‘গায়ের সুযোগ’ নিয়ে মাদকের কারবার, নেতৃত্বে নারী!
রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে একমাত্র কন্যাসন্তান নিয়ে থাকেন ফরিদা খাতুন (ছদ্মনাম)। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। বিয়ের সময় জানতেন স্বামী বিল্লাল হোসেন ভ্যানচালক। তবে, ঢাকায় আসার দুই মাস পর ফরিদা জানতে পারেন তার স্বামী আসলে কড়াইল বস্তিতে ইয়াবা ও গাঁজার কারবারে জড়িত।
ফরিদার কন্যাসন্তানের বয়স যখন মাত্র তিন মাস, তখন মাদক বিক্রির অভিযোগে তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্বামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফরিদা ও তার কন্যার জীবনে নেমে আসে অসহনীয় দুর্ভোগ। শত চেষ্টা করেও স্বামীকে জামিনে ছাড়িয়ে আনতে না পেরে শেষে তিনি নিজেও মাদক কারবারে নামেন। দিনের পর দিন মাদক বিক্রি করতে করতে বনে যান ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’।
বিজ্ঞাপন
শুধু ফরিদা নয়, তার মতো অসংখ্য নারী ভয়ংকর মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন। কারণ হিসেবে তারা ‘পারিবারিক অভাব-অনটন’কে দায়ী করলেও প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, শরীরের সংবেদনশীল জায়গায় মাদক বহন সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় এ কারবারে নারীদের আধিক্য দেখা যাচ্ছে।
বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নারী মাদক কারবারিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, শুরুতে তারা মাদকের বাহক ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে নিজেরাই মাদকের সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠেন। বেশির ভাগ সময় তারা শরীরের সংবেদনশীল বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে ইয়াবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার করেন। পুলিশ বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নারী সদস্য সংখ্যা কম থাকায় অনেক সময় সন্দেহ হলেও তাদের দেহ তল্লাশি করা যায় না। এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নারীরা মাদকের কারবার করে যাচ্ছেন খুব সহজেই।
মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণে ১১ সম্রাজ্ঞী
দেশের শীর্ষ মাদক কারবারিদের তালিকা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এ তালিকায় ১১ নারী মাদক কারবারির নাম উঠে এসেছে। তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে চারজন, চট্টগ্রাম বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন, বরিশাল বিভাগে একজন এবং খুলনায় এক শীর্ষ নারী মাদক কারবারি রয়েছেন।
ঢাকা বিভাগের চার মাদক কারবারির মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন মোছা. ফাতেমা বেগম ওরফে ফতু। তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাউনিয়াবাদ লালমাটিয়া এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের মতো মাদকের কারবার করে আসছিলেন ফতু। বর্তমানে তিনি পলাতক।
আরও পড়ুন
ঢাকার আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি ফতেহ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় ইয়াবা ও আইসের কারবার করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর একাধিক থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।
দেখা গেছে, অধিকাংশ চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো নারী সদস্য থাকেন না। ফলে অনেক সময় তাদের দেহ তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। নারী কারবারিরা তাদের শরীরের সংবেদনশীল জায়গায় সুকৌশলে মাদক লুকিয়ে রাখেন। মূলত তল্লাশি থেকে বাঁচতে এ কাজে নারীদের বেশি ব্যবহার করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগ থানার ওহাব কলোনির মাদক সম্রাজ্ঞী মোসা. তানিয়া খাতুন। গোয়েন্দা তালিকায় তার নামের পাশে ‘থ্রি-স্টার’ উল্লেখ করা আছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মাদকের কারবার করে আসছিলেন।
ঢাকা বিভাগের আরেক ‘থ্রি স্টার’ তালিকাভুক্ত শীর্ষ নারী মাদক কারবারি খুরশিদ বেগম ওরফে খুশি। তিনি কামরাঙ্গীরচর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের কারবার করে আসছিলেন।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় নারী মাদক কারবারিদের নামের পাশে ১, ২ ও ৩ তারকা চিহ্ন (স্টার) দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। এতে যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারে জড়িত তাদের ‘৩’ এবং অপেক্ষাকৃত নতুনদের ‘১’ স্টার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তালিকায় চট্টগ্রাম বিভাগে এক শীর্ষ নারী মাদক কারবারির নামও রয়েছে। থ্রি-স্টার ভূষিত ওই মাদক কারবারির নাম আকলিমা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় গাঁজা ও ইয়াবার কারবার করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, রংপুর বিভাগে শীর্ষ নারী মাদক কারবারিদের মধ্যে রয়েছেন- মোছা. রোকসানা বেগম ও মোছা. সেলিনা খাতুন। তারা হেরোইনের কারবার করেন এবং ওয়ান-স্টার মাদক কারবারি হিসেবে ডিএনসির তালিকাভুক্ত।
ডিএনসির গোপন তালিকা অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগের শীর্ষ দুই নারী মাদক কারবারি হলেন- মোসা. রেহেনা ও সুরমা বেগম। রেহেনা থ্রি-স্টার ও সুরমা বেগম টু-স্টার মাদক কারবারি।
আরও পড়ুন
ওই তালিকায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগে একজন করে শীর্ষ মাদক কারবারি রয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের মোসা. শিল্পী বেগম, তিনি টু-স্টার মাদক কারবারি। খুলনা বিভাগের মনজু বেগম, টু-স্টার ভূষিত মাদক কারবারি।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে যারা মাদক কারবারে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তাদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সহায়তা করছে। তালিকা ধরে ধরে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি চালানো অভিযানে এখন পর্যন্ত ৮০ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে শীর্ষ নারী মাদক কারবারিরা রয়েছেন।
ডিএনসির নারী সদস্যের স্বল্পতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত নারী সদস্য আছেন। অভিযানের সময় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া নারীরা যেন মাদক কারবারে না জড়ান সেই লক্ষ্যে আমাদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান আছে।’
যেসব কারণে মাদক কারবারে নারীরা
সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে তিন নারী মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের এ কারবারে জড়ানোর বেশকিছু কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে– অধিকাংশেরই স্বামী অথবা পরিবারের কেউ মাদক কারবারে জড়িত; মাদক বহনে স্বামীর বাধ্য করা; স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হওয়া; পারিবারিক অভাব-অনটন ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে সহজে বাড়তি টাকা আয়ের লোভ। ফলে একবার এ কারবারে জড়িয়ে পড়লে সহজে বের হওয়া যায় না।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানান, ইয়াবার মতো ছোট ট্যাবলেট সহজেই শরীরের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে বহন করা যায়। এ কারণে বাহক হিসেবে তাদের ব্যবহার করা হয়।
মাদকের কারবারে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে টেকনাফের হালিমা বলেন, ১৭ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে আমার এক ছেলে ও মেয়ে সন্তান হয়। হঠাৎ একদিন স্বামী যৌতুকের কারণে আমাকে তালাক দেন। পরে টেকনাফে মায়ের বাড়িতে উঠি। কিন্তু মায়ের পক্ষে আমার ও দুই সন্তানের ভরণপোষণ করা সম্ভব ছিল না।
আরও পড়ুন
দেশের শীর্ষ মাদক কারবারিদের তালিকা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এ তালিকায় ১১ নারী মাদক কারবারির নাম উঠে এসেছে। তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে চারজন, চট্টগ্রাম বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন, বরিশাল বিভাগে একজন এবং খুলনায় এক শীর্ষ নারী মাদক কারবারি রয়েছেন
পরে প্রতিবেশী এক মাদক কারবারির মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান বাসে করে চট্টগ্রামে পৌঁছে দিতাম। প্রতি চালানে আমাকে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। মাসে ৩-৪টি চালান নিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে যেতাম।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেসব নারী সামাজিক ও পারিবারিকভাবে খারাপ অবস্থায় থাকেন, বলতে গেলে যেসব নারী অসহায় অবস্থায় থাকেন, তাদের ব্যবহার করে সহজে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করানো যায়। কারণ, ওই সব নারীর তখন জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনো একটা অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ে। দেখা গেছে, নিজ বাড়ি থেকে কিংবা স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত নারীরা এসব কাজে বেশি জড়ান।
‘তাদের এ অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সমাজের এক শ্রেণির ক্ষমতাধর ব্যক্তি তাদের মাদক কারবারে ব্যবহার করেন। আবার কখনও কখনও দেখা যায়, যেসব নারী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন, তাদের পরিবার থেকে টাকা-পয়সা দেওয়া হয় না, তখন তারা মাদকের টাকা জোগাতে এ কারবারে জড়িয়ে পড়েন। আমার কাছে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা একটা পাওয়ার স্ট্রাগল বিষয় মনে হয়। যেসব নারী সমাজে পাওয়ার-হীন তাদেরই মাদক কারবারের মতো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, কোনো মানুষ যখন বারবার একটা অপরাধ করতে থাকেন, তখন কাজটা ভালোবেসে ফেলেন এবং এ অপরাধের পক্ষে নানা রকম যুক্তি দিতে থাকেন।’
আরও পড়ুন
যেসব এলাকায় নারীদের আধিপত্য
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, পুরুষদের মতো নারী মাদক কারবারিদের কার্যক্রমও সীমান্ত এলাকায় বেশি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা অর্থাৎ কক্সবাজার ও টেকনাফ অঞ্চলের নারী মাদক কারবারিদের তৎপরতা বেশি। এ ছাড়া ভারত-লাগোয়া সীমান্তেও নারী মাদক কারবারিদের তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। নারীরা সীমান্ত এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকের চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন।
রাজধানীর ভেতর এবং ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতেও নারী মাদক কারবারিদের তৎপরতা রয়েছে। ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, সাভার, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় তাদের একাধিক দল সক্রিয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে আরও জানা যায়, রাজধানীতেও নারী মাদক কারবারিদের একাধিক গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। সারা দেশের নারী মাদক কারবারিরা মূলত বাহক হিসেবে কাজ করলেও ঢাকার কারবারিরা খুচরা বিক্রেতা হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ করে রাজধানীর বস্তি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের পদচারণা বেশি। তারা ইয়াবা ও গাঁজা থেকে শুরু করে এলএসডি, আইস ও হেরোইনের মতো ভয়ংকর মাদক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন।
আরও পড়ুন
বয়স্করা বেচেন গাঁজা-ইয়াবা, তরুণীরা এলএসডি
র্যাব, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিজিবির হাতে গ্রেপ্তার নারী মাদক কারবারিদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে জানা যায়, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল পাচার ও বিক্রির সঙ্গে বিবাহিত ও বয়স্ক নারীরা বেশি জড়িত। তাদের বয়স আনুমানিক ৪০ থেকে ৫৫ বছর। তারা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা ও গাঁজা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ও মফস্বল এলাকায় নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে একটি দল শহর ও মফস্বল এলাকায় এসব মাদক খুচরা ও পাইকারিভাবে বিক্রি করেন। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিবাহিত ও বয়স্ক নারীরা মাদক কারবারে জড়িত থাকলেও তারা মাদকসেবী নন।
মাদক নিয়ে কাজ করা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, উঠতি বয়সী এক শ্রেণির তরুণীরাও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছর। তারা রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অভিজাত এলাকায় তারা মাদক সরবরাহ করেন। মূলত রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অভিজাত হোটেল ও ক্লাবে এলএসডি ও আইসের মতো মাদক বিক্রি করেন তারা। তারা নিজেরাও মাদকে আসক্ত।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে তারা এসব ভয়ংকর মাদক দেশে আনছেন। তাদের ক্রেতা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। তারা এলএসডি, আইস ও হেরোইনের মতো মাদক বিক্রির ক্ষেত্রে বিট কয়েন ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপ ও পেজ ব্যবহার করে তারা এসব মাদক বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন
নারীরা কেন ব্যবহার হচ্ছেন মাদক কারবারে
গ্রেপ্তার হওয়া মাদক কারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, পুরুষ মাদক কারবারিদের মাদক পাচার ও বিক্রির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারিতে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে নারীদের তল্লাশি করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। দেখা গেছে, অধিকাংশ চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো নারী সদস্য থাকেন না। ফলে অনেক সময় তাদের দেহ তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। নারী কারবারিরা তাদের শরীরের সংবেদনশীল জায়গায় সুকৌশলে মাদক লুকিয়ে রাখেন। মূলত তল্লাশি থেকে বাঁচতে এ কাজে নারীদের বেশি ব্যবহার করা হয়।
এমনও দেখা গেছে, মাদক পাচার ও বিক্রির ক্ষেত্রে এসব নারীর কোলে অধিকাংশ সময় বাচ্চা থাকে। বাচ্চা কোলে থাকায় তাদের প্রতি একটু সহানুভূতি জন্ম হয়। ফলে তাদেরকে সেভাবে আটক করা হয় না। অন্যদিকে, মাদক পাচারের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীকে কম টাকা দিলেও চলে। এ কারণে তাদের চাহিদা বেশি। আবার ধরা পড়লে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। ফলে তারা বের হয়ে আবারও মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নারীদের তল্লাশির ক্ষেত্রে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ ছাড়া তাদের পোশাক ও বেশভূষা দেখে অনেক সময় সন্দেহ করা যায় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীদের মাদক কারবারে নামিয়ে দিচ্ছেন গডফাদাররা।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যখন মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করি তখন নারী মাদক কারবারিদের পাই। তখন আমরা যথাযথ আইন মেনে তাদের গ্রেপ্তার করি। নারী মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমরা দেশের প্রচলিত আইন মেনে তাদের গ্রেপ্তার করি।
নারী মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নারী সদস্য বাহিনীতে আছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র্যাব একটি অপারেশনাল ফোর্স, আমাদের প্রায়োরিটি থাকে অপারেশন। ৮টি বাহিনী থেকে সদস্যরা র্যাবে আসেন। র্যাবে নারী সদস্যরা মূলত আনসার থেকে আসেন। র্যাবে নারী সদস্য খুবই অপ্রতুল। বিভিন্ন সময় অভিযানে নারী সদস্য অপ্রতুল থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। না হয় অভিযান পরিচালনার সময় আমরা স্থানীয় পুলিশের সহায়তা নিই। নারী সদস্য কম থাকায় নারী মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে আমাদের কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা নারী মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অভিযানে মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নারী মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী নারী পুলিশ সদস্যদের দিয়ে নারী মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি করি। অনেক সময় নারী সদস্য না থাকলে অন্য নারীদের দিয়ে আমরা তাদের তল্লাশি করি।
এমএসি/এসএসএইচ