টানা তিন মেয়াদ শেষ করে চতুর্থ মেয়াদের দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিপরিষদ। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অভিযোগ আছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আর সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে প্রতিবারই প্রভাবিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের প্রভাবিত করার কাজটি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়েই করতেন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ফলে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে সংসদ নির্বাচন করতে বাধ্য হতেন নির্বাচন কমিশনগণ।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলীয় সরকারের অধীনে গত তিন নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জনমনে। সব মহলে ‘দিনের ভোট রাতে’ করা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক চলছে। নুরুল হুদা কমিশনই দিনের ভোট রাতে করেছে বলে অভিযোগ।

অন্যদিকে, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে না করলেও ভোটের শতকরা হার ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনা বেশ জোরালো। ফলে হানাহানি ছাড়া আওয়ামী লীগের দেওয়া ডামি প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয় আউয়াল কমিশন।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল / ফাইল ছবি
দলীয় সরকারের অধীনে গত তিন নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জনমনে। সব মহলে ‘দিনের ভোট রাতে’ করা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক চলছে। নুরুল হুদা কমিশনই দিনের ভোট রাতে করেছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে না করলেও ভোটের শতকরা হার ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দিয়েছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক চিত্র

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনে ২২৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন। জাতীয় পার্টি জেতে ১১টি আসনে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জয়ী হয়। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে একটি আসনে এবং ৬১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।

সিইসির ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন। তাদের মধ্যে চার কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৫ জন ভোটার ভোট দেন। ভোটের শতকরা হার ৪১ দশমিক ৮ ভাগ।

পদত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া যেতে চেয়েছিলেন হাবিবুল আউয়াল

জানা যায়, বিতর্কিত ওই নির্বাচন করতে চাননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, কাজী হাবিবুল আউয়াল সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের বাধার কারণে তিনি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে পারেননি। এমনকি হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পদত্যাগ করতে পারেননি সরকারের চাপে।

ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, কাজী হাবিবুল আউয়াল সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের বাধার কারণে তিনি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে পারেননি। এমনকি হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পদত্যাগ করতে পারেননি সরকারের চাপে

একতরফা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হাবিবুল আউয়াল চেয়েছিলেন দেশত্যাগ করতে। কিন্তু সরকারের উপর মহলে বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে ঠেকাতে শক্ত অবস্থানে যায় আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই সময় তাৎক্ষণিকভাবে সিইসির সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান কর্তারা। তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পদত্যাগ বা দেশত্যাগে আর সাহস দেখাননি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর থেকে গোয়েন্দাদের কঠোর নজরদারিতে থাকেন হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

সিইসির সঙ্গে তিন গোয়েন্দাপ্রধানের আলাদা বৈঠক

গত বছরের ৭ নভেম্বর হঠাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান কর্তারা। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদুল হক এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সিইসির সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। এরপর সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের। তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই। তবে, সিইসি ওই সময় পদত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন। ডামি প্রার্থীদের মাধ্যমে একতরফা নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন না সিইসি।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা / ফাইল ছবি

নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনেকের অভিযোগ, ওই সময় তিন গোয়েন্দাপ্রধান সিইসিকে (কাজী হাবিবুল আউয়াল) চরমভাবে হুমকি দিয়েছিলেন।

শেষ ঘণ্টায় ভোট পড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বল্প ভোটারের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতাসহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে, নির্বাচনের শেষদিকে এসে জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অনেক প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। হাবিবুল আউয়াল কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করলেও অনিয়মের অভিযোগে নয়টি আসনের ২১ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনেকের অভিযোগ, ওই সময় তিন গোয়েন্দাপ্রধান সিইসিকে (কাজী হাবিবুল আউয়াল) চরমভাবে হুমকি দিয়েছিলেন

তবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। সিইসি ৪০ শতাংশের এ তথ্য বিকেল সাড়ে ৫টায় দিলেও এর আগে কমিশন বেলা ৩টা পর্যন্ত সারাদেশে ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য দিয়েছিল। অর্থাৎ শেষের এক ঘণ্টায় ১২.৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল বলে জানান হাবিবুল আউয়াল। যা নিয়ে এখনও বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ভোট কম পড়লেও নিজেরাই ইচ্ছামতো ভোটের হার বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলে অভিযোগ।

দেশবাসীকে ভোটে অংশ না নেওয়ার আহ্বান বিএনপির

দেশজুড়ে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে গত ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে ভোট বর্জনের আহ্বান জানায় দেশবাসীর প্রতি। অন্যদিকে, ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা এ নির্বাচনে অংশ নেয়। ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠন করেন।

যা হয়েছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কর্তৃক প্রকাশিত বইয়ে উল্লেখ আছে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত ‘মহাজোট’ নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। মহাজোটের বিপরীতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নির্বাচনে অংশ নেয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সব নিবন্ধিত দলের অংশ নেওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু অংশগ্রহণমূলকই নয়, বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর দেখা মেলে এ নির্বাচনে। অথচ এটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল না। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পায় ২৮৮টি আসন। অপরদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র আটটি আসন।

২১৩টি কেন্দ্রে পড়ে শতভাগ ভোট

একাদশ জাতীয় সংসদের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পায় মোট প্রদত্ত ভোটের ৭৪.৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পায় মাত্র ১২.০৭ শতাংশ ভোট। ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ এবং এক হাজার ৪১৮টি কেন্দ্রে ৯৬ শতাংশের ওপরে ভোট পড়ে, যা অস্বাভাবিক ঘটনা। এ ছাড়া ৭৫টি আসনের ৫৮৭টি কেন্দ্রের সব (১০০%) বৈধ ভোট শুধু একজন করে প্রার্থী পান। অন্য কোনো প্রার্থী এক ভোটও পাননি। ওই ৫৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৬টিতে (৯৯.৮৩) সব ভোট পান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। অর্থাৎ একাদশ সংসদের ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় চরম অনিয়মের মাধ্যমে দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর গৃহীত হয় ১৯৭২-এর সংবিধান। এ সংবিধানে বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার ব্যবস্থা গঠনের কথা বলা আছে। সংবিধানের আওতায় ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সরকার গঠন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির আওতায়। ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তিত হয়। এরপর থেকে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংবিধানে যা বলা আছে

জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনের দিন থেকে এ মেয়াদ গণনা শুরু হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। যদিও পূর্ববর্তী সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এর অধিবেশন বসে। তবে, যে কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। তবে সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে বিশেষ পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। দেশে যুদ্ধ দেখা দিলে সংসদের মেয়াদ অনধিক এক বছর বর্ধিত করা যেতে পারে। সংবিধানের ৭২ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যুদ্ধাবস্থায় ভেঙে যাওয়া সংসদেরও অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।

যা বলছেন নুরুল হুদা

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কাছ তার কমিশনের সময় এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে নুরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো অনিয়মের দায় এককভাবে সিইসি বা কমিশনারদের দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, নির্বাচনের সময় ৯৫ শতাংশ ক্ষমতা দেওয়া হয় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে। এ ছাড়া যখন সারাদেশে একযোগে নির্বাচন হয়, তখন কেন্দ্রে কখন ব্যালট যায় বা অনিয়ম হয়, সেগুলো কমিশনে বসে দেখা যায় না। তবে, রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারদের মাধ্যমে যদি রিপোর্ট আসে তখন নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু আমাদের সময় আমরা ব্যাপকভাবে অভিযোগ পাইনি। তবে, যেগুলো পেয়েছিলাম সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

দিনের ভোট রাতে, কেউ অভিযোগ করেনি

আপনাদের সময় দিনের ভোট রাতে হয়েছিল কি না— এমন প্রশ্নে সাবেক সিইসি বলেন, ‘অভিযোগ তো ছিলই। কিন্তু সেই অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের গঠন করা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালে কেউ আসেনি। আমরা একটা অভিযোগও পাইনি। ফলে অভিযোগগুলোর তদন্ত করার সুযোগ হয়নি। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন যদি আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসত অথবা রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসার রিপোর্ট দিত, তাহলে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিত। নির্বাচন শেষ হয়ে যখন গেজেট হয়ে যায়, তখন নির্বাচন কমিশনের হাতে আর কিছুই থাকে না। গেজেটের পর নির্বাচন কমিশন কিছু করতে গেলে, সেটা হাইকোর্টের ওপর হস্তক্ষেপ হয়ে যায়। তবে, দিনের ভোট রাতে হয়েছে এমন রিপোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে পেলে নির্বাচন কমিশন ভোট বন্ধ করে দিতে পারে। এটাই আমাদের সীমাবদ্ধতা।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কোনো চাপ ছিল না

নির্বাচনের সময় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা কমিশনের উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করে কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নো, নো, নট অ্যাট অল (না, না, মোটেও না)। আমাদের লেভেলে, কখনও না। সরকারি কোনো সংস্থাও করেনি। একটা উদাহরণও নেই। যদি এমন কিছু থাকত, তাহলে সেটা তো এতদিনে বেরিয়ে আসত।’

আউয়াল সাহেবের কোনো ভুল দেখি না

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে নুরুল হুদা বলেন, ‘আউয়াল সাহেব ভালো এবং সৎ মানুষ। তার সময়ে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তাদের তো আর তিনি বাধ্য করতে পারেন না। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, সেটা তিনি করেছেন। এখানে তার কোনো ভুল দেখি না।’

আউয়াল সাহেব ভোটের হার বাড়িয়ে বলার লোক নন

আউয়াল কমিশন শেষের এক ঘণ্টায় ১৩ শতাংশ ভোট কাউন্ট করেছে— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন মাঠ থেকে যে তথ্য আসে, সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে ফিল্টার হয়ে আসে না। বেলা ৩টা পর্যন্ত যতটুকু এসেছিল সেগুলো তারা হয়তো বলেছিলেন। এগুলো অতি রঞ্জিত কিছু না। তবে সর্বশেষ যখন সঠিক রিপোর্ট আসে, তখন তিনি সঠিকটাই বলেছিলেন। এভাবে শতাংশের হার বাড়তে বা কমতে পারে। এ ছাড়া কম ভোট পড়ার পরও আউয়াল সাহেব বাড়িয়ে বলার লোক নন বলেই আমি মনে করি।’

এসআর/