। এটা আনা তো জরুরি। আমরা চিন্তা করছি, একটা সেমি-অটোমেশন সিস্টেম চালু করব। কারণ ফুল অটোমেশনের জন্য যে পূর্ব শর্তগুলো পূরণ হওয়া দরকার, সেগুলো নেই। এর আগে অনেক পজিটিভ প্রজেক্ট ফেইল করেছে। কারণ ইন্টার-সেকশন ঘনঘন, এক সড়কে নানা ধরনের যান চলে, বিকল্প রাস্তা নেই, পার্কিং সুবিধা অপ্রতুল, ভিআইপি মুভমেন্ট তো আছেই। এ অবস্থার উন্নতি না হলে ফুল অটোমেশন সম্ভব নয়। তাই আমরা সেমি অটোমেশন পদ্ধতির কথা ভাবছি। এটা করলে সমস্যা কিছুটা কমবে। যেমন একটা সিগনাল পয়েন্টে রিমোট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। মানুষ তাতে অভ্যস্ত হবে। সিগনাল বাতির জ্বলা-নেভায় গাড়ি চলাচল করবে বা থামবে। এতে করে সিগনালগুলোতে আমাদের এক্সট্রা জনবল লাগবে না। অন্যত্র আমরা জনবল ব্যবহার করতে পারব।

আমি ট্রাফিকে ডিসি হিসেবে কাজ করেছি। ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সমস্যা সংক্রান্ত বহু গবেষণা আছে। ৩৫/৪০ ধরনের সমস্যা আছে ট্রাফিকের। এই যে অসময়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, এটা কী করে ঠেকাবেন? ব্যক্তিগত যান কমিয়ে বেশি করে গণপরিবহন চালু তো পুলিশ করতে পারবে না। আসলে বিদ্যমান অবস্থায় সমস্যার সমাধান করতে চাইলে সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে সহযোগিতার মানসিকতা লাগবে।

অন স্ট্রিট পার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই। অনিয়মের শহর ঢাকায় সড়কে পার্কিং সুবিধা দিলে সেটির অপব্যবহার করা হয়। দোকান চলে, ভাড়া দেওয়া হয়। আবার যেখানে বহুতল ভবন হচ্ছে, সেখানে যে পরিমাণ স্পেস থাকার কথা, পার্কিংয়ের জন্য তা করা হচ্ছে না। প্রতিটি কারণ শনাক্ত করে যদি সংশ্লিষ্টরা সমাধানে এগিয়ে না আসে, তাহলে সমস্যা থেকেই যাবে। 

ঢাকা পোস্ট : ঢাকায় এখন গণছিনতাই হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। ছিনতাইয়ের উপদ্রব বাড়লেও নগরবাসীকে রক্ষায় ডিএমপি ব্যর্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মাইনুল হাসান : ছিনতাই সমস্যা ঢাকার জন্য নতুন কোনো সমস্যা নয়। ভাসমান, বেকারত্ব, পারিবারিক পরিবেশে না থাকাসহ ছিনতাই বাড়ার পেছনে অনেক সামাজিক কারণ আছে। পুলিশ তো প্রতিরোধমূলক কাজ করে। কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং আছে। পুলিশের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে বলেই আমরা নগরবাসী প্রতিদিন ঘর থেকে বের হতে পারছি। এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ফাঁক গলে যখন কোনো অপরাধমূলক কাজ সংঘঠিত হয়ে যায়, তখন ইনভেস্টিগেটিভ উইং আছে, তারা কাজ শুরু করে। অপরাধ হয়ে গেলে মামলা হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি প্রিভেনশন পর্বেই অপরাধ যাতে না হয়।

ঢাকা পোস্ট : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যাদের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পুলিশ ডিমোরালাইজড হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না? 

মাইনুল হাসান : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পুলিশের ১৮৭ জন কাজে যোগদান করেননি। অনেকে বলেছেন আর চাকরি করবেন না। কেউ ফেরেননি অপরাধের কারণে, তারা আত্মগোপনে বা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন। সাসপেন্ড হলে তদন্ত হবে। তদন্তে যে ব্যবস্থা হয়, তাই হবে। আর অনেকের নামে তো মামলা আছেই। সেই মামলায় প্রচলিত আইনে যা হবার তাই হবে।

ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে অভিযোগ। আসলেই জঙ্গিবাদ নিয়ে আশঙ্কা করার মতো পরিস্থিতি কি না?

মাইনুল হাসান : আশঙ্কার জন্যই তো আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আমাদের সিটিটিসি আছে। এর বাইরে অন্যান্য বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী সেল বা ইউনিট আছে। কারাগার থেকে বা মামলা থেকে জামিন পাওয়া আইনি অধিকার। সেখানে পুলিশ বাধা দিতে পারে না। তবে, যারা জামিন পাচ্ছেন, তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

ঢাকা পোস্ট : ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় শোডাউন মিছিল-মিটিং করছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? পুলিশ কি নমনীয়?

মাইনুল হাসান : নিষিদ্ধ সংগঠন লুকিয়ে এগুলো করতে পারে। তাদের আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা তিনটি মামলা করেছি। সংগঠনটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটরকে গ্রেপ্তার করেছি। কেউ যদি পকেটে করে পতাকা নিয়ে হুটহাট শোডাউন মিছিল করে ছবি তুলে চলে যায়, তাহলে তো মুশকিল। তারপরও আমরা বসে নেই। কাজ করছি, যাকে পাব তাকেই ধরা হবে।

আমাদের প্রিভেন্টিভ অ্যাকশনের পাশাপাশি ইনভেস্টিগেশন চলছে। আমাদের ইন্টেলিজেন্স সাপোর্ট দেবে কে? গণমাধ্যম সচেতন নাগরিকসহ সবাই দেবে। আমাদের জানান, সাপোর্ট দেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, করব। পুলিশ মিনিমাম ফোর্স অ্যাপ্লাই করে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে। আইন-নিয়মকানুনের মধ্যে থেকেই আমাদের কাজ করতে হয়। আর পুলিশ তো কমিউনিটির বাইরে না, আমরা সবাই কমিউনিটিতে থেকে কাজ করি। পুলিশের শক্তির উৎস হচ্ছে সাধারণ জনগণ। ঢাকা শহরে অপরাধীর সংখ্যা হাতে গোনা। সাধারণ মানুষ যদি সহযোগিতা করে তাহলে অপরাধীদের দমন করা সম্ভব।

ঢাকা পোস্ট : স্লোগান ছিল ‘পুলিশ হবে জনতার’। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর পুলিশ ভেঙে পড়ল কেন? পুলিশের আজকের এ অবস্থার পেছনে কারণ কী?

মাইনুল হাসান : যতটা না পলিটিক্যাল, তার চেয়ে বেশি কারণ ছিল আইন-বহির্ভূত কাজ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি আদালতে সোপর্দ করার নিয়ম। তারা সেটি না করে রেখে দিয়েছে দিনের পর দিন। আগে পুলিশ এক্ষেত্রে আইনি বিধান মানেনি। এতে করে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। আইন-বিধি ভঙ্গ হয়েছে।

পুলিশ ফাইটিং ফোর্স না, কিন্তু পুলিশকে ফাইটিং ফোর্সের মতো শক্তি প্রয়োগে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের শক্তিপ্রয়োগের জায়গাটা কেমন হবে তা সুস্পষ্ট। যে কোনো ক্রাউড ডিসপ্যাচ করতে হলে সতর্ক করা, মিনিমাম ফোর্স অ্যাপ্লাই করা। আর ফায়ার আর্ম বা শক্তি প্রয়োগের নিয়ম হচ্ছে একদম শেষ মুহূর্তে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ওনারা (বিগত পুলিশ কমান্ড) শক্তিপ্রয়োগকে সামনে বা আগে নিয়ে এসেছে। এরপর তো আল্টিমেটলি আর কোনো অপশন প্রয়োগ করার মতো থাকে না। যেটি বড় সমস্যা তৈরি করেছে। আমাদের সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। পুলিশের যে ভাবমূর্তি তা মানুষের কাছে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। মানুষ চায় পুলিশ নিয়ম ও আইন-বিধির মধ্যে থেকেই কাজ করুক। সমাজ শৃঙ্খলায় তো সবাইকে নিয়মটা মানতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও যারা অস্ত্র জমা দেননি, তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি?

মাইনুল হাসান : রাষ্ট্রের আইন হিসেবে সবাইকে তা মানতে হবে। যারা নির্দেশনা সত্ত্বেও অস্ত্র জমা দেননি, তাদের অনেকে সরকার পরিবর্তনের আগে-পরে পালিয়েছেন। বিধি অনুযায়ী অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হবে, মামলা হবে। 

ঢাকা পোস্ট : পতিত সরকারের আমলের ডিএমপির বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তারা কোথায়? হাতে গোনা দুয়েকজনকে আমরা গ্রেপ্তার হতে দেখছি। হারুন, বিপ্লব, মেহেদির মতো কর্মকর্তারা কোথায়?

মাইনুল হাসান : পার্ট অব সোসাইটি তো আমরা সবাই। পুলিশকে তথ্য দিন, জানান যে কে কোথায় আছে, আমরা অবশ্যই গ্রেপ্তার করব। আমি আমাদের লোকদের এখনই পাঠাব গ্রেপ্তারের জন্য। 

ঢাকা পোস্ট : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মাইনুল হাসান : আপনাকেও ধন্যবাদ, ঢাকা পোস্টের জন্য শুভেচ্ছা।

জেইউ/কেএ