‘আগামী ১৮ মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে’ বলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সেটা তার নিজস্ব মত বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের প্রধান সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনী সহায়তা করবে, যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

আজ ঢাকা পোস্টকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোলাম মোহাম্মদ কাদের ওরফে জিএম কাদের বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে তো নির্বাচন করতেই হবে। কাজেই এটা নিয়ে আমরা সবাই একটা হিসাব করছি। নির্বাচন নিয়ে সবার নিজস্ব একটা হিসাব আছে। এখন যা বলা হচ্ছে এগুলো সবই ধারণা। কারণ কোনো কিছুই তো আমরা চূড়ান্তভাবে জানি না। সবকিছু অনিশ্চিত। সেই হিসেবে সেনাপ্রধান হয়ত ধারণা করছেন, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা তার ব্যক্তিগত ধারণা ও মূল্যায়ন। বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে তিনি এ কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সবাই যার যার অবস্থান থেকে এমন মূল্যায়ন করছেন। নির্দিষ্ট করে নির্বাচনের তারিখ বলার দায়িত্ব সেনাপ্রধানের নয়। সেটার জন্য যারা দায়িত্বে (অন্তর্বর্তী সরকার) আছে, তারাই বলবে।’

‘যাই হোক না কেন’ দেশের অন্তর্বতী সরকারকে তাদের প্রধান সংস্কারসমূহ সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনী সহায়তা করবে, সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আরেকটা বিষয় এসেছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করা নিয়ে। বিগত সরকার প্রধান (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যখন চলে গেলেন (ভারতে) তখন শূন্যতার মধ্যে পড়েন তিনি (সেনাপ্রধান)। এরপর আমাদের ডাকলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে গেলেন। সেখানে সবার সঙ্গে অনেক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হলো, একটা অন্তর্বর্তী সরকার হবে। বলতে গেলে এটার উদ্যোক্তা বা সূচনাকারী তিনিই। কাজেই সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেবেন, এটাই স্বাভাবিক।’

জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন বলেন, ‘এটা (সহযোগিতার বিষয়) সেনাপ্রধান না বললেও বোঝা যায়, তার সমর্থন স্বাভাবিকভাবে থাকবেই। কারণ এ প্রক্রিয়া ও কাঠামোর মধ্যে তিনি যুক্ত। তিনি সবাইকে (রাজনৈতিক নেতাদের) ডেকে এ সরকার গঠন করিয়েছেন। কাজেই স্বাভাবিক ব্যাপার এখানে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবেন।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা অতীতে ভালো নির্বাচন দেখেছি। ভালো নির্বাচন হলেও ভালো সরকার দেশ পরিচালনায় আসেনি। আবার ভালো নির্বাচনের পরে গঠিত সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরবর্তীতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতেও দেখেছি।’

‘সংবিধানে সরকার প্রধানকে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, লর্ড অ্যাকটনের একটা কথা আছে, ‘‘সকল ক্ষমতাই দুর্নীতিগ্রস্ত; নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত’’। কাজেই কাউকে অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া হলে ওই ব্যক্তি যে রকম মানুষ হোক না কেন, আমরা ধরে নিতে পারি তার নিরঙ্কুশভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিরঙ্কুশ দুর্নীতি মানে শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, সেখানে ভোট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দুর্নীতি, দেশের আইন-বিচার বিভাগ সবকিছুতে হস্তক্ষেপ থাকে। সেজন্য আমি মনে করি, আগে আমাদের সংবিধান ঠিক করতে হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য সংশ্লিষ্ট যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো ঠিক করতে হবে। তারপরই নির্বাচন হোক, এটাই চাই আমরা। এসব ঠিক না করে, যদি তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন করি, তাহলে সেই নির্বাচনের ফলাফল ভালো হবে না। তখন এ সংস্কার আন্দোলন, এত মানুষের রক্তপাত, সবকিছুই বৃথা যাবে। পরবর্তীতে এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারব না। তাই সংস্কারে যতটুকু সময় প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। তারা যতদিন সঠিক পথে থাকবে, ততদিন সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে জাতীয় পার্টি। আমরা চাই, তারা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছেন সেটাকে অব্যাহত রেখে সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন।’

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখন সংগঠন ঠিক করছি। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের নিয়ে একটা নেতিবাচক ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা মোকাবিলা করে সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। এভাবে জনসমর্থন লাভ করার চেষ্টা করছি। এতে সামনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভালো একটা অবস্থান হবে।’

জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে এককভাবে নাকি জোটগতভাবে অংশ নেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচন কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারবে না। কোনো দলই বলতে পারবে না তারা এককভাবে নির্বাচন করবে কিংবা জোটগতভাবে করবে। কার সঙ্গে কার জোট হবে সেটা এখন কেউ বলতে পারবে না। কারণ এখনো সবকিছু অত্যন্ত অনিশ্চিত অবস্থায় আছে। এখন এই ব্যাপারে কেউ যদি কিছু বলে, সেটা হবে কথার কথা।’

এএইচআর/এসকেডি