সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আকস্মিক এই বন্যা মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষি ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

আশঙ্কার কথা হচ্ছে, বন্যার পর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বেশি খারাপ অবস্থা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায়। এ দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি আগের মতো রয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি জমে থাকায় সেখানে এখনো আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারেননি অনেকে।

এমন অবস্থার জন্য পানি নেমে যাওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা, বিশেষ করে খাল-বিল নদী কম থাকা এবং সেগুলোর অগভীরতা বা নাব্যতা না থাকাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এলাকার নদ-নদী ও খাল-বিলের ওপর অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের। এদিকে কিছুদিন পরপর সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বানভাসি মানুষের জন্য।

গত ২১ আগস্ট ভারী বর্ষণের কারণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে তীব্র বন্য দেখা দেওয়ার পর দেশটি গোমতী নদীর ওপর নির্মিত ডম্বুর ড্যাম খুলে দেয়। এছাড়া সীমান্ত এলাকার আরও কিছু ছোট ছোট স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়। উজানের দেশের ওই ‘জমা পানি’ হঠাৎ বাংলাদেশে নেমে আসায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। ফেনীতে কোথাও কোথাও পানি উঠে যায় বাড়ির একতলার ছাদ পর্যন্ত। সেই ভয়াবহ বন্যার এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। অথচ এখনো বন্যার পানির সঙ্গেই খাবি খাচ্ছে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের অনেক জায়গার মানুষ।

পানি নামার জায়গা নেই, অবৈধ বাঁধে সর্বনাশ

বন্যার পানি দীর্ঘদিন আটকে থাকার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় পানি নামার জায়গা নেই। বিভিন্ন সময় এলাকার প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নদী, বিল, খাল দখল করে যেসব অবৈধ বাঁধ দিয়েছেন সেগুলোই এখন লাখ লাখ মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে এলাকাভিত্তিক ছোট বড় নদীগুলোর নাব্যতা সংকটও এর জন্য দায়ী।

ঢাকা পোস্টের লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত ২২ আগস্ট বন্যার প্রাথমিক পর্যায়ে নোয়াখালী জেলার রহমতখালী ও ওয়াপদাখাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে পানি প্রবেশ করে। এতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, মান্দারী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, পার্বতীনগর, লাহারকান্দি, হাজিরপাড়া, দত্তপাড়া ইউনিয়ন এবং লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কয়েকটি এলাকাসহ রায়পুর উপজেলা, রামগঞ্জ উপজেলা পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ হঠাৎ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কিছু এলাকার পানি নেমে গেলেও এখনো অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের দিঘলী, মান্দারী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের অনেক গ্রাম রয়েছে।

আবার গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বরের টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলার ৮ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। বৃষ্টির পর ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েন ১২ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়।

এছাড়া এক মাসের বেশি সময় ধরে ভুলুয়া নদী অধ্যুষিত লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা, কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, চরবাদাম এবং নোয়াখালী জেলার চরমটুয়া ও আন্ডারচর ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এসব এলাকায় ভারতের পানি আসার আগেই টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে যুক্ত হয় বন্যার পানি। ভুলুয়া নদীতে অবৈধ বাঁধের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারেননি নোয়াখালীর হাজার মানুষ

বন্যা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার কারণে এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার মানুষ। নোয়াখালী জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান জানান, নোয়াখালীর চাটখিল, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, সুবর্ণচর, কোম্পানিগঞ্জ, কবিরহাট, সেনবাগ, নোয়াখালী সদর এলাকার অনেক জায়গায় এখনো বন্যার পানি রয়েছে। এ কারণে বন্যা উপলক্ষ্যে খোলা ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র এখনো চালু আছে। সেখানে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয় নিচ্ছেন।

১৭৫ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে লক্ষ্মীপুরে

দীর্ঘমেয়াদি বন্যার প্রভাবে ভালো নেই লক্ষ্মীপুর জেলার মানুষও। বিভিন্ন অঞ্চলে পানি জমে থাকার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। এখনো অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রই ছাড়তে পারেননি। সরকারি হিসাবে প্রথমদিকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। বর্তমানেও প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুছ মিয়া জানান, বর্তমানে তিনটি উপজেলায় এখনো আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও রামগতি উপজেলায় মোট ১৭৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের চেয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো সম্পূর্ণ পানি নেমে যায়নি।

অপরিকল্পিত ব্রিজ, কালভার্ট, স্লুইসগেট

বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেওয়ার পেছনে প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করেছে মানবসৃষ্ট কারণও। জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের পানি প্রবাহ এবং স্থানীয় নদ-নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ ও খারাপ হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রভাবক হিসেবে যুক্ত হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ময়লার ভাগাড়, বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। যা পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি ও উজানের ঢল থামার পর সিলেটের হাওর অঞ্চলের পানি দ্রুত নেমে গেলেও কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর পানি দ্রুত নামতে পারেনি। এসব অঞ্চলের পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে।

তারা বলছেন, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে বিভিন্ন স্লুইস গেট, কালভার্ট, বাঁধ তৈরি করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখানে এলজিইডি স্পষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাঁধ বা রাস্তা তৈরি করেছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, কিশোরগঞ্জে হাওরের মধ্যে রাস্তার কারণে বন্যার তীব্রতা বেড়ে গেছে। পানি হাওর দিয়ে ঠিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে না। এভাবে লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী ও কুমিল্লার অনেক খালের উপর অপরিকল্পিত বাঁধ, ব্রিজ-কালভার্ট এবং দোকান ও মার্কেট তৈরি করা হয়েছে। আবার কচুরিপানা আর ময়লার কারণেও পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে বন্যার পানি নামছে না।

তিনি বলেন, সামনে শুকনো মৌসুম আসছে। তখন বের করতে হবে কোথায় খালের পানি, নদীর পানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখনই ম্যাপিং করতে হবে। এগুলা চিহ্নিত করে বাধা অপসারণ করতে হবে। এতে স্থানীয়দের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে পরবর্তীতে বন্যা কিংবা জলাবদ্ধতায় আমরা এর সুফল পাব। অন্যদিকে আমাদের স্থানীয় সরকার দপ্তর খুব বেশি পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের পরামর্শ নেয় না। যার ফলে আমরা উন্নয়ন করেও সুফল পাচ্ছি না।

আরও বাড়তে পারে বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসছে। অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আকস্মিক বন্যা হচ্ছে। এগুলো আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে বৈরি পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সামনে এসব সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি যেসব অঞ্চলে বন্যা হয়েছে সেগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়েছে। আবার অল্প সময়ে অতিরিক্ত গরম ও অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমও তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্ষার সময়টা কমেছে। কিন্ত অল্প সময়ে অনেক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে একের পর এক হিট ওয়েভ, কোল্ড ওয়েভ, ভারী বৃষ্টিপাত, সাগরে ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা হচ্ছে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের ক্ষতি ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। না হলে যে ক্ষতি হবে সেগুলো কোনোভাবেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

দীর্ঘমেয়াদি বন্যা থেকে বাঁচতে দখলমুক্ত করতে হবে খাল-বিল

বন্যার পানির ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে খাল-বিল ও শাখা নদী দখলমুক্ত করার পাশাপাশি এসব নদী ও খালের নাব্যতা সংকট দূর করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রত্যক্ষ প্রভাব। অনিয়মিত ও অতিবৃষ্টির কারণে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নদীর যে নাব্যতা, তথা নৌ-চলাচলের উপযোগী থাকা, সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে।

আবার ভারত থেকে নেমে আসা নদীগুলোর অতিরিক্ত পানিও বাংলাদেশে বন্যার অন্যতম কারণ। ভারতের বাঁধ হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় যেসব নদ-নদীর নাব্যতা কমে গেছে সেগুলো পুনরায় ড্রেজিং করা জরুরি। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের নদীগুলোতে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে। ফলে নদীতে পানি ধারণ ক্ষমতা কমেছে। পানি বেশি এলে দ্রুত নদীর পানির স্তর বাড়তে শুরু করে, যা বন্যার জন্য দায়ী।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. এজাজ বলেন, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে এক সময় প্রচুর পরিমাণে খাল ছিল। প্রতিটা প্রধান সড়কের পাশে সিঅ্যান্ডবি খাল ছিল। এখন সেগুলো নেই। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন খাল বিলের উন্নয়ন করেনি। খাল দখল করে অপরিকল্পিতভাবে দোকান, মার্কেট, বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী লোকজনের পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি এমনকি রাজনৈতিকভাবেও খাল-নদী দখল হয়ছে। এই অঞ্চলে ডাকাতিয়া ও মেঘনাসহ ছোট নদীগুলোর সঙ্গে যুক্ত শাখা নদী ও খালগুলো অকেজো হয়ে আছে। তাই এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নদ-নদী এবং খাল-বিলের উন্নয়ন জরুরি। না হলে প্রতিবছরই বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে জমে থাকা পানির জন্য মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা পোস্টের নোয়াখালী প্রতিনিধি হাসিব আল আমিন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি হাসান মাহমুদ শাকিল এবং ফেনী প্রতিনিধি তারেক চৌধুরী।

আরএইচটি/এসকেডি