আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের রাজনৈতিক ভূমিকা ও ব্যাপক দমন-পীড়নের কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বলপ্রয়োগে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই এখনো পলাতক আছেন। তারা গ্রেপ্তারের ভয়ে চাকরিতে যোগ দেননি।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের আল্টিমেটাম সত্ত্বেও এখনো কাজে যোগ দেননি আওয়ামী লীগ আমলের অনেক প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা। পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা এসব কর্মকর্তাদের ‘অপরাধী’ হিসেবে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে খোঁজা শুরু হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কথায়ও সেই আভাস মিলেছে। গতকাল আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনও যোগদান করেননি তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের আমরা পুলিশ বলব না, তাদের ক্রিমিনাল বলব। আমরা আনসার, পুলিশ ও বিজিবি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু’একদিনের মধ্যে আপনারা সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী কয়েকদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন সেনানিবাসে ৬২৬ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ৫১৫ জনই পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিল। ২৮ জন ছিলেন কর্মকর্তা পর্যায়ের, বাকিরা বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য।

পুলিশ সদর দপ্তর / ফাইল ছবি

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৭ জন সদস্য এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি। এর বাইরেও অনেক পুলিশ সদস্য নানা কৌশল ও কারণ দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ছাত্রজনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সারা দেশে এখন পর্যন্ত পুলিশের সাবেক তিন আইজিসহ ১৮৪ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির ৯৯ জন আছেন।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা কর্মকর্তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের বিরুদ্ধে হবে বিভাগীয় মামলা।

অর্ন্তবর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী— যারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলবে। যাদের বিন্দুমাত্র সংশ্লেষ মিলবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে দুর্নীতি, হত্যা, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে চাকরিচ্যুত, সাবেক কর্মকর্তা ও যোগদান না করে আত্মগোপনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অনেক মামলা হচ্ছে।

এ  প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) রেজাউল করিম বলেন, ফৌজদারি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশ সদস্যদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের অনুমতি রয়েছে। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) / ঢাকা পোস্ট

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তারাই পলাতক আছেন। তারা বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সুবিধা দিয়েছেন; বিরোধী দল-মত দমন এবং বিশেষ করে সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে যারা নিজ ও দলীয় স্বার্থে কাজ করেছেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বেআইনি কাজে জড়িত কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, অ্যাকশন যে শুরু হয়ে গেছে তার নমুনা দেখিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সর্বশেষ গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ডিবি পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইফতেখার মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এসি ইফতেখার মাহমুদ রাস্তায় শুয়ে গুলিবর্ষণ করছিলেন এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, তখন বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের উত্তর পাশে প্রগতি সরণিতে গুলিতে নিহত হন সুমন সিকদার (৩১) নামে এক যুবক। ওই ঘটনায় নিহতের মা মোসা. মাছুমা বেগম গত ২০ আগস্ট বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭৯ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এসি ইফতেখারকে।

কর্মে না ফেরা পলাতক তালিকার শীর্ষে হারুন

পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ৩৮ মামলার আসামি ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তাকে এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। পলাতক হিসেবে হারুনকে পুলিশ সদর দপ্তরের তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।

ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ / ফাইল ছবি

নিরাপত্তার অজুহাতে আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার ঘটনায় বেশি সমালোচনায় পড়েন হারুন। ৫ আগস্টের পর তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।

তার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের অকাট্য প্রমাণ থাকা স্বত্বেও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পুনর্বাসন ও পদোন্নতি দিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৩ বছর পর গত ১৯ আগস্ট হারুনের বিরুদ্ধে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা ফারুক।

১৮ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়েন মীর রেজাউল

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিডনির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য মো. আব্বাস আলী বাদী হয়ে পল্টন থানায় মীর রেজাউল আলমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম / সংগৃহীত

তার আগে ১৪ আগস্ট তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মামলা ও তথ্য সংগ্রহবিষয়ক কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে মীর রেজাউলসহ ১৫ পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে পল্টন থানায় এজাহার দায়ের করেন।

সরকার পতনের পরদিনই দেশ ছাড়েন আবদুল কাহার আকন্দ

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বহুল আলোচিত সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কাহার আকন্দ চাকুরিচ্যুত হন। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় দীর্ঘ সাত বছর পর ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারি চাকরি ফিরে পান। তার একদিন পর অবসরে যান। পরে ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ পান তিনি। এরপর চার দফায় চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি অবসরের পরও ১০ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি চূড়ান্ত অবসরে যান। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেও হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ / সংগৃহীত

এ প্রসঙ্গে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্বে) মো. শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১৪ আগস্ট এসবির দায়িত্ব নিয়েছি। কেউ পালিয়ে থাকলে এর আগে পালিয়েছেন। তবে ১৪ তারিখের পর কোনো পুলিশ কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন ক্রস করেছে এমন রেকর্ড নেই। তবে কেউ যদি অবৈধভাবে স্থল বা নৌপথে পালিয়ে থাকে সে তথ্য আমাদের জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, দুজন পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে পালিয়ে যান আবদুল কাহার আকন্দ। পরে দেশ ছাড়েন মীর রেজাউল আলম। তাকে আটকানোর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল না। বিষয়টি সরকার ওয়াকিবহাল।

আদৌ কি দেশ ছেড়েছেন বিপ্লব?

গত ১২ সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে— লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে চলে গেছেন ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। দাবি করা হয়, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে কোনো এক সময় তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। পাচারকারীদের এ সংক্রান্ত কয়েকটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত পার হওয়ার জন্য বিপ্লব কুমারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয় বলেও জানা যায়।

ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার / ফাইল ছবি

এ প্রসঙ্গে এসবি প্রধান মো. শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশের ওই দুই সাবেক কর্মকর্তা ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কোনো কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন ক্রস করেননি। আমি মনে করি তারা দেশেই আছেন। তবে কোথায় আছেন সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।

দেশ ছাড়তে ব্যর্থ ডিএমপির সাবেক কমিশনার গোলাম ফারুক

গত ২০ আগস্ট ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান ডিএমপির সাবেক কমিশনার গোলাম ফারুক। ডিবিকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানানো হলে তার দেশ ত্যাগের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। পরে অবশ্য তিনি বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরে যান। খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে ডিএমপির কোতয়ালী থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চোখের সমস্যা। এর আগে আমি ব্যাংককে গিয়ে অপারেশন করিয়েছি। সেটার ফলোআপ করতেই মূলত ব্যাংকক যেতে চেয়েছিলাম। আমি জানি আমার নামে সম্প্রতি মামলা হয়েছে। আমি তো পালাচ্ছিলাম না। চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলাম। তাই আমাকে আটকে দেওয়া হবে এমনটা ভাবিনি।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যেসব পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে—  পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া ও সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত ২৩ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। অবসরে যাওয়ার আগে থেকেই তাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে ছিলেন।

এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন— পুলিশের সাবেক দুই আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও এ কে এম শহীদুল হক, ডিবির ডিসি মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন ও এসি ইফতেখার।

খোঁজা হচ্ছে যেসব কর্মকর্তাদের— অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, ঢাকার সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহিদুর রহমান, ওয়ারী জোনের সাবেক এডিসি এস এম শামীম, উত্তরা বিভাগের এডিসি তৌহিদুল ইসলাম, ট্রাফিক ওয়ারীর সাবেক সহকারী কমিশনার তানজিল আহমেদ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) উত্তরার সহকারী পুলিশ সুপার (চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানার সাবেক ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে।

Caption

কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে আত্মগোপনে যারা

কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া ১৮৭ সদস্যের যে তালিকা পুলিশ সদর দপ্তর দিয়েছে, এর মধ্যে ডিআইজি থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ১৬ জন। পুলিশ পরিদর্শক আছেন পাঁচজন, উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ১৪ জন। অন্যদের মধ্যে এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।

কাজে যোগ না দেওয়া শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন— ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান (স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসরের আবেদন করেছেন), ডিএমপির সাবেক যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার।

পুলিশ সুপার থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আত্মগোপনে থাকা ৮ কর্মকর্তা হলেন— আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, আরপিএমপি ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ নূর আলম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান ও ইফতেখার মাহমুদ(গ্রেপ্তার), আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন এবং সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার রানা।

পরিদর্শক পদে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া কর্মকর্তারা হলেন— লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার সাবেক ওসি মাহফুজার রহমান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক খাদেমুল বাহার বিন আবেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের পরিদর্শক ইউসুফ হাসান, ডিএমপির সাবেক পরিদর্শক জাকির হোসাইন ও ঢাকা জেলা পুলিশের পরিদর্শক আরাফাত হোসেন।

ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, যারা যোগদান করেননি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে।

জেইউ/এমজে